ঈশ্বরের কাছে ফুটবল ঈশ্বর

আমি বললাম, ‘দাদু, আমি তো ম্যারাডোনাকে দেখি নাই। কিভাবে বলবো! তবে অনেকের কাছেই মেসি ম্যারাডোনার মতো ভালো।’ দাদু বললেন, ‘ছিয়াশি বিশ্বকাপের আগে এ তল্লাটে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হারিকেন জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যেতো না, এখন পঞ্চাশ শতাংশের বেশি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার! এইটা হচ্ছে ম্যারাডোনার লিগেসি। হি ওয়াজ অ্যান আর্টিস্ট।’

আমার দাদা তখন বেঁচে ছিলেন। লিওনেল মেসি তাঁর উন্মাদনা দেখানো শুরু করেছেন সবে। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় তখনও হন নি, তবে সেরাদের একজন হিসেবে নাম ডাক ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।

আমার দাদা সকালে ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা পড়তেন। মেসিকে নিয়ে পত্রিকায় একটা বড় ফিচার সেদিন ছাপা হয়েছিলো। সকালের নাস্তায় দাদু জিজ্ঞেস করলেন, ‘মেসি কেমন খেলে?’ আমি বললাম, ‘ভালো খেলে।’ ‘কত ভালো? ম্যারাডোনার মতো ভালো?’

আমি বললাম, ‘দাদু, আমি তো ম্যারাডোনাকে দেখি নাই। কিভাবে বলবো! তবে অনেকের কাছেই মেসি ম্যারাডোনার মতো ভালো।’ দাদু বললেন, ‘ছিয়াশি বিশ্বকাপের আগে এ তল্লাটে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হারিকেন জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যেতো না, এখন পঞ্চাশ শতাংশের বেশি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার! এইটা হচ্ছে ম্যারাডোনার লিগ্যাসি। হি ওয়াজ অ্যান আর্টিস্ট।’

দাদুর আবার কথায় কথায় ইংরেজি বলার অভ্যাস ছিলো, ‘শোনো, ফুটবল অসংখ্য মানুষ খেলে। কেউ খেলে আমাদের মতো সাধারণ ফুটবল, কেউ খেলে পেলে, ক্রুইফের মতো, আর কেউ খেলে ম্যারাডোনার মতো। এখন মেসি যদি দ্বিতীয় কাতারেও যেতে পারে, তাতেই ইতিহাসে জায়গা পেতে যথেষ্ঠ। ম্যারাডোনা একজনই হয়। এদের মতো কেউ কখ‌নো হয়না, হওয়া সম্ভব না।’

দাদু মারা গেছেন প্রায় বারো বছর। আজ চলে গেলেন ম্যারাডোনাও। ম্যারাডোনার চলে যাওয়া হঠাৎ করে দাদুকে মনে করিয়ে দিলো। ম্যারাডোনার লাইভ কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ আমার দেখা হয় নাই। ইউটিউবই একমাত্র ভরসা। আমার কাছে সে হয়তো সর্বকালের সেরা না। কিন্তু তার নামের সাথে জড়ানো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের যে আবেগ – ইতিহাসের আর কোন ফুটবলারের সাধ্য ছিলো এই আবেগে মাখার!

ছোটবেলায় বাড়ির উঠানে যখন ফুটবল খেলতাম, কিংবা গ্রামের কোনো মাঠে। কেউ ভালো গোলকিপার হলেও মানুষ বলতো, ও হইলো গুলকি ম্যারাডোনা! মাঠে খেলোয়াড় যে পজিশনেই হোক, ভালো খেললেই নাম হতো, বেগি ম্যারাডোনা, গুলকি ম্যারাডোনা!

একটা মানুষ একটা জাতির সন্তান না হয়েও একটা জাতিকে কিভাবে আচ্ছন্ন করতে পারে, নেশাগ্রস্ত করতে পারে, তার সবচেয়ে বড় উদাহারণই বোধয় ম্যারাডোনা। অবশ্য ম্যারাডোনারা কখ‌নো কোনো দেশের হন না। তারা তাদের অবদান দিয়ে জাগতিক সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন বলেই হয়ে ওঠেন কালজয়ী মহিরুহ।

ম্যারাডোনাদের কখনো মৃত্যু হয়না। ফুটবল ঈশ্বর এবার সত্যিকারের ঈশ্বরের কাছে চলে গেলেন – এটাই সম্ভবত সবচেয়ে যথার্থ বাক্য।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...