এবারে যখন বেনফিকা পিএসজি আর জুভেন্টাসের গ্রুপে আসে তখন জুভেন্টাসের কোচ অ্যালেগ্রি বলেছিলেন, বাস্তবসম্মতভাবে জুভেন্টাসের যা ফর্ম তাতে, বেনফিকার সঙ্গে হোম ম্যাচটা আমাদের জিততেই হবে। জুভেন্টাস জেতেনি। জুভেন্টাস আউট।
পিএসজি এবার তারকাখচিত দল। বিশ্বকাপের বছরে শুরু থেকেই নেয়মার আর মেসি দুরন্ত ফর্মে। এমবাপ্পের বছর লাগে না, ছেলেটা বছর বছর অবাক করা গোল করেই যায়। মাঝমাঠে ভিটিনহা চলে এসেছে, ভেরাত্তির সঙ্গে যে লো ব্লক থেকে বল বার করে আনতে পোক্ত।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার দানিলো পেরিরা এবার কিম্পেম্বের চোটে থ্রি ব্যাক সিস্টেমে বাঁদিকটায় দারুণ খেলছে। র্যামোস চোটমুক্ত, টার্নিং খারাপ হয়েছে, কিন্তু ডিফেন্সিভ সংগঠনটা দারুণ করছেন। সঙ্গে মারকুইনিহোস। মাঝমাঠে নাপোলি থেকে এসেছেন ফ্যাবিয়ান রুইজ, ভ্যালেন্সিয়া থেকে কার্লোস সোলার আর লিল থেকে রেনেতো সানচেজ।
অন্যদিকে বেনফিকা থেকে এবার ডারউইন নুনেজ তো বটেই, বেলজিয়ামের ভেটারেন ভার্তোনন, ব্রাজিলের এভার্টন সোয়ারেজ বেরিয়ে গেছে। এসেছে রিভারপ্লেট থেকে এঞ্জো ফার্নান্ডেজ আর শাখতার দোনেৎস্ক থেকে ডেভিড নেরেস।
এইই। বাকি দুটি ছেলে সেন্টার ব্যাকে অ্যান্টনিও সিল্ভা আর স্ট্রাইকারে গনসালো রামোস বেনফিকার অ্যাকাডেমির প্রোডাক্ট আর কিছুটা অভিজ্ঞ আক্রমণত্মক মিডফিল্ডার জোয়াও মারিও আর ফরোয়ার্ড রাফা সিলভা।
এই নিয়েই জুভেকে তো হোম অ্যাওয়ে দুটো ম্যাচেই হারাল বেনফিকা। এমন কি পিএসজি, যে পিএসজি তারকা খচিত দল, তাঁদের সঙ্গেও লড়াই করে হোম অ্যাওয়ে ড্র রেখে, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উচলের নকআউটে।
তা সেই বেনফিকার এঞ্জো তো এর মধ্যেই আর্জেন্টিনার জার্সিতে যথেষ্ট ভালো খেললেন। বাকি গনসালো রামোস।
আমি বেশ কিছুদিন ধরেই বলছি যে এসি মিলানের রাফায়েল লিয়াওকে বামপ্রান্তে খেলালে ভালো হয়। সামনে রাফা লিয়াও, জোয়াও ফেলিক্স আর বার্নার্দো সিল্ভা, নিচ থেকে ব্রুনো ফার্নান্ডেজ। এর নিচে দুটো হোল্ডিং মিডফিল্ডার দানিলো পেরিরা আর উইলিয়াম কারভালহো নিচে দুদিকে কন্সেলো আর গুরেরো আর মাঝে রুবেন ডিয়াজের সঙ্গে হয়তো অ্যান্টনিও সিল্ভা, পেপের বয়স হয়ে গেছে বলে।
কারণ পটেনশিয়ালই পর্তুগাল দলটি হয়তো ইউরোপের সেরা। ডিয়েগো জোটার চোটের পরেও। কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো! ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো! ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো!
ক্রিশ্চিয়ানো গতবছর পর্যন্ত নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে পর্তুগালের তারকা হয়ে ছিলেন। কিন্তু এই সিজনের শুরু থেকেই যেন ধীরে ধীরে সূর্যাস্তের রঙ দেখা যাচ্ছে যা তিনি বারংবার অস্বীকার করে যাচ্ছেন। বলিরেখা থাবা বসিয়েছে গতিতে, ট্র্যাকব্যাক অনেকদিনই ছেড়েছেন। গত বছর তবু গোলের মধ্যে ছিলেন, এবার তো পৌঁছতেই পারছেন না।
কিন্তু ফের্নান্দো স্যান্তোসের ধক নেই যে ক্রিশ্চিয়ানোকে বসাবে। সুযোগটা অপ্রত্যাশিতভাবে এসে গেল। হেড বিতর্ক পেরিয়ে পরিবর্তন বিতর্ক পেয়ে বসল স্যান্তোস বোধহয় আর সহ্য করতে পারলেন না। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দিলেন বসিয়ে।
উপরে দুই রোভিং ইনভার্টার জোয়াও ফেলিক্স আর ব্রুনো। মাঝখানে মোবাইল গনসালো রামোস। মাঝে অট্টাভিও আর কারভালহো আর ফ্লোটিং হিসাবে রাখলেন বার্নার্দো সিলভাকে। ৪-২-২-১।
সুইজারল্যান্ড চিরপরিচিত ৩-৪-১-২। কিন্তু সুইজারল্যান্ড নকআউট বলে একটু আক্রমণত্মক রইল। ডিফেন্সিভ ফরমেশনে তারা ৩-৫-২ আর স্যান্টোসের পর্তুগাল কার্ভালহোকে দুই স্টপারের মাঝে নামিয়ে আর দুই উইং ব্যাক ডালোট আর গুরেরোকে উপরে তুলে ৩-৪-৩। এবারে সুইজারল্যান্ড যে ঝুঁকিটা নিল সেটা হল, আপফ্রন্টে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতি রেখে দিল। যাতে আক্রমণে লোক বাড়ানো যায়।
আক্রমণে সুইজারল্যান্ড এমবোলোর সঙ্গে জুড়ে দিল শাকিরিকে। দুই উইং ব্যাক উঠে গেল। শাকা উঠে এলেন। এই পরিস্থিতিতে ডালোট নিচে নেমে ন্যারো ডিফেন্সিভ ফর্মেশন রাখল। ফলে খেলাটা ছড়িয়েও বিশেষ লাভ হল না সুইজারল্যান্ডের।
অপর দিকে মিডফিল্ড ওভার লোডের ফলে দুই ইনভার্টেড ফরওয়ার্ড ফেলিক্স আর ব্রুনো অনায়াসে ভিতরে ঢুকতে শুরু করল, দুই স্টপার বা সাইড ব্যাক আর স্টপারের মাঝে বড় বড় ফাঁক তৈরি হল। প্রথমার্ধের গোলগুলো এভাবেই আসে। দ্বিতীয়ার্ধে সুইজারল্যান্ড মিডব্লকে যেতেই ডিফেন্ডারদের পিছনে খালি জায়গাটা তৈরি হল। গনসালো এই জায়গাটাতেই বাজিমাত করল। তিনটে গোল করে ফেলেছে, বারবার হবে না। কিন্তু প্রথম সুযোগেই গোলে বল রাখার ক্ষমতা এই ছেলেটার আছে। আর লিয়াও নামলে তো কথাই নেই।
মোদ্দা কথা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো দেশের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু ফুটবল খেলাটা হয় আজকের ফর্মের ভিত্তিতে। এটা মনে হয় বুঝেছেন স্যান্টোস। এবারে কিন্তু পরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বীদের কপালে দু:খ আছে।
তবে কি ক্রিশ্চিয়ানোর দিন শেষ? ক্রিশ্চিয়ানো অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি ঘড়ির কাঁটা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিতেই পারেন, কিন্তু কবে? এই বিশ্বকাপেই কি তার উত্তর পাওয়া যাবে? কে জানে!