গগনছোয়া তারুণ্যের পতাকা

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ছিল তারণ্যের উত্থানের এক মঞ্চ।

এক গাদা তরুন দারুণ পারফরম করে আলোচনায় এসেছেন। বিদেশি তারকারা থাকলে এই তরুণদের অনেকে হয়তো দলই পেতেন না। এমন তরুণদের জন্য এটা ছিলো নিজেদের প্রমাণের একটা আসর। আর সে সুযোগটা তারা খুব ভালোভাবে নিয়েছেন।

এই টুর্নামেন্ট জুড়ে ছিলো কিছু ব্যর্থতার গল্প। অনেকে কাছে গিয়ে হতাশ হয়েছেন, অনেকে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। টুর্নামেন্ট জুড়ে এরকম হতাশার গল্পের সাথেই লেখা হয়েছে অনেক সাফল্যের গল্প। সেই সাফল্যের গল্পের চরিত্রে নিজেদের আরো একবার প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে বিসিবির বিশেষ পুরস্কার জিতেছেন চার জন ক্রিকেটার। দেখে নেওয়া যাক টুর্নামেন্টে কেমন ছিলো তাদের পথচলা।

  • নাজমুল হোসেন শান্ত (মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী)

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় ৩য় স্থানে ছিলেন মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। গ্রুপ পর্বের ৮ ম্যাচে ৩৭.৬২ গড়ে ৩০১ রান সংগ্রহ করেন রাজশাহীর অধিনায়ক। টুর্নামেন্টে সর্বনিম্ন ১০০ রান করেছে এমন ব্যাটসম্যানদের ভিতর সর্বোচ্চ স্টাইকরেটও শান্তর। ১৫৬.৭৭ স্টাইকরেট নিয়ে শীর্ষে আছেন তিনি। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২১ টি ছয়ও এসেছে শান্তর ব্যাট থেকেই।

টুর্নামেন্টের প্রথম সেঞ্চুরিও আসে শান্তর ব্যাট থেকেই। এছাড়া দু’টি হাফসেঞ্চুরিও করেছিলেন তিনি। টুর্নামেন্টে দু’টি হাফসেঞ্চুরিই জেমকন খুলনার সাথে করেন শান্ত। খুলনার সাথে প্রথম লড়াইয়ে শান্তর ব্যাট থেকে আসে ম্যাচ জয়ী ৩৪ বলে ৫৫ রান ও দ্বিতীয় লড়াইয়ে করেন ৩৮ বলে ৫৫ করলেও ম্যাচ হারে রাজশাহী। বরিশালের বিপক্ষে ৫৫ বলে ১০৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন রাজশাহীর অধিনায়ক। দলীয় ব্যর্থতায় প্লে-অফের আগেই বাদ পড়ে শান্তর রাজশাহী, যার কারনে শীর্ষ রান সংগ্রাহকের দৌড়ে থাকতে পারেননি তিনি।

  • পারভেজ হোসেন ইমন (ফরচুন বরিশাল) 

টি-টোয়েন্টি কাপে যে কয়েক জন তরুণের পারফর্ম সবার নজর কেড়েছে তাদের ভিতর পারভেজ হোসেন ইমন অন্যতম। বরিশালের হয়ে ৯ ম্যাচে ২৯.১২ গড়ে ২৩৩ রান সংগ্রহ করা ইমনের নাম রয়েছে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকার সেরা দশেও। টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচেই খুলনার বিপক্ষে ৪২ বলে ৫১ রানের ইনিংস দিয়ে ভালো কিছুর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী এই ব্যাটসম্যান।

তবে এরপর শুধু আর এক ম্যাচেই হেসেছিলো ইমনের ব্যাট। আর ঐ এক ম্যাচ দিয়েই সব আলো নিজের করে নিয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। রাজশাহীর বিপক্ষে ২২১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইমনের ৪২ বলে হার না মানা সেঞ্চুরিতে ভর করে রাজশাহীকে সহজেই হারিয়ে প্লে-অফের দৌড়ে টিকে ছিলো বরিশাল। ইমনের করা সেঞ্চুরিটি বাংলাদেশের হয়ে সব ধরনের ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরি। বিসিবির স্পেসাল অ্যাওয়ার্ড পেতে ইমনের ঐ একটি ইনিংসই ভূমিকা রেখেছে।

  • শরিফুল ইসলাম (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম)

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী এই পেসার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে যেনো নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করেছে। টুর্নামেন্টে ১০ ম্যাচে ৮ ইকোনোমিতে ১৬ উইকেট শিকার করেছেন চট্টগ্রামের এই পেসার। টুর্নামেন্টের শীর্ষ উইকেট শিকারী ও টুর্নামেন্টে সেরা ক্রিকেটার মুস্তাফিজের সাথে জুটি বেঁধে প্রতিটা ম্যাচেই দলের জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

নিজের প্রথম ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে তিন ওভারে ১০ রান দিয়ে দুই উইকেট শিকার করে দুর্দান্ত ভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন শরিফুল, ফাইনালে শেষটাও করেছেন দুই উইকেট দিয়েই। মাঝে বরিশালের বিপক্ষে ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরাও। এছাড়া বরিশালের সাথে প্রথম লড়াইয়ে তিন উইকেট ও রাজশাহীর সাথে দুই উইকেট নিয়ে দলের জয়ে অবদান রেখেছিলেন শরিফুল। গ্রুপ পর্বে মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছিলো চট্টগ্রাম। ঢাকার সাথে সেই হারা ম্যাচেও দুই উইকেট শিকার করেছিলেন শরিফুল।

  • রবিউল ইসলাম রবি (বেক্সিমকো ঢাকা)

যারা ঢাকার ক্রিকেট নিয়মিত অনুসরণ করেন তারা জানেন রবিউল ইসলাম রবি একজন ব্যাটসম্যান এবং মাঝে মাঝে দলের প্রয়োজনে বল করে থাকেন। ২০০৮ সাল থেকেই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে ক্রিকেট খেললেও কখনো আলোচোনায় আসতে পারেননি। সেই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান আলোচোনাতে এলেন বোলার তকমা নিয়ে।

টি-টোয়েন্টি কাপে ৮ ম্যাচে মাত্র ৬.৯৪ ইকোনোমিতে ১৩ উইকেট শিকার করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় আছেন ষষ্ঠ স্থানে। টুর্নামেন্টের প্রথম পাঁচ উইকেট আসে তার হাত ধরেই। খুলনার বিপক্ষে নিয়েছিলেন ২৭ রানে পাঁচ উইকেট। টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং ফিগারও এটিই। এছাড়াও বরিশালের সাথে চার ওভারে ২০ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের প্রথম তিন ম্যাচ হারা ঢাকাকে জয়ের পথ দেখিয়ে ছিলেন রবিই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link