অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন। জাতীয় দল থেকেও বাদ পড়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ানের আবির্ভাবে। সবাই ধরেই নিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফেরা হচ্ছে না সরফরাজ আহমেদের। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম টেস্টে অনবদ্য এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সরফরাজ জানান দিলেন এভাবেও ফিরে আসা যায়।
টেস্টে সাম্প্রতিক সময়ে সময়টা ভালো কাটছে না পাকিস্তানের। ঘরের মাঠে ব্যাটিং সহায়ক পাটা পিচ বানিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে ধবল ধোলাইয়ের পর কিউইদের বিপক্ষেও চোখ রাঙাচ্ছিল পরাজয়। কিন্তু পঞ্চম দিনে ৩১৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অনবদ্য সরফরাজে ভর করে ম্যাচ বাঁচিয়ে নিয়েছে বাবর আজমের দল।
দলীয় ৮০ রানেই পাঁচ উইকেট হারানো পাকিস্তানকে চোখ রাঙাচ্ছিল করুণ পরাজয়। সরফরাজ প্রথমে সৌদ শাকিলকে নিয়ে ১২৩ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন। এরপর আগা সালমানকে সাথে নিয়ে এগোচ্ছিলেন জয়ের পথেই। কিন্তু মাইকেল ব্রেসওয়েলের বলে ১১৮ রানে আউট হলে সমাপ্তি ঘটে দুর্দান্ত এক ইনিংসের। পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ড্র মেনে নিয়েছে লক্ষ্য থেকে ১৫ রান দূরে থাকতেই। কে জানে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে হয়তো জিতিয়েই ফিরতেন দলকে।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সরফরাজও ক্যারিয়ারের বাকি সব ইনিংসের চাইতে এগিয়ে রাখছেন এই ইনিংসকে। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমার আরো সেঞ্চুরি আছে। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা সব সময়ই কঠিন। তাই এই সেঞ্চুরিটি একটু বেশিই স্পেশাল। এটাই আমার সেরা সেঞ্চুরি।’
এই সিরিজটা সরফরাজের জন্য প্রত্যাবর্তনের। চার বছর আগে জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। এরপর আর কখনো ফিরতে পারবেন এমনটাও ভাবেনি কেউ। মোহাম্মদ রিজওয়ানের অফ ফর্মের কারণে পাওয়া সুযোগটা তিনি নিয়েছেন দুহাত ভরে। আগের তিন ইনিংসে ফিফটি হাঁকালেও সেঞ্চুরির দেখা মিলছিল না। এই ইনিংসে সেই আক্ষেপ তিনি মেটালেন দারুণভাবেই।
তিনি বলেন, ‘আমি চার বছর যাবত দলের সাথে থাকলেও মাঠে নামার সুযোগ পাইনি। কিন্তু কখনো হাল ছাড়িনি। যখনই সুযোগ পেয়েছি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে গিয়েছি। আমি সব সময়ই ভেবেছি যদি উপরওয়ালা চান তবে আমি আবারো সুযোগ পাবো এবং অবশেষে সুযোগ পেলাম।’
সরফরাজ বলেছেন তিনি চিন্তিত ছিলেন কিন্তু অধিনায়ক বাবর আজম এবং সতীর্থরা তাঁকে সর্বদা সাহস জুগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সিরিজে প্রথমবারের মতো ব্যাট করতে নামার সময় আমি মানসিকভাবে খুব একটা ভাল অবস্থায় ছিলাম না। চিন্তিত ছিলাম, বেশ নার্ভাস লাগছিল। কিন্তু অধিনায়ক এবং সতীর্থরা আমাকে পুরোটা সময় উৎসাহ দিয়েছেন।’
শাকিলের সাথে ১২৩ রানের জুটি গড়ার পথে তিনি আগ্রাসী ভূমিকা রেখেছেন। শাকিল একপ্রান্তে রক্ষণাত্নক খোলসে থাকলেও সরফরাজ রানের চাকা চালু রেখেছেন। শাকিল আউট হলেও আগা সালমানের সাথে পুনরায় ৭০ রানের জুটি গড়েছেন। তাঁর ব্যাটে ভর করেই শেষ দিনে অবিশ্বাস্য এক জয়ের কক্ষপথে ছিল পাকিস্তান। কিন্তু শাকিল এবং সালমান দুজনেই আউট হলে পুনরায় ব্যাকফুটে চলে যান সরফরাজ।
সরফরাজ বলেন, ‘জয় থেকে ১৪০ রান দূরে থাকার সময় টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বার্তা ছিল জয়ের জন্য ছোটার। কিন্তু তাঁরা দুজনেই আউট হয়ে গেলে আমি খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যাই। যদি তাঁরা দুজন টিকে থাকতে পারতো, তাহলে ম্যাচের ফলাফল আমাদের পক্ষেও আসতে পারতো।’