গত এক দশকের সেরা ব্যাটসম্যানের তালিকায় সবার উপরেই থাকবে বিরাট কোহলির নাম। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই তিনি রান করে গেছেন সমান গতিতে। নিজের দিনে বিশ্বের সেরা বোলিং লাইনআপকেও পাড়ার বোলিংয়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম তিনি।
একা হাতে দলকে জয় এনে দিয়েছেন বহুবার। মাঝে ফর্মে না থাকলেও শেষ কয়েক দিনের ফর্মে জানান দিয়েছেন পুরনো ছন্দে ফেরার। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে তাঁর দুর্বলতা নতুন করে ভাবাচ্ছে কোহলিকে।
ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের সুখ্যাতি সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই। সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকারদের উত্তরসূরী হিসেবেই আবির্ভাব কোহলির। ওডিয়াইতে ৪৬ সেঞ্চুরি করে শচীনের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙার দ্বারপ্রান্তেই আছেন তিনি। চাপের মুখে দায়িত্ব নিয়ে জয় এনে দেয়ার দক্ষতাই বাকি কিংবদন্তিদের চাইতে আলাদা করেছে কোহলিকে।
২০১৯ সালের পর মাঝের তিন বছরে সেঞ্চুরি পাননি। ফলে অনেকেই শেষ দেখে ফেলেছিলেন তাঁর, ভেবেছিলেন আর কখনোই ফিরতে পারবেন না এই তারকা। কিন্তু ২০২২ সালে এশিয়া কাপে টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন কোহলি।
এরপর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংস খেলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় এনে দেন দেশকে। হারিস রউফকে মারা সেই ছক্কা তো ইতোমধ্যেই স্থান করেছেন ক্রিকেট রোমান্টিকদের মনে। যদিও দলকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি, কিন্তু ব্যাট হাতে রান করা থামেনি তাঁর।
২০২৩ সালে নতুন বছরের শুরুতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই সেঞ্চুরি দিয়ে বছর শুরু করেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের সিরিজেই যেন পুরনো রোগ চেপে বসেছে কোহলির কাঁধে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে যতটা স্বাছন্দ্যে ব্যাট করতেন, স্পিনের বিপক্ষে ততটা নয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিচেল স্যান্টনারের বলে টানা দুই ম্যাচে আউট হবার পর সেই পুরনো প্রশ্নটাই ঘুরেফিরে আসছে।
বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে কোহলির দুর্বলতা বেশ পুরনো। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেই তাইজুল ইসলাম দুইবার সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছেন কোহলিকে। এছাড়া সাকিব আল হাসান এবং প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজকে সামলাতেও বেগ পেতে হয়েছে তাঁকে। এছাড়া আইপিএলে জাতীয় দলের সতীর্থ রবীন্দ্র জাদেজাও বেস কয়েকবার আউট করেছেন তাঁকে।
হায়দ্রাবাদে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে বেস সাবলীল গতিতেই এগোচ্ছিলেন কোহলি। কিন্তু ব্যক্তিগত আট রানের মাথায় ঘটে যায় অঘটন। মিডল স্ট্যাম্পে পিচ করা স্যান্টনারের বলটা বুঝতেই পারেননি কোহলি।
জাজমেন্টে ভুল করে সামনে এগিয়ে খেলার বদলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে মিস করেন। ফলাফল অফস্ট্যাম্প গন, স্যান্টনারের উল্লাস। পরের ম্যাচে রায়পুরে কিনা প্রথম ম্যাচের ভুল শোধরাতে ফ্রন্টফুটে খেলার জন্য ক্রিজ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু বলের লাইন মিস করে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন।
সামনেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ খেলতে ভারতে আসবে অস্ট্রেলিয়া। কোহলি নিশ্চিতভাবেই নেটে ঘাম ঝরাবেন দ্রুতই স্পিনের বিপক্ষে দুর্বলতা দূর করতে। বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে আত্নবিশ্বাস ফিরে পেলে আর সমস্যা থাকার কথা না কোহলির। তবে প্রথম টেস্টে আরো একবার স্পিনে নাকাল হলে পুরো সফরজুড়ে কঠিন সময় অপেক্ষা করবে তাঁর জন্য।
কোহলি নিশ্চিতভাবেই চাইবেন লুপহোলগুলো চিহ্নিত করে দ্রুতই সমাধান করে ফেলার। কোহলি ক্রিজে আসা মাত্রই অস্ট্রেলিয়া বাঁহাতি স্পিনার আক্রমণে আনলে অবাক হবেন না যেন।