একটা সময় ঘরে-বাইরে সবখানে দারুণ আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা যেত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে। সে পরিস্থিতি যে রাতারাতি বদলে গেছে তা নয়। এখনও বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলোর একটি হিসেবেই বিবেচনা করা হয় অস্ট্রেলিয়াকে। তবে ভারতের নাগপুরে হয়ে যাওয়া টেস্ট ম্যাচটা অন্তত এটা জানিয়ে দিয়ে যায় একচ্ছত্র আধিপত্যের দিনগুলো হয়েছে গত।
বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়াকে নিজেদের মাটিতে আতিথেয়তা দিয়েছে ভারত। আর অতিথিদেরকে লজ্জার এক জয় উপহার দিতে বিন্দুমাত্র বাঁধেনি রোহিত শর্মার দলের। বিশাল ব্যবধানে তাঁরা হারিয়েছে অজিদের। ইনিংস ব্যবধানের পাশাপাশি সফরকারীদের ভারত হারিয়েছে ১৩২ রানে। বিশাল এক জয় দিয়েই সিরিজের শুভ সূচনা।
আর তাতেই সাবেক খেলোয়াড়দের তোপের মুখে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট। এই সিরিজটিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মহলে বেশ একটা উত্তাপ ছড়িয়েছে। সময়ের সেরা দুই দল মুখোমুখি হলে যা হয় আরকি। আর টেস্ট ক্রিকেট মানেই তো মর্যাদার এক স্নায়ুযুদ্ধ। সাদা পোশাকটা তো একটা ঐতিহ্য। আর সেই ঐতিহ্যের বাহক হয়ে ঠিক কতটা আলোকিত করা গেল ক্রিকেটকে সেটা জানান দেওয়ার মঞ্চে তো সবাই দিতে চায় নিজের সেরাটা।
তাইতো বাড়তি একটা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এবারের বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ। মাঠের লড়াইটা যেমন হচ্ছে ষোলআনা ঠিক তেমনি মাঠের বাইরেও কথার লড়াইটা চলছে শতভাগ। সেদিক থেকে বরারবরে মত এগিয়ে ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটার বীরেন্দ্র শেবাগ। খেলোয়াড়ী জীবনে ব্যাট চালিয়েছে দুর্বার গতিতে। সে গতিতেই এখন ফোঁটে বাক্যের ফোয়ারা।
অক্ষর প্যাটেল খানিকটা বিদ্রুপ করেই বলেছিলেন যে তাঁরা যতক্ষণ ব্যাট করবে তখন পিচ ঠিক থাকবে। আবার ভারত যখন বোলিংয়ে আসে তখন পিচ থেকে সাহায্য পাবে। সে কথার পিঠেই শেবাগ বলেন, ‘একটা সময় মাইন্ড গেম খেলাতে বাকিদের থেকে ঢের এগিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে এখন তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ঔষধের স্বাদ পাচ্ছে। অক্ষর দারুণ বলেছে।’
প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে অজিরা। ১৭৭ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। সেই ইনিংসে ভাঙ্গনটা ধরান প্রায় ছয় মাস পর ক্রিকেট ময়দানে ফেরা রবীন্দ্র জাদেজা। তিনি তুলে নেন পাঁচ উইকেট। এরপর ব্যাট হাতে দারুণ সময় পার করেছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেই সাথে অক্ষর প্যাটেল ও জাদেজাও ব্যাট ঘুরিয়ে দলের লিড বাড়িয়েছেন। সেই লিডের চাপ আর সামলে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।
অজিদের ২৩৩ রানের লিড টপকানো তো দূরে থাকে ১০০ রানে গণ্ডি পেরুতে দেননি রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনিও তুলে নেন রেকর্ড ৩১তম ফাইফার। তাতে মাত্র ৯৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় স্মিথ, লাবুশানেরা। তাতেই মেলে বিশাল ব্যবধানের জয়। সিরিজের প্রথম ম্যাচ। দারুণভাবে ঘুরে আসা সম্ভব নিশ্চয়ই। তবে ইংলিশ কিংবদন্তি মাইকেল ভন মনে করেন ফিরে আসার সকল পথ বন্ধ অস্ট্রেলিয়ার জন্য। বাকিটা পথ কেবলই ধবলধোলাইয়ের দিকে নিয়ে যাবে তাদের।
ভন বলেন, ‘ওইরকম কন্ডিশনে অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বস্ত হওয়া কোন আশ্চর্য্যের বিষয় নয়। শক্তিশালী দলের বিপক্ষে অধিকাংশ দলই একইরকম পরিস্থিতির স্বীকার হয়। হোম কন্ডিশনে জাদেজা ও অশ্বিন জুটিকে মোকাবেলা করাটা ভীষণ কঠিন কাজ। আমি অজিদের ফেরার কোন রাস্তা দেখছি না।’
এখনও অনেকটা পথ বাকি। অস্ট্রেলিয়ার গোটা দলই নিশ্চয়ই ফিরে আসার জন্যে মুখিয়ে রয়েছেন। তবে এত এত বাক্যবাণ আর স্নায়ুবিক চাপ সামলে কতখানি ফিরে আসা যায় সেটা বলে দেবে সময়।