হয়ত অনেকেই ফিরে আসে। তবে ফিরে এসেই দাপট দেখাতে ক’জনই বা পারে। আর যারা পারে তাঁরা নিশ্চয়ই জায়গা করে নেয় ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়ে। তেমনই একজন ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা। এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের অভাবটা বেশ টের পেয়েছে ভারত বিগত মাস ছয়েক ধরে। কিন্তু তিনি যখন ফিরলেন তখন দোর্দন্ড প্রতাপেই ফিরলেন।
রবীন্দ্র জাদেজার একটা বিখ্যাত উদযাপন রয়েছে। বেশ রাজকীয় একটা ব্যাপার। শতকের উদযাপনে তিনি তরবারীর খেলা দেখান ব্যাট দিয়ে। তাঁকে সেটায় মানায় অবশ্য। যেন মনে হয় কোন বীর যোদ্ধা এসেছে যুদ্ধ জয় করে। বীরত্ব গাঁথার অন্ত অবশ্য ঘটেনি। একের পর এক রণক্ষেত্রে তিনি বীরদর্পে নিজের সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন।
কাজী নজরুলের কবিতার মর্মার্থ উপলব্ধি করেই যেন তিনি চির উন্নত রেখেছেন তাঁর শির। একা হাতেই তিনি গুড়িয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার কঠিন দূর্গ। গুণে গুণে সাতখানা উইকেট তিনি নিলেন এক ইনিংসে। গড়ে ফেলেন নিজের ব্যক্তিগত রেকর্ড। সাদা পোশাকে নিজের সেরা বোলিং ফিগারের দেখাটা তিনি পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে।
৪২ রান খরচায় তিনি বাগিয়েছেন ৭টি উইকেট। ঘুরে দাড়ানোর একটু খানি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল অজিরা। সেই সুযোগটুকু কেড়ে নেন রবীন্দ্র জাদেজা। তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটায় রীতিমত লঙ্কাকাণ্ড করে বসেন জাদেজা। তাঁকে খানিকটা সহযোগিতা অবশ্য করেন তারই সতীর্থ রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
তৃতীয় দিনের শুরুটা অস্ট্রেলিয়া শুরু করেছিল নতুন এক আশা নিয়ে। আগের ইনিংসে এক রানের লিড নিতে সক্ষম হয়েছিল। তাইতো সুবিশাল কোন টার্গেট ছুড়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় দফা ব্যাটিং করতে নামে অজিরা। শুরুটা খুব একটা খারাপ হয়নি। দ্বিতীয় দিনের শেষবেলায় এক উইকেট হারিয়ে ৬১ রান সংগ্রহ করে মার্নাস লাবুশেন ও ট্র্যাভিস হেড।
পরদিন স্কোরবোর্ডটা বড় করবার ইচ্ছেই হবার কথা। কিন্তু, হয়েছে তাঁর উল্টোটা। ৫২ রানের মাথায় অস্ট্রেলিয়ার পুরো ব্যাটিং লাইনআপ সাজঘরে। সেই ধ্বংসযজ্ঞের শুরুটা অবশ্য অশ্বিন করেছিলেন। অশ্বিনের বলে হেডের ক্যাচ দস্তানা বন্দি করেন শ্রীকর ভারত। ঠিক এরপর থেকেই এক এক করে উইকেট তুলে নিতে শুরু করেন জাদেজা।
আগের দিন উসমান খাজার উইকেটের সাথে এবার যুক্ত করেন মার্নাস লাবুশেনের উইকেট। দলীয় ৮৫ রানের মাথায় স্টিভেন স্মিথকে অশ্বিন ফেরালে, তাসের ঘরে পরিণত হতে সময় নেয়নি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দূর্গ। ৯৫-৩ থেকে মুহূর্তের মধ্যে ৯৫-৭। ধ্বংসের শেষটা দেখা শেষ অস্ট্রেলিয়ার। দুই ওভারের ভেতর লণ্ডভণ্ড সব।
লাবুশেনের উইকেটের পর, জাদেজার ঝুলিতে যুক্ত হয় পিটার হ্যান্ডসকম্ব, প্যাট কামিন্স, অ্যালেক্স ক্যারি, নাথান লিঁও ও ম্যাথু কুহ্নেমেনে উইকেট। একটা সেশনেই তলপিতলপা গুটিয়ে ফেলে অজিরা। তাদের কাছে রবীন্দ্র জাদেজা নামক আগ্রাসনের যেন কোন উত্তরই জানা ছিল না। জাদেজার এই তাণ্ডবের ফলে খুব বেশি রান তুলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।
১১৫ রানের টার্গেট পায় ভারত। দিল্লীর স্পিনিং উইকেটে সেই রানটুকু করতেও বেশ ভালই বেগ পোহাতে হয়েছে ভারতকে। চারটি উইকেট খোয়াতে হয়েছে। তবুও দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই জয়ের দেখা পেয়ে যায় ভারত। এই জয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ভারত।
যার পুরো কৃতীত্ব যদি জাদেজাকে দেওয়া হয়, তাতে অবশ্য খুব একটা ভুল কিছু করা হয় না। কেননা প্রথম টেস্টে দ্যুতি ছড়ানোর পর দ্বিতীয় টেস্টেও একই মহীমার প্রদর্শন ঘটিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। প্রত্যার্বতন ঠিক কেমন হওয়া উচিৎ সেই উদাহরণ লিখে রেখে যাচ্ছেন তিনি।