চেনা মঞ্চ, চেনা মিরাজ

নিজের অভিষেক ম্যাচেই ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ একাই তছনছ করে দিলেন উনিশ বছরের এক তরুণ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেটটা পেয়েই দুই হাতে পাখির মত ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার উদযাপন। সেই থেকে যে মেহেদী হাসান মিরাজ উড়ছেন, তো উড়ছেনই। প্রায় সাত বছর পর আরেকবার ইংল্যান্ড, আরেকবার মিরপুরের মঞ্চ। পোশাকটা বদলেছে কেবল, তবে মিরাজের ধার নয়।

নিজের টেস্ট অভিষেকেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই মিরপুরে তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। এরপর থেকে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মিরাজ বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের অন্যতম ভরসা। দিনে দিনে নিজেকে প্রমাণ করেছেন রঙিন পোশাকের ক্রিকেটেও। অন্তত টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মিরাজ ঠিক ততটা নিয়মিত নন। দলে থাকলেও একাদশে নিয়মিত সুযোগ আসে না। কারণ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই ক্রিকেটে মিরাজ যথেষ্ট কার্যকর না বলেই শোনা যায়। স্পিনার হিসেবে তাঁর থেকে নাসুম আহমেদ, শেখ মেহেদীদেরই বেশি এগিয়ে রাখা হয় এই ফরম্যাটে।

ফলে এই ফরম্যাটে নিজেকে প্রমাণ করারও একটা তাগিদ ছিল মিরাজের। একাদশে নিজের জায়গাটা পাকা করে নেয়ার একটা মঞ্চ তিনি আজ পেলেন। ঠিক সাত বছর আগে বাংলাদেশ দলে জায়গা করে নেয়ার একটা মঞ্চ যেমন তাঁকে গড়ে দেয়া হয়েছিল। সেদিন সুযোগটা পুরোপুরি লুফে নিয়েছিলেন মিরাজ।

আর আজকের মিরাজ তো আরো অনেক বেশি অভিজ্ঞ, আরো অনেক বেশি পরিপক্ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অলিগলি তাঁর ভালো করেই চেনা হয়ে গিয়েছে। ফলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সুযোগটা তিনি হাত ছাড়া করেন কী করে।

সেদিনের মত আজও গুটিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ। মিডল ওভারে একাই নিয়েছেন টানা চার উইকেট। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর কার্যকারিতা নিয়ে যে প্রশ্নটা ছিল সেটার একটা উত্তর দিলেন যেন।

অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আজ তাঁর বোলারদের নিয়ে চালিয়েছেন পরীক্ষা নিরীক্ষা। দলের মোট সাতজন বোলারকে ব্যবহার করেছেন এই অধিনায়ক। এমন কি নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেনদের হাতেও আজ বল তুলে দিয়েছেন সাকিব। সবাই ইংল্যান্ডকে চেপে ধরে রাখার কাজটা করেছেন।

তবে ইংল্যান্ডকে স্রেফ গুঁড়িয়ে দেয়ার দায়িত্বটা নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ইনিংসের নবম ওভারে প্রথম মিরাজকে বোলিংয়ে আনলেন সাকিব। আর সেই ওভারেই তুলে নিলেন মঈন আলীর উইকেট।

এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে মিরাজের জোড়া আঘাত। দুইবারই উইকেটের পিছন থেকে দারুণ স্ট্যাম্পিং করেছেন লিটন দাস। একই ওভারে ফিরে গেছেন ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটার স্যাম কারান ও ক্রিস ওকস।

সেখান থেকে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি ইংল্যান্ড। এরপর নিজের শেষ ওভারে মিরাজ ফিরিয়েছেন ক্রিস জর্ডানকেও। সব মিলিয়ে চার ওভার বোলিং করে তুলে নিয়েছেন চার উইকেট। খরচ করেছেন মাত্র ১২ রান। মিরাজের এমন বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা কেউই বাইশ গজে থিতু হতে পারেননি।

মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ড অল আউট হয়ে গিয়েছে মাত্র ১১৭ রানেই। ফলে ম্যাচ জেতার জন্য ব্যাটারদের কাজটা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছেন মিরাজ। ব্যাটাররা এবার কাজটা ঠিকঠাক করতে পারলেই প্রথম বারের মত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পাবে বাংলাদেশ। আরেকবার ইংল্যান্ড বধের কাব্য লেখা হবে মিরাজের হাতে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link