টাইগারদের গর্জনে দিশেহারা আয়ারল্যান্ড

ব্যাটিং তাণ্ডব, বোলিং আগ্রাসন- এ দুইয়ের মিশেলে কী ছিল না এই এক ম্যাচে! একপেশে ম্যাচ, তবুও দারুণ উপভোগ্য। কারণ ব্যাটে, বলে- দুই ইউনিটেই দ্যুতিটা যে ছড়িয়েছে শুধু বাংলাদেশ। আর তাতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আয়াল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭ রানে জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।

চট্টগ্রামের আকাশে এ দিন মেঘ ছিল সকাল থেকেই। টসের পর সেই মেঘ ভেঙ্গে নেমে এসেছিল তুমুল বর্ষণ। মিনিট ত্রিশেক বৃষ্টির পর অবশ্য খেলা শুরু হওয়ার ক্ষণ নির্ধারিত হয়েছিল। তবে ২০ ওভার ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে এসেছিল ১৭-তে।

এমন পরিস্থিতিতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতের শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস আর রনি তালুকদার। দুজনের পাওয়ার হিটিংয়ে ৩ ওভার ৩ বলেই দলীয় অর্ধশতক পূরণ করে দল।

বিশেষ করে, লিটনের উপরে যেন এ দিন এক ঐশ্বরিক শক্তি ভর করেছিল। তাঁর ব্যাটিং তোপে আইরিশ বোলারদের রীতিমত চোখ ছানাবড়া হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। চার, ছক্কা ফুলঝুরিতে মাত্র ১৮ বলেই ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন লিটন। এর মধ্য দিয়ে ১৬ বছর আগে গড়া মোহাম্মদ আশরাফুলের ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

লিটনের সাথে এ দিন যোগ্য সঙ্গ দিয়ে আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করেন রনি তালুকদারও। দুজনের জুটি থেকে আসে ১২৪ রান। যা ভেঙে দেয় সৌম্য-নাইমের গড়া ওপেনিং জুটির ১০২ রানের রেকর্ড। আগের ম্যাচে হাফসেঞ্চুরিয়ান রনি তালুকদার এ দিনও অর্ধশতকের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বেঞ্জামিন হোয়াইটের বলে ক্যাচ দিয়ে ৪৪ এ আটকা পড়েন তিনি।

রনি আউট হওয়ার পর লিটন নিজের শুরুর বিধ্বংসী রূপ ঠিকই বজায় রেখেছিলেন। এগিয়েছিলেন সেঞ্চুরির পথেও। কিন্তু অতিরিক্ত আক্রমণাত্বক ব্যাটিং অ্যাপ্রোচেরই মাশুল দিতে হয় তাঁকে। ১০ চার আর ৩ ছক্কায় শেষ পর্যন্ত ৪১ বলে ৮৩ রানে থামে লিটনের ব্যাটিং তাণ্ডব।

লিটন ফিরে গেলেও অবশ্য দলের রানের গতি কমেনি একটুও। সাকিব আর তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে ঠিকই দলীয় সংগ্রহ ২০০ পার করে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ১৭ ওভারে স্কোরবোর্ডে জমা করে ২০২ রান।

২০৩ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য। অর্থাৎ জয়ের জন্য আইরিশদের ওভার প্রতি প্রায় ১২ রান করে প্রয়োজন। এমন দুঃসাধ্য পথ পাড়ি দেওয়ার দুঃসাহস গত ম্যাচেই দেখিয়েছিল আইরিশরা। তবে এ ম্যাচে শুরুতেই বাংলাদেশি বোলারদের সামনে নতজানু হয়ে পড়েন আইরিশ ব্যাটাররা। ইনিংসের প্রথম বলেই পল স্টার্লিংকে ফেরান তাসকিন আহমেদ।

এরপরের দৃশ্যপটের পুরোটাই সাকিবের। শুরুটা করেন লরকান টাকারকে ক্যাচের ফাঁদে ফেলে। এরপর একে একে তুলে নেন রস অ্যাডায়ার, গ্যারেথ ডিলানি, জর্জ ডকরেল আর হ্যারি টেক্টরের উইকেট। টেক্টরকে বোল্ড করে তুলে নিজের পঞ্চম উইকেট। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নিলেন সাকিব। একই সাথে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় টিম সাউদিকে টপকে শীর্ষে উঠে যান সাকিব।

সাকিবের স্পিন ঘূর্ণিতে ম্যাচ থেকে মূলত ছিটকে যায় আয়ারল্যান্ড। দলীয় ৪৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি আইরিশরা। কার্টিস ক্যাম্ফার শেষ মুহূর্তে যা একটু হারের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছেন আরকি। অবশ্য তাতেও আইরিশদের বড় পরাজয় এড়ানো যায়নি। নির্ধারিত ১৭ ওভারে তাদের ইনিংস থামে ১২৫ রানে।

৭৭ রানের এ জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো টানা ৫ ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেল টাইগাররা। এবার নিশ্চয় সেটিকেও ছাপিয়ে যাওয়ার দিকেই চোখ থাকবে সাকিব-লিটনদের।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link