গত বছরে ব্যাট হাতে স্বপ্নের মতো সময় কাটিয়েছেন শুভমান গিল। ফর্মটা টেনে এনেছেন ২০২৩ সালেও, আইপিএলে রীতিমতো রানবন্যা বইয়ে দিয়েছেন এই তারকা। বিশেষ করে গুজরাট টাইটান্সের ঘরের মাঠ আহমেদাবাদে তাঁকে থামানোর সাধ্য যেন কারো নেই।
আহমেদাবাদের পিচটা ব্যাটারদের জন্য অনেক বেশি সহায়ক এমন দাবি বোধহয় কেউই করবেন না। বরং তুলনামূলক বড় মাঠে বাউন্ডারি হাঁকাতে ভালোই বেগ পোহাতে হয় ব্যাটারদের। অথচ এবারের আসরে সেই মাঠেই রানের ফুলঝুড়ি ছোটাচ্ছেন শুভমান গিল।
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরুণ না! গিল বাদে দুই দলের বাকি ব্যাটসম্যানরা ১৮২ বল মোকাবিলা করে সংগ্রহ করেছেন ২১৯ রান। ১৩ গড় কিংবা ১২০ স্ট্রাইকরেট কোনোটাই আজকের দিনের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের সাথে মানানসই নয়। অথচ সেই পিচে দাঁড়িয়েই কিনা গিল খেললেন ৫৮ বলে ১০১ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। অন্যদিকে, তাঁর আট সতীর্থ ব্যাটার পৌঁছুতে পারেননি দুই অংকের রানেই।
সবচেয়ে দুর্দান্ত ব্যাপার হলো ঝুঁকিপূর্ণ শট কিংবা ছক্কা না হাঁকিয়েই দারুণ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন এই তারকা। কোনো ছক্কা না হাঁকিয়েই মাত্র ২২ বলে ফিফটিতে পৌঁছে যান গিল। শতরানের ইনিংস খেলার পথে বল গ্যালারীতে পাঠিয়েছেন মাত্র একবার। টি- টোয়েন্টিতে মাত্র তিনজন ব্যাটারই তাঁর চেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন এত কম ছক্কা হাঁকিয়ে।
পেশি শক্তির প্রদর্শনী নয় কিংবা এলোপাথারি শট, বরং দুর্দান্ত টাইমিংয়ে উইকেটের চারপাশে নিখাদ ক্রিকেটীয় সব শটে রান তুলেছেন এই ব্যাটার। গোটা স্টেডিয়াম যেন মুগ্ধ দর্শক হয়ে উপভোগ করেছে তাঁর শৈল্পিক এই ইনিংস। অথচ দুই দলই জানতো একদম ব্যবহার না হওয়া পিচে রান তোলা মোটেই সহজ হবে না।
পেসাররা সুইং পাবেন, দুই দলই তাই শুরু করেছিল স্লিপে দুজন ফিল্ডার রেখে। অথচ সেই পিচে দাঁড়িয়ে শুভমান ব্যাটিং করেন কি অবলীলায় যেন এর চাইতে সহজ কিছু হতেই পারে না।
প্রতিপক্ষের ফিল্ডিংয়ের গ্যাপ খুঁজে বাউন্ডারি বের করেছেন এই তারকা। তাঁর ১৩টি চারের মাঝে ১১টি চারের ক্ষেত্রেই ব্যাটের মাঝখানে শট খেলেছেন। কোনো নির্দিষ্ট বোলারের উপর চড়াও হননি, বরং হায়দ্রাবাদের প্রতিটি বোলারই খেই হারিয়েছেন শুভমানের দুরন্ত ব্যাটিংয়ের সামনে।
ভালো বলকে যেমন সম্মান দেখিয়ে সন্তুষ্ট থেকেছেন সিঙ্গেল-ডাবলসে, তেমনি বাজে বলকে পাঠিয়েছেন সীমানার বাইরে। এবারের আসরের আগে ধীরগতির ব্যাটিংয়ের অভিযোগ ছিল শুভমানের বিপক্ষে। এক ইনিংসেই যেন সব সমালোচনা উড়িয়ে দিলেন এই তারকা।
এবারের আসরে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন গিল। ১৩ ইনিংসে ৫৭৬ নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক এই ওপেনার। এই ইনিংস দিয়ে ২০২৩ সালে নিজের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন এই ওপেনার।
এর মাঝে তিনটিই এসেছে আহমেদাবাদের এই মাঠে। তাঁর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভর করেই শিরোপা ধরে রাখার মিশনে সবার আগে শেষ চার নিশ্চিত করেছে গুজরাট টাইটান্স।
বছর শেষে বিশ্বকাপের বেশ কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আহমেদাবাদের এই স্টেডিয়ামের। শুভমান গিল তাই চাইবেন ফর্মটা ধরে রেখে বিশ্বকাপের মঞ্চেও আলো ছড়াতে।