বঞ্চনা নয়, মনোজের গল্পটা কপালের

দুটো শট।
১.

২০০৬-০৭, চতুর্থ ইনিংসে সাড়ে চারশোরও বেশি রান তাড়া করে বাংলা দেড়শোয় তিন উইকেট হারিয়ে, সৌরভ গাঙ্গুলি আর মনোজ তিওয়ারি ক্রিজে। জহির খান, অজিত আগারকার, উইলকিন মোতা, রমেশ পাওয়ার সম্বলিত মুম্বই রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছে। অধিনায়ক অমল মুজুমদার দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েছেন। দ্বিতীয় ওভারেই জাহির খানের বিরুদ্ধে স্টেপ আউট করেছেন মনোজ।

জহির শরীর লক্ষ্য করে ঠুকেছেন বল। বল নিমেষে পাঁজরের কাছে। মনোজ স্টেপ আউট করতে করতেই বাঁ পায়ে শরীরটা একটা দারুণ মোচড় দিলেন। আড়াআড়ি ব্যাট চলল বল উড়ে গেল মিড উইকেট বাউন্ডারির বাইরে। মনোজ ৯৪ করে আউট হন, সৌরভ ৯০। ম্যাচটা বাংলা হেরে গিয়েছিল।

২.

তার পরের বছর। কোয়ার্টার ফাইনাল। তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে। সুরেশ রায়না না কে যেন একজন বাঁ-হাতি স্পিনার বল করছেন। স্লিপে বদ্রিনাথ, উইকেট কিপার কার্তিক। প্রিমেডিটেড সুইপের জন্য মনোজ হাঁটু গেড়ে বসেছেন, বদ্রি বুঝতে পেরেই স্লিপ থেকে লেগস্লিপের দিকে ছুটেছেন।

যদি বল হাওয়ায় থাকে আর ক্যাচটা পেয়ে যান এই আশায়। চোখের কোণ দিয়ে দেখা সম্ভব নয়, তবু কেমন করে জানি না মনোজ টের পেলেন এবং বল হাত থেকে বেরোবার পর শট বদলে রিভার্স স্যুইপ মেরে চার মারলেন। বদ্রি লেগ স্লিপে ছুটে গিয়ে বোকা বনে মাথায় হাত।

ছেলেবেলা থেকে শুনতাম বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার গল্প। মনোজের ক্ষেত্রে বলব কপালের গল্প। যখন অনূর্ধ্ব উনিশ থেকে আসছেন তখন একটা চ্যালেঞ্জার্স ট্রফিতে রোহিত আর মনোজ ব্যাট করছেন একসঙ্গে। কমেন্ট্রি বক্সে সানি গাভাস্কার। বললেন, ‘ভারতের মিডল অর্ডারের ভবিষ্যৎ!’

কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের ঠিক আগেই কাঁধে চোট পেলেন। তারপর একদিনের আন্তর্জাতিক খেলেছেন, সেঞ্চুরিও করেছেন। কিন্তু, টেস্ট খেলা আর হয়নি।

বস্তুত, মনোজের সম্পূর্ণ প্রস্ফুটনে বাঁধা হিসাবে সৌরভের দিকে আঙুল তোলা যায় কি? অভিষেক ঝুনঝুনওয়ালা, নিখিল হলদিপুররা সম্ভাবনা দেখিয়েও ফুরিয়ে গেছেন। বাংলার মিডল অর্ডারে শুধুমাত্র মনোজ আর লক্ষ্মী। এই সময় সৌরভ আইপিএল খেলছেন। কিন্তু, আর একটা মৌসুম যদি সঙ্গে থাকতেন? ২০০৫-০৯, এই আক্রমণত্মক মনোজ বাংলার স্বার্থেই রক্ষণাত্মক ব্যাটার হয়ে গেলেন। পরবর্তীকালে আইপিএলেও তেমনভাবে খেলে উঠতে পারলেন না। শট মেকিংয়ের স্বাভাবিকত্বই যেন নষ্ট হয়ে গেছিল।

মনোজ তিওয়ারি, সৌরভ পরবর্তী সময়ে বাংলার সেরা ব্যাট। তাঁর সেই অনূর্ধ্ব উনিশের সঙ্গী এখন ভারত অধিনায়ক। কিন্তু মনোজের আর টেস্ট খেলা হল না। ছেড়ে দেবার কথা শুনে একটু হলেও খারাপ লাগল। কত কিছুই তো হতে পারত। হয় না, হল না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link