বিশ্বকাপের বাকি নেই মাস খানেক। তবে এখনও বাংলাদেশ দল যেন রয়েছে দোলাচলে। দলে ইনজুরির হানা। তাছাড়া যথাযথ খেলোয়াড় খুঁজে না পাওয়ার সংগ্রাহ যেন চলছেই। বিশেষ করে ওপেনিং পজিশনটা বড্ড খাপছাড়া, এলোমেলো। দীর্ঘদিন ধরে খেলতে থাকা তামিম ইকবালের অনুপস্থিতি ইতোমধ্যেই বেশ পীড়া দিচ্ছে।
তামিম ইকবাল খান, আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষবার জুলাইয়ে মাঠে নেমেছিলেন। এরপর তার অবসর কাণ্ড ও ইনজুরি। সব মিলিয়ে তিনি লম্বা সময় ধরে মাঠের বাইরেই অবস্থান করছেন। বেশ ক’দিন তো ক্রিকেট ব্যাট হাতেই দেখা যায়নি তাকে। তবে তিনি ব্যাট-প্যাডে সজ্জিত হয়ে আবারও ফিরেছেন মাঠে।
ধাপে ধাপে তামিম নিজেকে তৈরি করছেন আসন্ন বিশ্বকাপের জন্যে। তাছাড়া তিনি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও যাচ্ছেন। তাইতো তাকে থাকতে হচ্ছে বেশ সতর্ক। তবে ফিট হওয়ার বিষয়ে আপোষ নেই তার। দৌড়ে বেড়াচ্ছেন স্টপওয়াচ ধরে। প্রতিদিন যেন অগ্রগতির খালি ঘরে একটি করে টিক দিচ্ছেন তিনি। ক’দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে কড়া ডায়েটের কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
এসবের সরল বাক্য করলে দাঁড়ায়, তামিম লাল-সবুজ জার্সিতে ফিরতে বড্ড মড়িয়া। তবে কেবল তিনি নন। দেশের প্রত্যেকেই যেন চাইছেন তামিম দ্রুতই মাঠে ফিরুক। অন্তত নিউজিল্যান্ড সিরিজের মধ্যে দিয়ে তিনি হাল ধরুক বাংলাদেশের ভঙ্গুর ওপেনিংয়ের। এমনকি ভিনদেশী জেমি সিডন্সও যেন তামিমকে ফেরাতে চান স্বরুপে, দ্রুতই।
তার সাথে যোগ দিয়েছেন দেশসেরা কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে ভরসার নাম সম্ভবত তিনিই। প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড়ই নিজেদের খারাপ সময়ে সালাহউদ্দিনের সরণাপন্ন হয়ে থাকেন। তামিমও হয়ত সেই সুযোগ হাতছাড়া করলেন না।
বাংলাদেশ দল এশিয়া কাপ মিশনে ব্যস্ত। এরই মাঝে মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ তামিম ইকবাল খান।প্রায় প্রতিদিন তিনি মাঠে আসছেন। অনুশীলন করছেন। নিয়ম করে ইন্টেন্সিটি বাড়াচ্ছেন। ড্রিল থেকে থ্রোয়ার, থ্রোয়ার থেকে স্পিন এরপর পেস বোলিং- ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তামিম।
তার সার্বিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার দেখভালে রয়েছেন সোহেল ইসলাম। সোহেল, সালাহউদ্দিন আর সিডন্স তিনজনে মিলে যেন তামিমের বিষয়ে আলাপ করেছেন। পরিস্থিতি জেনে তামিমকে সঠিক দিকনির্দেশনা যেন দেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টাই করতে দেখা গেছে সালাহউদ্দিন ও সিডন্সকে।
তাদের তৃমুখী বৈঠকের মাঝে তামিমও যুক্ত হয়েছেন। নিজের অবস্থানটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন যেন। ভুলত্রুটির উর্ধ্বে কেউ নয়। দেড় দশকের বেশি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের তামিমও নন। ইনজুরির বিরতির আগে তামিম অফফর্মে মধ্যে দিয়েই যাচ্ছিলেন। আর তিনি যখন ফিরবেন, তখন ভীষণ চাপের মুখেই পড়তে হবে তাকে। তাইতো সবরকম ভাবেই তার প্রস্তুত থাকা চাই।
সেজন্যে অবশ্য পন্থা আর পথটা সঠিক হওয়া চাই। সেসবই যেন বলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সালাহউদ্দিন ও সিডন্স। এই দু’জনই তামিমের তামিম হয়ে ওঠার সময়টুকু দেখেছেন সামনে থেকে। তারা জানেন তামিমের সক্ষমতা আর দূর্বলতা ঠিক কতটুকু। তাছাড়া একজন ব্যাটারের ইনজুরি থেকে ফেরার পথে তার কি কি করা প্রয়োজন তাও তাদের বেশ ভালভাবেই জানা।
অন্যদিকে সালাহউদ্দিন যেমন স্থানীয় ক্রিকেটারদের উন্নতির বিষয়টি নিয়ে নিরলস কাজ করে যান। ঠিক তেমনি জেমি সিডন্স বাংলাদেশের ভবিষ্যতে খেলোয়াড়দের রেখেছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে। তাদের থেকে বেশি আর তামিমের উন্নতির টোটকা কেই বা দিতে পারবে।
তাইতো তামিম বেশ খোলামেলাই আলোচনা করেছেন তাদের সাথে। বেশ খোশ মেজাজেও দেখা গেছে তামিমকে। যেন একটু হলেও স্বস্তি ফিরছে তার। তিনি যেন ভালই বোধ করছেন। কোমড়ের ইনজুরি অন্তত এখন আর তৈরি করছে না নতুন কোন ঝামেলার।
নতুন কোন ঝামেলার সৃষ্টি যেন না হয়, সেটা সবারই প্রত্যাশা। সবাই বেশ অধীর আগ্রহে মুখিয়ে আছেন তামিমের প্রত্যাবর্তনের। নিশ্চয়ই তামিম নিরাশ করবেন না। বিস্ফোরক এক তামিম হয়েই ফিরবেন তিনি। সে সময়েরই অপেক্ষা।