বাবরসুলভ বাবর

প্রথম ওয়ানডেতে ২ বলে ০, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৫ বলে ১৯ রান! ব্যাস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসির খোঁড়াক হয়ে উঠলেন পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম। সমালোচনা আর ট্রল পোস্টে সয়লাব ফেসবুক সহ অন্যান্য মাধ্যমে। করোনার হানায় হুট করেই শেষ মুহূর্তে বেন স্টোকসকে অধিনায়ক করে দ্বিতীয় সারির দল ঘোষণা করে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়ালস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।

যেখানে ছিলেন ৯ জন নতুন মুখ! এমন একটা দলের বিপক্ষে ওয়ানডে ব্যাটিং র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে থাকা বাবর আজমের এমন পারফরম্যান্স যেন সত্যি হতাশাজনক। নিজের সাথে সাথে ব্যর্থ হয়েছে তাঁর দলও! দুই ওয়ানডেতেই বাজেভাবে হেরে সিরিজ হাতছাড়া করেছে বাবর আজমের দল।

তাই শেষ ওয়ানডেতে অনেকটা হতাশা নিয়েই মাঠে নামে পাকিস্তান। এজবাস্টনে টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। প্রথমেই দলীয় ২১ রানেই ফখর জামানকে হারায় সফরকারীরা। এরপর ইমাম উল হককে নিয়ে জুটি বাধেন বাবর। ব্যাটিং উইকেটেও অনেকটা ধীর গতিতেই রান তুলতে থাকেন পাকিস্তানি অধিনায়ক।

দ্বিতীয় উইকেটে ইমামকে সাথে নিয়ে জুড়ে দিলেন ৯২ রান! ইমাম উল হক ৫৬ রানে ফিরলেও একপ্রান্তে রানের চাকা সচল রাখেন বাবর। তুলে নেন দুর্দান্ত এক ফিফটি। ধীরে ধীরে রানের ক্ষুদাও বাড়তে থাকে বাবরের। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সাথে নিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন বাবর।

তৃতীয় উইকেটে ১২০ বলে ১৭৯ রানের জুটির পথে বাবর তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে দ্রুত রান তুলতে থাকেন দু’জনে। একপ্রান্তে রিজওয়ানও দ্রুত ফিফটি তুলে নেন। রিজওয়ান ৫৮ বলে ৭৪ রানে ফিরলেও একপ্রান্তে রান বন্যায় ভাসাতে থাকেন বাবর। একা হাতে লড়াই করে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম দেড়শো!

শেষ ওভারে ব্রাইডন কার্সের বলে আউট হবার আগে ১৩৯ বলে ১৫৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। ১৪ চার আর ৪ ছক্কায় এই ইনিংস সাজান বাবর। প্রথম ১৯ বলে মাত্র ৪ রান! সেখান থেকেই ইনিংস গড়তে শুরু করেন বাবর।

খেললেন অসাধারণ এক মাস্টারক্লাস ইনিংস। দলের প্রয়োজনে প্লে করেছেন অ্যাংকর রোল। আবার দলের প্রয়োজনের পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন বিধ্বংসী। শুধু ইনিংসটা বড় বলেই নয়, ইনিংসটা সত্যিই ছিল বাবরসুলভ। একটা মুহূর্তের জন্যও যেন চোখ সরানো গেল না। নিজের ইনিংসটা নিয়ে বাবর আজম যেন আরেকবার বলে দিলেন, শুধু সময়ের সেরাই নয়, সবচেয়ে নান্দনিক ব্যাটসম্যানদের একজনও তিনিই।

ক্যারিয়ারে প্রথম দেড়শো করার সাথে সাথে বাবর ছু্ঁয়েছেন বেশ কিছু রেকর্ড। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোনো পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের এটি সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। ওয়ানডেতে পাকিস্তানি অধিনায়ক হিসেবে এটিই এখন সর্বোচ্চ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোনো অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে এটি সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান।

এখানেই শেষ নয়, পুরুষ বা নারী যেকোনো ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে ১৪ টি সেঞ্চুরি করলেন তিনি। তিনি ৮১ তম ম্যাচে ১৪ তম সেঞ্চু পেলেন। অস্ট্রেলিয়ান নারী ক্রিকেটার মেগ ল্যানিং ১৪ টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৮২ তম ইনিংসে। অন্যদিকে, ছেলেদের মধ্যে এই রেকর্ডটা এতদিন ছিল হাশিম আমলার দখলে। তিনি ৮৪ তম ইনিংসে ১৪ টি সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান।

বাবরের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৩১ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। যেই বাবরকে নিয়ে এক দিন আগেও বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনার পাত্র বানানো হয়েছিলো! সেই বাবরকেই এখন প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন ভক্ত-সমর্থকরা। দলের খারাপ সময়ে ব্যাট হাতে নিজের সেরাটা দিয়ে আবারো তিনি প্রমাণ করলেন কেনো তিনি এই ফরম্যাটের সেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link