রিয়ালের হন্তারক, কে এই ভ্যালেন্টিন ক্যাস্তেলানো?

এই স্বপ্নের রাত হয়ত আরও কিছু নির্ঘুম রাতে জোগান দেবে। ক্যাস্তেলানো হয়ত বারবার বুঝে ওঠার চেষ্টা করবে, ঠিক কি করেছেন তিনি।!

ধারে তিনি খেলতে এসেছেন জিরোনায়। তবে তার পায়ের ধার গুণে গুণে চারখানা ক্ষত করে দিল রিয়াল মাদ্রিদের শুভ্র হৃদয়ে। কি বিস্ময়কর! ঘটনার পরিধি আরেকটু বাড়িয়ে দেখলে বিস্ময়ের বিস্তৃতিও বাড়ে। অবিশ্বাস্য এক ঘটনার মঞ্চায়ন করেছেন জিরোনার স্ট্রাইকার ভ্যালেন্টিন ক্যাস্তেলানো।

শেষ সাত ম্যাচের ছয়টিতে কোন গোল হজম করেনি স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। সেই ক্লাবের বিপক্ষেই কিনা লাগাতার চার খানা গোল আদায় করে নিয়েছেন একজন। স্বাভাবিকভাবেই বিস্ময় জাগে, জানতে ইচ্ছে হয়, কে এই খেলোয়াড়!

জন্ম তার আর্জেন্টিনায়। যেখান থেকে জাদুকর ডিয়েগো ম্যারাডোনা আর ভিনগ্রহের লিওনেল মেসির নাড়ির সমাধি। সেই দেশ থেকেই উঠে এসেছেন ক্যাস্তেলানো। ইউনিভার্সিদাদ দে চিলিতে তার ফুটবলের হাতেখড়ি। সেখান থেকই তিনি ক্রমশ নিজের ক্যারিয়ারটা গুছিয়ে উঠতে শুরু করেন।

ব্রাজিলিয়ান ক্লাব করিন্থাসের বিপক্ষে তিনি তার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন। খুব বেশি জাকজমকের দেখা এখন অবধি মেলেনি তার। বেশ সাদামাটা একটা ক্যারিয়ারের বর্ণিল এক অধ্যায় রিয়াল মাদ্রিদের জালে চার খানা গোল।

মূলত তিনি এখনও চুক্তিবদ্ধ মেজর লিগ সকারের ক্লাব নিউ ইয়র্ক সিটি এফসির সাথে। সেখান থেকে তাকে ধারে নিয়ে আসে স্পেনের ক্লাব জিরোনা। তার ক্যারিয়ারে বলার মত আছেই এতটুকু। মাঝে ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ছয়টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেখানেও বল জালে জড়াতে পারেননি। তবে ভাগ্য বিধাতা যেন তার জীবনে মোড় লুকিয়ে রেখেছিলেন এই একটি ম্যাচেই।

রিয়াল মাদ্রিদ নিঃসন্দেহে পুরো ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্লাব। এমনকি বর্তমান সময়টাও ভীষণ খারাপ যাচ্ছে না লস ব্ল্যাঙ্কোসদের। এমন একটা সময়ে বেশ চমকপ্রদ এক কীর্তিই গড়েছেন ভ্যালেন্টিন ক্যাস্তেলানো। মাত্র দ্বিতীয় আর্জেন্টাইন হিসেবে মাদ্রিদের জালে চার গোল দেওয়ার কীর্তি গড়েছেন তিনি। এর আগে ২০০৬ সালে কোপা ডেল রে এর এক ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ আলবিসেলেস্তা দাপটের শিকার হয়েছিল।

সেমিফাইনালের সে ম্যাচে মাদ্রিদের গোলবারের চার দফা আক্রমণ চালান ডিয়েগো মিলিতো। জারাগোজার হয়ে সেদিন রিয়ালের দম্ভ চূর্ণ করেছিলেন তিনি। তবে মাদ্রিদের বিপক্ষে একজন খেলোয়াড়ের চারটা গোল করবার রেকর্ড সেটাই প্রথম ছিল না। সর্বপ্রথম ১৯২৬ সালে ঘটনাটি ঘটে কোপা ডেল রে এর ম্যাচে। বার্সেলোনার হোসেপ সামিতিয়ে চার গোল করেছিলেন।

ক্যাস্তোলানোর এই আঘাতের আগে ২০১৩ সালে রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল রিয়ালের রক্ষণকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে লেওয়ান্ডস্কি চার গোল করেছিলেন। একেবারেই বিরল কোন ঘটনার অবতারণা করেননি ক্যাস্তেলানো। তবে এই ঘটনা এতটাও তুচ্ছ নয়।

২০২০ সালে শেষবার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করতে পেরেছিলেন কার্লোস সলের। ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে শেষবার তিনি করেছিলেন প্রায় তিন মৌসুম আগে। এরপর কেটে গেছে লম্বা একটা সময়। ঠিক তারপরই ক্যাস্তেলানো লিখে ফেললেন এক মহাকাব্য।

১২ মিনিটে শুরু তার তাণ্ডব। মাদ্রিদ কফিনের শেষ পেরেকটা তিনি ঠুকে দেন ম্যাচের ৬২ মিনিটে। শেষদিকে রিয়াল মাদ্রিদ ফিরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও হয়েছে ব্যর্থ। টেবিলের প্রায় তলানিতে থাকা দলের বিপক্ষে এমন পরিস্থিতিতে মেজাজ হারিয়েছেন লস ব্ল্যাঙ্কোস শিবির। তবে ইতিহাস রচনার দিয়ে মাদ্রিদকে বেশ অসহায় ঠেকেছে।

এমন এক কীর্তি গড়ে বেশ উৎফুল্ল ক্যাস্তেলানো। তিনি বলেন, ‘‘রিয়ালের বিপক্ষে চার গোল করা, এটা স্বপ্নের মতো এক রাত। এমন পারফরমেন্সে রিয়ালের বিপক্ষে জয়ে অবদান রাখা দারুণ ব্যাপার। সতীর্থ এবং দলের সবাইকে ধন্যবাদ। তাদের ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না।’

এই স্বপ্নের রাত হয়ত আরও কিছু নির্ঘুম রাতে জোগান দেবে। ক্যাস্তেলানো হয়ত বারবার বুঝে ওঠার চেষ্টা করবে, ঠিক কি করেছেন তিনি।! তিনি হয়ত বিস্ময় ভরা চোখে নিজের খেলা দেখবেন টিভির পর্দায়। বারবার, কয়েকশ বার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...