শেখ মেহেদীর আত্মবিশ্বাসের সন্ধান

জীবন কখনোই বারবার সুযোগ দেবে না। বহুল আকাঙ্ক্ষিত সুযোগটা কাজে লাগাতেই হয় যে কোন মূল্যে। শেখ মেহেদী তেমনটাই করবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যদিও গা গরমের ম্যাচ। খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না এই ম্যাচের ফলাফল। তবে বাংলাদেশের প্রতিটা খেলোয়াড়ের জন্যেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল মোমেন্টাম ফিরে পাওয়ার ম্যাচ।

শেখ মেহেদীর জন্যে ছিল নিজের প্রস্তুতিটা আরও খানিকটা শাণিত করবার মঞ্চ। কাজটা বেশ ভালভাবেই করেছেন তিনি। অন্তত বল হাতে। একটুখানি বার্তা দিয়ে রাখলেন যেন। বিশ্বকাপে খুব বেশি ম্যাচ হয়ত খেলার সুযোগ আসবে না। যেদিন বাংলাদেশের ব্যাটিং গভীরতা বাড়ানোর প্রয়োজন হবে, সেদিনই সম্ভবত ডাক আসবে শেখ মেহেদীর।

তখন অবশ্য একজন বোলারের পরিবর্তেই একাদশে সুযোগটা মিলবে তার। যেহেতু পিঞ্চহিট তিনি করতে পারেন যুতসই। এমন একজন ব্যাটার শেষের দিকে বাংলাদেশের ভীষণ প্রয়োজন। তবে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই বোলিং অপশন কমিয়ে ফেলা। তাইতো বল হাতেও তাকে সমানভাবেই আস্থার প্রতিদান দিতে হবে সেসব ম্যাচে।

শেখ মেহেদী তেমন দিনের প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিতই দিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ার্মআপ ম্যাচে। ৯ ওভার বল করে নিয়েছেন ৩টি উইকেট। তাও আবার গুরুত্বপূর্ণ উইকেটই গেছে তার ঝুলিতে। অর্ধশতক করা পাথুম নিসাঙ্কার উইকেট যেমন শিকার করেছেন মেহেদী। তেমনি চারিথ আসালাঙ্কা ও সাদিরা সামাভিক্রামার উইকেট গেছে তার পকেটেই।

গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতেই লংকান ব্যাটিং অর্ডারে আঘাত হেনেছেন শেখ মেহেদী। ডান অফ স্পিনের ভেল্কিতেই তিনি আসালাঙ্কা ও নিসাঙ্কার ২৫ রানের জুটিতে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এরপর আবার আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয় ডি সিলভার ৩২ রানের জুটিতে আঘাত করেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার উড়ন্ত সূচনায় অদৃশ্য এক লাগাম টেনে ধরেন শেখ মেহেদী। দলের প্রয়োজনের সময় উইকেট বাগিয়েছেন ঠিক। পাশাপাশি রানের চাকা স্লথ করতেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দারুণ গতিতে এগিয়ে চলা লংকান ইনিংসের ধীর গতির সূচনা হয় মেহেদীর আঁটসাঁট বোলিংয়ে। মাঝের ওভারগুলোতে বেশ কৃপণতাই দেখিয়েছেন শেখ মেহেদী।

এদিন তার থেকে কম ইকোনমি রেট ছিল আরেক মেহেদী, মেহেদী হাসান মিরাজের। শেখ মেহেদীর ইকোনমি ৪.০০। দারুণভাবে শ্রীলঙ্কাকে কোণঠাসা করেছেন ডান-হাতি এই অলরাউন্ডার। স্রেফ ওয়ার্মআপ ম্যাচ বলেই যে মেহেদীর এমন পারফরমেন্স কোন গুরুত্ব বহন করে না- তা কিন্তু নয়। যেকোন দিন দলের এমন একজনকেই এগিয়ে আসতে হয়।

শেখ মেহেদী সে কাজটাই করবার প্রচেষ্টা করে গেছেন। তাছাড়া তাকে নিয়ে সন্দেহও ছিল অনেকের মাঝেই। দলে তার অন্তর্ভুক্তিতে প্রশ্ন তুলতেই যেন সবাই ছিলেন অপেক্ষমান। তবে সেই সুযোগটা দেননি শেখ মেহেদী। সেই ইমার্জিং এশিয়া কাপ থেকেই তিনি দলের একজন ‘ইউটিলিটি ক্রিকেটার’ হিসেবে নিজের যথাযথ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।

গা গরমের এই ম্যাচটা আরও খানিকটা আত্মবিশ্বাসই জোগাবে শেখ মেহেদী হাসানকে। তিনি হয়ত একটু নির্ভার হতেই পারেন। নিজের দিনে তিনিও হতে পারেন বাংলাদেশের স্মরণীয় কোন জয়ের নায়ক। সেই বিশ্বাসটা একটু ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও নিশ্চয়ই জায়গা করে নিতে শুরু করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link