আইসিসির টুর্নামেন্ট মানেই যেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের পাশে চিরন্তন ‘ফেবারিট’ তকমা। বড় মঞ্চে ফেবারিট তকমায় অবশ্য অসম চাপও ভর করে তাদের উপর। আর তাই শেষ ১০ বছরের পথচলায় বারবাই সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপে নুয়ে পড়েছে দলটা।
বারংবার এই ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনাও কম হয় না৷ চলতে থাকে বছর জুড়েই। তবে ঘরের মাটিতে এবারের বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে আবারো শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছে ভারতবাসী। কিন্তু, বিশ্বকাপের আগে এখন পর্যন্ত সেরা দলটাকেই মাঠে নামাতে পারছে টিম ইন্ডিয়া। ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে রয়েছেন দুই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার জাসপ্রিত বুমরাহ আর ঋষাভ পান্ত।
বিশ্বকাপের মঞ্চে এ দুই ক্রিকেটারকে আদৌ দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে অনেক সংশয় আর অনিশ্চয়তা। আর দলের এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আইপিএলকে দায়ী করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব। তাঁর মতে, সামান্য চোট নিয়ে ক্রিকেটারদের যেমন আইপিএল খেলার আকাঙ্ক্ষা থাকে, সেই আকাঙ্ক্ষাটা জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় থাকে না।
সম্প্রতি উইক ম্যাগাজিনের সঙ্গে একান্ত এক সাক্ষাৎকারে বুমরাহ আর পান্তের প্রসঙ্গ টেনে কপিল দেব বলেন, ‘বুমরাহর কি হয়েছে? তাঁর অগ্রগতি কেমন? শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে কি তাঁকে পাওয়া যাবে? যদি তাঁকে না পাওয়া যায়, তাহলে আমি বলব, আমরা সময় নষ্ট করছি। ঋষাভ পান্ত দুর্দান্ত ক্রিকেটার। দু:খজনকভাবে ও দলে নেই। সে থাকলে টেস্টে আমরা আরও ভালো করতাম।’
ক্রিকেটারদের প্রায়ই ইনজুরি পড়ার ব্যাপারে এরপর ভারতের সাবেক এ অধিনায়ক নিজের বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘এমন নয় যে আমি চোট পাইনি। এখন অবশ্য ক্রিকেটারদের বছরে ১০ মাসই খেলতে হয়। এ দিক থেকে তাদের বেনিফিট অব ডাউট দেওয়া যায়। কিন্তু নিজের খেয়ালটা নিজেকেই রাখতে হয়। আইপিএল অবশ্যই দারুণ কিছু। কিন্তু আইপিএল ক্রিকেটারদের নষ্টও করছে। কারণ, আইপিএল খেলার জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে। ছোট কোনো ইনজুরি হলেও তারা আইপিএল খেলে। কিন্তু জাতীয় দলের বেলায় সামান্য ইনজুরি নিয়ে তখন ক্রিকেটাররা বিশ্রাম নেয়।’
তবে ক্রিকেটারদের এমন অবস্থার জন্য বোর্ডেরও দায় দেখেন কপিল দেব। তাঁর মতে, ক্রিকেটের উপর ম্যাচ খেলার ধকলটা কমিয়ে আনতে হবে।
এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি ছোট ইনজুরি থাকে, তাহলে একজন আইপিএলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতেই পারে। কিন্তু বিসিসিআইয়েরও এই পর্যায়ে এসে বোঝা উচিৎ, কতটা ক্রিকেট তাদের খেলা উচিত। এটাই মূল কথা। আজকের দিনে বোর্ডের সম্পদ আছে, টাকা আছে, কিন্তু তিন,চার বছরের সূচি নেই। তার মানে গলদটা এখানেই। যেটি নিয়ে তাঁরা কোনো কাজই করে না।’
এমতাবস্থায় নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সময়ের কথা টেনে তিনি বলেন, ‘৩০ বছর আগে আমরা যখন খেলতাম, তখন টাকা ছিল না। আরও টাকা লাগতো। ঐ সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমন্ত্রণ জানানো হতো। এখন তো আর বেশি টাকার দরকার নেই। এখন প্রয়োজন আরও ভালো ক্রিকেট। আইপিএলের আসর শেষ করা হচ্ছে টেস্ট ম্যাচের কেবল তিন দিন আগে। অথচ পরিকল্পনা করা উচিত তিন থেকে, পাঁচ বছর আগে থেকে। এজন্যই আমি অস্ট্রেলিয়াকে সমীহ করি। ওদের সব কিছুর সূচি চূড়ান্ত করা থাকে। আর ওদের সফলতা এই ঠিকঠাক পরিকল্পনার কারণেই হয়।’