প্রথমে লং অন, এরপরের দু’টো মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে সীমানার বাইরে। পুরো মাঠ যেন এক লহমায় সর্বোচ্চ আনন্দটুকু খুঁজে নিল। সাইফ হাসানের এক ওভারে তাওহীদ হৃদয় সেই আনন্দের উপলক্ষ সৃষ্টি করে দিলেন। দেশীয় খেলোয়াড়দের এমন তাণ্ডব দেখবেন বলেই তো দর্শকরা অধীর আগ্রহে থাকেন অপেক্ষমান। হৃদয় দর্শকদের হৃদয়ের সেই তৃষ্ণাই যেন মেটালেন।
গেল আসরে তাওহীদ হৃদয় ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবে এবারে ঠিক তেমন ঝলকের দেখা মেলেনি হৃদয়ের কাছ থেকে। মাঝারি মানের ইনিংস অবশ্য খেলেছেন তিনি। তবে তা ছিল না মোটেও যথেষ্ট। অন্তত দর্শকদের চাহিদা তাতে মেটেনা। সম্ভবত হৃদয়ের নিজেরও সেসবে নেই কোন স্বস্তি।
নিজের সেরাটা যেন জমিয়েই রেখেছিলেন। নিজের দিনে তাওহীদ হৃদয় একাই ঘুরিয়ে দিতে পারেন ম্যাচ। তিনিই বনে যেতে পারেন জয়ের নায়ক। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো এক সেঞ্চুরি করে সে প্রমাণই রাখলেন হৃদয়। দলের জয়ের কারিগরেই পরিণত হয়েছেন তিনি। বিপিএলের ইতিহাসে ষষ্ঠ বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে অনবদ্য এক সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়।
ঢাকার দেওয়া ১৭৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিপাকে। মাত্র ২৩ রানেই নেই তিন উইকেট। ব্যাস! ঢাকার সাফল্য ততটুকুই। এরপরই হোম অব ক্রিকেটের বুকে হয়ে গেল ‘দ্য তাওহীদ হৃদয় শো’। উইকেটের চারিদিকে শটের মেলা। বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারির বৃষ্টি বইয়ে দিলেন। ঢাকার বোলারদের শাসন কর্তা হয়ে উঠলেন তিনি।
ঢাকার মসনদে বসে রীতিমত শোষণই করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার শরিফুল ইসলামও এদিন কোন পাত্তা পায়নি হৃদয়ের সামনে। সবাই যেন অসহায় দর্শক হয়ে তাকিয়ে থেকে অপলক দৃষ্টিতে। এমন মুগ্ধতা যে বাংলাদেশী ব্যাটারদের কাছ থেকে সচারচর দেখতে পাওয়া যায় না। এমন এক ইনিংসের অপেক্ষায় তো তীর্থের কাকের মত চেয়ে থাকতে হয়।
মরুর বুকে এক গভীর পানির কুয়ো হয়েই তাওহীদ হৃদয় বাঁচালেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। তিনি সেই সাথে নিজের সীমিত ওভার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান। এই ইনিংস খেলার পথে ৭টা ছক্কা মেরেছেন, সেই সাথে ৮টি চারও এসেছে তার ব্যাট থেকে। প্রায় ১৯৫ স্ট্রাইকরেটের এই ইনিংসটি খেলে তিনি শেষ অবধি ছিলেন অপরাজিত। দলের জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন তরুণ এই ক্রিকেটার।
প্রথমে ৮৪ রানের পার্টনারশীপ গড়েন ব্রুক গেস্টের সাথে। এরপর জাকের আলি অনিকের সাথে গড়েন ২৪ বলে ৪২ রানের জুটি। যেখানে তিনি একাই করেন ১৪ বলে ৩৬ রান। শেষ অবধি ৫৭ বলে ১০৮ রান করে অপরাজিত থাকেন তাওহীদ হৃদয়। একেবারে টি-টোয়েন্টি সুলভ অসাধারণ এক ইনিংস খেলে এক ফালি চওড়া হাসি নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন হৃদয়।