‘সময়টা দ্রুত চলে গেল’

২০২০ সালে এই দিনটায় পচেফস্ট্রুমে ইতিহাস করেছিলো বাংলাদেশ যুব দল। ভারতকে হারিয়ে জিতেছিলো অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। সেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়, অধিনায়ক আকবর আলী সেদিন হয়ে উঠেছিলেন ক্যাপ্টেন কুল।

তারপর ঠিক এক বছর কেটে গেছে। অনেক কিছু এই সময়ে দেখে ফেলেছেন আকবর আলীরা। কেমন গেলো এই একটা বছর? কেমন ছিলো সেই বিশ্বকাপ জয়? কী এই আকবরদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা? এসব নিয়ে আকবরের মুখোমুখি হয়েছিলো খেলা ৭১।

সবকিছু নিয়েই কথা বলেছেন সে সময়ের যুব দলের অধিনায়ক আকবর আলী।

আজকের দিনটার কথা কী মনে ছিলো, আকবর?

আগে মনে ছিলো, তা না। এমনিতে ঘটনাটা তো মনে থাকেই। কিন্তু আজই যে বর্ষপূর্তি, সেটা মনে ছিলো না। সকালে উঠে অনেকের টেক্সট, ম্যাসেজ পেয়েছি। তখন মনে পড়েছে।

এক বছর তো কেটে গেলো। এখন পেছন ফিরে দেখলে কী মনে হয়, কত বড় অর্জন ছিলো আমাদের যুব বিশ্বকাপ জয়?

অনেক বড় ব্যাপার। এখনও পেছন ফিরে দেখলে আমার একই রকম আনন্দ হয়। একটা বিশ্বকাপ জয় তো শুধু ভালো খেলা না, ভাগ্যেরও ব্যাপার। সবকিছু আমাদের ঠিকমতো ছিলো। আমরা সবাই এই ট্রফির জন্য লম্বা সময় ধরে পরিশ্রম করেছি। সেটার ফল এসেছিলো এই দিনে।

বিশ্বকাপ জেতার পর আপনি অনেকটা রাতারাতি তারকা হয়ে গিয়েছিলেন। আপনাকে বলা হচ্ছিলো-ক্যাপ্টেন কুল। এই তারকা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা উপভোগ করেছেন?

না, দেখেন, এটা আসলে আপনারা বা দর্শকরা বলেছে। আমি নিজে কখনোই আমার একার কোনো কৃতিত্ব দেখি না। এটা পুরোটাই আমাদের দলের কৃতিত্ব। যারা খেলেছে, যারা খেলেনি; সবাই এই সাফল্যের পেছনে অবদান রেখেছে। শুধু খেলোয়াড়দের কথা বলবো না, আমাদের যে সাপোর্ট স্ট্যাফরা ছিলেন, কোচরা বা কর্মকর্তারা; সবাই অনেকদিন ধরে পরিশ্রম করেছেন। এটা আসলে এটা টীম ওয়ার্ক ছিলো। ফলে একক কারো এই বিশ্বকাপ জয়ের জন্য তারকা হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

কেমন গেলো এই এক বছর?

মনে হয় খুব দ্রুত চলে গেলো। মনে হচ্ছে সেদিনের ঘটনা। এতো তাড়াতাড়ি এক বছর পার হয়ে যাবে, এটা বিশ্বাস হচ্ছে না।

বিশ্বকাপ জেতার পর আপনাদের নিয়ে বিসিবির অনেক পরিকল্পনা ছিলো। সেগুলো কতোটা বাস্তবায়িত হলো?

আসলে যা যা পরিকল্পনা ছিলো, তা তো অসাধারণ। কিন্তু করোনার কারণে তো সব বাস্তব হলো না। আসলে এই মহামারীর ওপর তো কারো হাত নেই। তারপরও আমাদের বোর্ড কিন্তু দারুনভাবে আমাদের দেখাশোনা করছেন। এখন এইচপিতে রেখে আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেখেন, করোনার পর অনেক বড় বড় দেশও জাতীয় দলের বাইরে কোনো অ্যাক্টিভিটি শুরু করতে পারেনি। সেখানে আমাদের এজ লেভেল টিম নিয়ে বা আমাদের নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটা অনেক বড় পাওয়া। আমরা এখন এইচপিতে আছি। এখানে সর্বোচ্চ মানের ট্রেনিং পাচ্ছি আমরা। সামনে নিশ্চয়ই আরো খেলারও সুযোগ আসবে।

মাঝে আপনারা কয়েক জন তো প্রেসিডেন্টস কাপ এবং বঙ্গবন্ধু কাপ খেলারও সুযোগ পেলেন। কেমন ছিলো অভিজ্ঞতা?

দুর্দান্ত। ওখানে আমরা সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। প্রায় দেড় মাস বঙ্গবন্ধু কাপ উপলক্ষে দেশের শীর্ষ সব খেলোয়াড়ের সাথে ছিলাম আমরা। আসলে একসাথে থাকলে দেখে এবং কথা বলে যত কিছু শেখা যায়, তা আপনি ট্রেনিং করেও শিখতে পারবেন না। আমাদের তরুণদের জন্য এটা খুব বড় একটা ব্যাপার ছিলো।

আপনারা তো কাছ থেকে সেরা ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স, লাইফস্টাইল দেখলেন। যুব ক্রিকেটার বা যুব ক্রিকেটের সাথে এই টপ লেভেলের পার্থক্য কী? আদৌ কী কোনো পার্থক্য আছে?

অবশ্যই আছে। প্রধান পার্থক্য অভিজ্ঞতায়। অভিজ্ঞতা আসলে খেলোয়াড়দের অনেক বদলে দেয়। ওনারা যেসব পরিস্থিতি দেখেছেন, আমরা এখনও তা দেখিনি। আরেকটা পার্থক্য আমার মনে হয়েছে, গেম টেম্পারমেন্ট। সিনিয়রদের টেম্পারামেন্ট অনেক বেশী। সেটাও আমাদের অভ্যাস করতে হবে।

আকবর, আপনারা যখন বিশ্বকাপ জিতলেন, তখনই লোকেরা আপনাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। মানুষ মনে করে, আপনারা জাতীয় দলে এসে সিনিয়র পর্যায়েও বড় কিছু জিতে আনবেন। তো এখন আপনারা নিজেদের কোথায় দেখেন?

দেখেন, স্বপ্ন তো আমরা সবাই দেখি। সিনিয়র পর্যায়ে ভালো কিছু করবো, কিছু জিতবো; এই স্বপ্ন আছেই। কিন্তু সেটা নিয়ে পড়ে থাকলে তো হবে না। এটা রাতারাতি হবেও না। ইনফ্যাক্ট আমাদের বিশ্বকাপ জয় নিয়েও সবসময় ভাবতে থাকলে চলবে না। আমাদের সামনে তাকাতে হবে। যখন যার সামনে যে খেলা আসবে, সেটাতে ফোকাস করতে হবে। জাতীয় দল হোক বা অন্য কোনো দল; যেখানেই আমরা সুযোগ পাবো, সেখানেই যেনো আমরা সেরাটা দিতে পারি, এটাই ভাবনা হওয়া উচিৎ। নিজের কাজটায় ফোকাস রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। সেটা করতে পারলে রিওয়ার্ড একসময় আসবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link