ভুলে ভরা জীবনের অনুশোচনা

সারা বিশ্ব জুড়ে লড়াই চলছে বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে।

ফুটবল, ক্রিকেট সবধরণের খেলার মাঠে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের অবস্থান বেশ স্পষ্ট। কিন্তু হঠাৎ করেই ইংলিশ ক্রিকেটে নতুন এক হতাশারুপে হাজির হয়েছে এই বর্ণবাদ ইস্যু। ইংলিশ ক্রিকেটে খোদ ক্রিকেটারদেরই শিকার হতে হয়েছে বর্ণবাদের এমন অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে সমালোচনা চলছে পুরো বিশ্বক্রিকেটে।

আগুনে ঘি ঢালার মতো ঘটনায় রুপ নিয়েছে বর্ণবাদের সাথে যুক্ত থাকার অভিযুক্ত সাবেক ইংলিশ ব্যাটার অ্যালেক্স হেলসের এক ছবি। সেই ছবিতে অ্যালেক্স হেলসের কালো মেক-আপ যেন বর্ণবাদের অভিযোগের এই আগুনে কাজ করছে জ্বালানি রুপে।

হেলসের সাবেক কাউন্টি সতীর্থ আজিম রফিক তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া বর্ণবাদ এবং অখেলোয়াড়সূল্ভ আচরণ নিয়ে মুখ খোলার বেশ বড় এক ধাক্কা লেগেছে ইংলিশ ক্রিকেটে। নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ, হচ্ছে ঘটনার তদন্ত। এরই মধ্যে প্রায় এক দশক আগে অ্যালেক্স হেলসের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতেই যেন অভিযোগ আরো ঘণিভূত হচ্ছে, ঘটনার সত্যতা প্রমাণের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

তবে উক্ত সেই ছবি নিয়ে অ্যালেক্স হেলস দিয়েছেন ভিন্ন তথ্য কিংবা দিয়েছেন সাফাই। নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট উক্ত ছবি সম্পর্কে হেলস জানান তাঁর পছন্দের র‍্যাপ গায়ক তুপাক শাকুর সেজে তিনি গিয়েছিলেন একটি নববর্ষ উদযাপনের পার্টিতে।

তিনি আরো লেখেন, ‘পার্টির থিম ছিল মিউজিশিয়ান এবং তুপাক আমার সবসময়ের প্রিয় একজন গায়ক। তাই আমি তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাঁর মতো সেঁজে সেই পার্টিতে গিয়েছিলাম। আমি এখন বুঝতে পারছি বিষয়টা ভীষণরকম অসম্মানজনক। আমি আমার যাবতীয় সব কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী।’

হেলস তাঁর সেই ইন্সটাগ্রাম পোষ্টে দু:খ প্রকাশ করছেন। একজন বিশ বছরের যুবক হিসেবে তিনি বেশ কিছু ভুল করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে তাঁকে এখন অবধি দিতে হচ্ছে সেই সকল ঘটনার মাশুল। তিনি লেখেন, ‘ঘটনাটা আমার ঘটানো এক বোকামি এবং বেপরোয়া ঘটনা, তাই আমি ক্ষমা চাই। ক্ষমা চাই ক্লাবের প্রতি তাঁরা আমার এই ঘটোনার জন্যে এক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন।’

তিনি নিজের জীবনের দ্বিতীয় দশকে নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া এবং ভুল দাবি করে আরো লেখেন, ‘আমি  মনে করি আমার জীবনের বিশের ঘরটা ছিল ভুলে ঠাসা। সে সময়ে করা বেপরোয়া ভুলের মাশুল আমাকে দিতে হয়েছে। আমি আমার পরিবার থেকে শুরু ক্লাব কিংবা সতীর্থদের মনক্ষুন্ন করেছি।’

হেলসের করা সেই ইন্সটাগ্রাম পোষ্ট থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে তিনি তাঁর করা ভুলগুলো বুঝতে পেরেছেন। তাছাড়া তিনি চেষ্টা করছেন নিজেকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে তৈরি করতে। পাশাপাশি ক্রিকেটার হিসেবেও ভাল করার প্রত্যাশা ব্যত্যয় করেছেন।

নিজেকে শুধরে নেবার বিষয়ে হেলস লেখেন, ‘যুবক বয়সের শুরুর দিকে করা বেশকিছু সিদ্ধান্তের অনুশোচনা আমার সারাজীবন থেকে যাবে। গত বেশকিছু বছর স্পটলাইটের বাইরে থাকায় নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছি, ভাল ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে গড়ার পাশাপাশি।’

বর্ণবাদের এই ঘনমেঘ সরে যাক ক্রীড়াঙ্গন থেকে। যেকোন খেলার নান্দনিকত সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ুক পুরো বিশ্ব জুড়ে। ধর্ম, বর্ণের এই যে অবান্তর বৈষম্যের ইতি ঘটুক, পৃথিবীটা হোক শুধু মানুষের!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link