সুরঙ্গ শেষের আলো

সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৯ সালে, জায়গা হয়নি সে বছরের বিশ্বকাপেও। এরপর নানা বিতর্কে জাতীয় দলে একপ্রকার ব্রাত্য হয়ে পড়েন অ্যালেক্স হেলস। হেলসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ধরে নিয়েছিল অনেকে। তবে তেত্রিশ বছর বয়সী এই মারকুটে ব্যাটার আরেকটা সুযোগ পেয়েই গেলেন, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তাঁকে নিয়েই উড়াল দিবে ইংলিশরা।

মূলত জনি বেয়ারস্টোর বদলি হিসেবেই জাতীয় দলে ফিরেছেন অ্যালেক্স হেলস। গলফ খেলতে গিয়ে হাঁটুর চোটে পড়েছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। লম্বা সময়ের জন্য মাঠে বাইরে চলে যাওয়ায় তাঁর পরিবর্তে হেলসকে বিবেচনা করেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগ মাতিয়ে বেড়ানো হেলস এবার নিজের প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখতে উন্মুখ হয়ে আছেন।

তবে প্রশ্ন উঠেছে অ্যালেক্স হেলস এবং অধিনায়ক বেন স্টোকসের সম্পর্ক নিয়ে। একটা সময় ভাল বন্ধু হলেও ২০১৭ সালে এই দুই ইংলিশ ক্রিকেটারের সম্পর্কে সৃষ্টি হয় টানাপোড়েন। ব্রিস্টলের এক নাইট ক্লাবে দুইজনেই ঝড়িয়ে পড়েন বিবাদে। এরপর তাদের নিষেধাজ্ঞা এবং জরিমানার মত শাস্তিও দিয়েছিল ক্রিকেট ডিসিপ্লিনারি কমিশন।

সাম্প্রতিক সময়ের সাক্ষাৎকারে অ্যালেক্স হেলসকে নিয়ে কথা বলার সময় বেন স্টোকস ছিলেন বেশ সাবধানি। অবশ্য ইংলিশ অধিনায়ক বলেন যে, আমাদের দুইজনের লক্ষ্য একই, আর সেটা হলো বিশ্বকাপ জেতা।

একইভাবে ইংল্যান্ডের সাদা বলের কোচ ম্যাথু মটও জানিয়ে দিয়েছেন যে শিষ্যদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে তিনি মোটেই চিন্তিত নন। অ্যালেক্স হেলসের সঙ্গে আগে কখনোই কাজ করেননি ম্যাথু মট, যদিও এই টপ অর্ডার ব্যাটারের সাথে দারুণ কিছু সময় কাটাতে অপেক্ষায় আছেন তিনি।

ম্যাথু মট বলেন, ‘তাদের হয়তো খুব ভাল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই, কিন্তু এটা এমন বিশেষ কিছু নয়। আমি নিশ্চিত, অফিসে এমন অনেক সহকর্মী আছে যাদের সাথে আপনার ততটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই; তবে আপনাদের লক্ষ্য একই থাকলে, আপনি তাদের সাথে সহজেই যেকোনো কাজ করতে পারবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বেন স্টোকস তাঁর ইচ্ছের কথা জানিয়েছে। সে বিশ্বকাপ জিততে চায়, এবং আমি মনে করি অ্যালেক্সও সেটাই চায়। শুধু তারা নয়, দলের বাকিদেরও লক্ষ্য একই। আর তাই আমরা সেরা খেলোয়াড়দের বাছাই করেছি। যদি তারা একে অপরের ভাল বন্ধু হয়ে উঠে তাহলে সেটা অবশ্যই ভাল; কিন্তু যদি না হয়, তাহলেও সমস্যা নেই। কেননা যতক্ষণ তাদের সবার উদ্দেশ্য একই থাকবে, ততক্ষণ তারা একসাথে এগিয়ে যেতে পারবে, এভাবেই একটা দলীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।’

অ্যালেক্স হেলসের জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া অবশ্য এতটা সহজ ছিল না। জনি বেয়ারস্টোর ইনজুরির পর তাকে নেয়া হবে কি না সেটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। জস বাটলার অনেক সিনিয়র খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলেছেন এই ব্যাপারে, একই ভাবে ম্যাথু মটও সাবেক কোচ ট্রেভর বেলিসের সাথে যোগাযোগ করেছেন।

শেষ পর্যন্ত প্রায় সবাই অ্যালেক্স হেলসের প্রতি ইতিবাচক ধারণা প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে হেলসের একসময়ের কোচ ট্রেভর বেলিস জানিয়েছেন তাঁর উন্নতির কথা। এরপরই দলে ডাকা হয়েছে অ্যালেক্স হেলসকে।

অ্যালেক্স হেলস নিজেও অবশ্য আর অতীতের দিকে তাকাতে চান না। আর তাই হয়তো স্টোকসের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে তেমন কিছুই বলেননি তিনি। আপাতত এই ডানহাতি শুধুই ভবিষ্যত নিয়েই ভাবছেন। তিনবছরের অনাকাঙ্ক্ষিত নির্বাসন শেষে এবার ঘুরে দাঁড়াতে চান এই বিধ্বংসী ওপেনার।

মাঠের বাইরে বড্ড বিশৃঙ্খল অ্যালেক্স হেলস, এবার বাইশ গজে শৃঙ্খলহীন ব্যাটার হেলসকে দেখা যাবে হয়তো। নেভিল কার্ডাসের ক্রিকেটে পতন আছে, আছে উত্থানও; হেলসের পতন তো দেখা হয়েছে, এবার উত্থান দেখবো তো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link