অশ্বিনের অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা

অশ্বিন পারলেন না।

চট্টগ্রামে মেহেদী হাসান মিরাজের সামনে হাতছানি ছিলো। তিনি পারেননি। ক দিনের মধ্যে রেকর্ডটার খুব কাছে গিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনিও পারলেন না ম্যাচে সেঞ্চুরি করার সাথে ১০ উইকেট নিতে। না পারলেও আরেকবার সেঞ্চুরির সাথে ৫ উইকেট নিয়ে অশ্বিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাকে স্রেফ বোলার হিসেবে ভেবে যাওয়াটা অন্যায়।

এক টেস্টে ৫ উইকেট ও শতকের রেকর্ডটায় সবার উপরে রয়েছে ইয়ান বোথামের নাম। ১০২ টেস্টে ৫ বার এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার। এখন পর্যন্ত এই রেকর্ডের তালিকায় নাম তুলেছেন মোট ৩৩ জন খেলোয়াড়। যার মধ্যে বাংলাদেশের সোহাগ গাজী ও সাকিব আল হাসান রয়েছেন। তবে সবশেষ এই তালিকায় নাম তুলেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

এই নিয়ে তৃতীয়বার এই কাজ করলেন অশ্বিন। তিনি বোথামের পরেই নাম লিখিয়ে ফেললেন।

‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ -কথাটা যেনো অশ্বিনের কথা ভেবেই বলা হয়। রঙিন পোশাকে দলে জায়গা মেলে না বললেই চলে। সাদা পোশাকে নিয়মিত হলেও প্রায়শই রবীন্দ্র জাদেজার জন্য ছাড়তে হয় নিজের জায়গা। তবে একাদশে যখনই সুযোগ পান তখনি নিজের স্পিন ভেলকি দিয়ে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করেছেন এই অফস্পিনার।

রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাটিং পারদর্শিতার কারণে দেশের বাইরে সাদা পোশাকে বেশ কিছু ম্যাচেই সাইড বেঞ্চে কাটাতে হয় অশ্বিনকে। এক স্পিনারের কোটায় বেশিরভাগ সময়ই অশ্বিন থেকে বেশি প্রাধান্য পান রবীন্দ্র জাদেজা। কারণ, জাদেজা ভালো ব্যাট করতে পারেন।

তবে অশ্বিনও যে ব্যাট হাতে কম যান না সেটারই প্রতিফলন দেখালেন সবশেষ অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতক করা ২য় টেস্টে। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনি টেস্ট বাঁচাতে হানুমা বিহারীর সাথে দাঁতে দাঁত চিপে স্টার্ক-কামিন্স-হ্যাজেলউডদের বোলিং তোপ সহ্য করে ক্রিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন অশ্বিন। অজিদের শক্তিশালী পেস ত্রয়োর গতিতে বার বার চোট পেলেও দূর্গের মতো মাথা উঁচু করে দাপটের সাথে সেই টেস্টে ড্র করেছিলেন তিনি।

ব্যাট হাতে সফল হতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন ব্যাটিং কোচের কাছে। কিভাবে তার ব্যাটিং স্কিল বাড়ানো যায় সেসব নিয়ে যখনি সুযোগ পেতেন কাজ করতেন। আর সেই কাজের ফলই ফেলেন চলতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে।

চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টে লজ্জাজনক হারের পর ২য় টেস্টে একই ভেন্যুতে সফরকারীদের ব্যাট-বল হাতে নাকানিচুবানি খাইয়ে ম্যাচ জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন অশ্বিন। প্রথম ইনিংসে শতক সাথে পাঁচ উইকেট! রেকর্ড বইয়ে নিজের নাম তুলার সাথে সাথে দলকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দিকে নিয়ে গেলেন আরো এক ধাপ এগিয়ে।

এখন পর্যন্ত টেস্টে ২৯ বার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন এই ভারতীয় স্পিনার। বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে তার উপরে আছেন শুধুমাত্র ইংলিশ পেসার জেমস এন্ডারসন (৩০ বার)। হয়তো এ তালিকাতেও নিজেকে দেখতে চাইবেন সবার উপরে। টেস্টে একই ম্যাচে শতক ও পাঁচ উইকেট নেওয়া তৃতীয় ভারতীয় বোলার হলেন অশ্বিন। ইংলিশ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম এই রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচ বার নিজের দখলে নিয়েছেন, ঠিক তার পরই অবস্থান করছেন অশ্বিন। ৭২ টেস্টে মোট ৩ বার একই টেস্টে পাঁচ উইকেট ও শতকের রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন তিনি।

তবে আক্ষেপটাও ঝেড়েছেন তিনি বেশ। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি থেকে ভারত ক্রিকেটকে অনেক কিছু শেখার আছে আখ্যা দিয়েন বলেন, ‘ওরা টেস্ট সিরিজের আগে ক্যামেরন গ্রিনকে নিয়ে এমনভাবে প্রচার করলো যেনো কত বড় মাপের একজন খেলবেন! কিন্তু পুরো সিরিজে এক অর্ধশতক ছাড়া পাননি বল হাতে কোনো উইকেটও। তবুও অজি ক্রিকেট বোর্ড তার পাশে থেকেছে তাকে সময় দিয়েছে। তবে আমাদের দেশে সেটা নেই, আমরা সামর্থ্য না দেখেই আগে থেকেই অনেকটা ঠিক করে রাখি কে পারবে কে পারবে না!’

আজকের এই জায়গায় আসতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে অশ্বিনকে। সেই কথা বলছিলেন এই অলরাউন্ডার, ‘আমি ২০১৬ সালে সবশেষ ক্যারিবিয়ান সফরে শতক করি। এরপর ব্যাট হাতে রান না পাওয়ায় অনেকেই আমার ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। কিন্তু তারা জানেন না যে ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাথোরের পরামর্শে আমি লকডাউনেও বেশ অনুশীলন করেছি। নিজের ব্যাটিং স্কিল নিয়ে কাজ করেছি, সুইপ সহ বিভিন্ন শট আয়ত্ত করেছি ভালোভাবে’।

ব্যাট হাতে অনেকটা দূর্বল বিবেচনায় যিনি কিনা ঘরের বাইরে বেশিরভাগ সময়ই থাকতেন উপেক্ষিত! তিনিই কিনা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের সিরিজ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন। নিঃসন্দেহে বর্তমান বিশ্বের সেরা স্পিনারদের একজন তিনি, তবে একজন পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে মেল ধরতে না পারলেও ব্যাট হাতে তিনি যে দৃষ্টান্তের ছাপ এটে দিচ্ছেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link