‘একটা বিষয় আমার খানিক নজর কাড়ে, আমি কাছে যাই আর দেখি রোলের পর রোল টাকা।’ – অ্যান্ড্রু সায়মন্ডস অস্ট্রেলিয়ার একজন কিংবদন্তি খেলোয়াড়। তিনি আরও একজন খেলোয়াড়ের সাথের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করতে গিয়ে এমন কথাই বলেছেন। মানুষটি আর কেউই নয় ‘দ্য স্পিন উইজার্ড’ শেন ওয়ার্ন। সদ্যই যিনি এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পারি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।
থ্যাইল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছিলেন অজি কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন। জায়গটা তাঁর বেশ পছন্দের এক জায়গা। প্রায়শই ছুটি কাটাতে তিনি সেখানে যেতেন। ঠিক তেমনি করেই তিনি গিয়েছিলেন ২০২২ এর মার্চের শুরুর দিকে গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। কিন্তু এ ছুটি ছিল একেবারের শেষ আনন্দভ্রমণ এই ধরায়। তিনি গোটা দুনিয়াকে কাঁদিয়ে তিনি চলে গেলেন এমন এক স্থানে যেখান থেকেই চাইলেই আর ফিরে আসা যায় না।
তিনিও আর আসবেন না। তবে লক্ষ্য-কোটি স্মৃতি তিনি রেখে গেলেন। এক সমুদ্র স্মৃতির একটি অংশ রোমন্থন করছিলেন অ্যান্ড্রু সায়মন্ডস। ওয়ার্নের সাবেক সতীর্থ এবং অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের একজন কিংবদন্তি দীর্ঘকাল সময় কাটিয়েছেন জাতীয় দলের সাথে। তাছাড়া ওয়ার্নের সাথেও বেশ একটা সখ্যতা ছিল তাঁর। ওয়ার্নের বিদায় দাগ কেটে গেছে সায়মন্ডসের হৃদয়েও। ওয়ার্নের সাথে কাটানো সময় যেন স্মৃতির অতল থেকে বারেবারে উঁকি দেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক সিরিজের এক টেস্ট ম্যাচের ঘটনা। অস্ট্রেলিয়া দল তখনও হোটেলে। হঠাৎই সায়মন্ডস এক বিশাল অংকের অর্থ আবিষ্কার করেন ওয়ার্নের হোটেল রুমে। সায়মন্ডস কিঞ্চিৎ আন্দাজ করতে পেরে এগিয়ে যান ওয়ার্নের ব্যাগের দিকে। গিয়ে দেখেন বিপুল পরিমাণ অর্থ, গোল করে রাখা। এ নিয়ে সায়মন্ডস বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটা টেস্ট ম্যাচ খেলছিলাম, খুব সম্ভবত বক্সিং ডে টেস্ট।’
‘খুব সম্ভবত টেস্টের তৃতীয় দিন আমি তাঁর রুমে ঢুকি। তাঁর সামগ্রী সব দিকবেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। সে খুব সাধারণত অনেকগুলো মোজা রাখত এবং সে সাথে বেশ কয়েক জোড়া বুটও রাখত। তাঁর সে মোজাগুলোর মাঝে একটা ব্যাগভর্তি ১০০ ডলারের নোট মুড়িয়ে রাখা ছিল।’
নিজের কৌতুহলকে সামলে রাখতে না পেরে সায়মন্ডস কোনরকম দ্বিধা ছাড়াই প্রশ্ন করে বসেন সায়মন্ডস। ‘আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ওয়ার্নি ঘটনাটা কি এখানের? সে মৃদু একটা হাসি দিয়ে জানানো যে সে আগের দিন হাতে ক্যাসিনোতে এই অর্থ জিতেছে। এরপর সে আমাকে এটাও বলে যে অর্থই হচ্ছে আসল রাজা।’
যদিও ওয়ার্ন সায়মন্ডসকে বলেছিল যে সেখানে খুব সামন্যই অর্থ ছিল। কিন্তু সায়মন্ডস বলেন, ‘সেখানে কম করে হলেও প্রায় ৪০ হাজার ডলার ছিল।’ এছাড়া সায়মন্ডস আরও বলেন, ‘সে (ওয়ার্ন) যে ঠিক কতটা সৌভাগ্যবান ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’
এ থেকে আন্দাজ করে নেওয়া যায় ওয়ার্ন কোন কিছুর ধার ধারতেন না। তিনি নিজের মত করেই জীবন-যাপন করতেন। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের মধ্যখানে রাতে তিনি ক্যাসিনোতে সময়ও কাটাতে দু’বার ভাবেনই। তিনি যে সবখানেই সেরা সেটার প্রমাণ তিনি ক্যাসিনো বোর্ডে যেমন দিয়েছেন ঠিক তেমনি বারংবার দিয়েছেন বাইশ গজে।
বাইশ গজে উইকেট শিকারে তিনি যেমন পটু ছিলেন এবং ভাগ্যও তাঁর সহায় হয়েছে ঠিক তেমনি ক্যাসিনো বোর্ডেও ভাগ্য ছিল তাঁর সাথে। আর ভেলকি কি করে দেখাতে হয় তা তো তিনি আগে থেকেই জানতেন। মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক স্মরণ সভা আয়োজিত হয়। সেখানেই ওয়ার্নকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন অ্যান্ড্রু সায়মন্ডস।