২০০৭ সালে প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও সেটিই ছিল প্রথম কীর্তি। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৫ টি আসর পেরিয়ে গেলেও হ্যাটট্রিকের আর দেখা মেলেনি। অথচ গত ২ বছরে হওয়া ২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটলো ৫ টি! এর সর্বশেষ কীর্তিটি আজ গড়লেন জশুয়া লিটল। আরব আমিরাতের স্পিনার কার্তিক মেরিয়াপ্পনের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করলেন আয়ারল্যান্ডের বাঁহাতি এ পেসার।
অ্যাডিলেড ওভালে আজ সুপার টুয়েলভে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ১৯তম ওভারে হ্যাটট্রিক তুলে নেন লিটল। সে ওভারে তাঁর প্রথম শিকার ছিলেন ৩৫ বলে ৬১ রান নিয়ে দুর্দান্ত খেলতে থাকা নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ বানিয়ে কেন উইলিয়ামসনকে আউট করেন তিনি।
এরপরের বলেই উইকেটে আসা নতুন ব্যাটার জিমি নিশামকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন লিটল। নিশাম রিভিউ নিয়েছিলেন অবশ্য। তবে তাতে আর আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়নি। অর্থাৎ হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে যান জশুয়া লিটল। আর সে ওভারের চতুর্থ বলেও মিচেল স্যান্টনারকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন লিটল। আম্পায়ারও তর্জনী তুলে জানিয়ে দেন, স্যান্টনার আউট।
তবে লিটলের প্রথম হ্যাটট্রিকের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাঁধা হয়ে দাড়ায় স্যান্টনারের রিভিউ। কিন্তু এ রিভিউটিও বিফলে কিউইদের। আর খানিকটা বিলম্ব হলেও হ্যাটট্রিকের উচ্ছ্বাসে ভেসে যান জশুয়া লিটল।
লিটলের হ্যাটট্রিকের দিনে আয়ারল্যান্ডের দলগত একটা রেকর্ডও হয়েছে। আয়ারল্যান্ডই একমাত্র দল যাদের পৃথক দুজন বোলারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক রয়েছে। লিটলের আগে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেছিলেন আয়ারল্যান্ডের আরেক পেসার কার্টিস ক্যাম্ফার।
কিউইদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করার দিনে লিটলের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে ব্যক্তিগত আরেকটি রেকর্ড। এক পঞ্জিকাবর্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা এখন তাঁর। জশুয়া লিটল এ বছরে উইকেট নিয়েছেন ৩৯ টি। এর আগে ২০২১ সালে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এক বছরে নিয়েছিলেন ৩৬ টি উইকেট।
জশুয়া লিটলের আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি (২০০৭), নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের কার্টিস ক্যাম্ফার (২০২১), দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (২০২১), ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা (২০২১) হ্যাটট্রিক করেছিলেন। আর এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন কার্তিক মেরিয়াপ্পান। তাই ষষ্ঠ বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়লেন জশুয়া লিটল। আর সবমিলিয়ে লিটলের এ হ্যাটট্রিকটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ৪০ তম হ্যাটট্রিক।
তবে লিটলের হ্যাটট্রিকের দিনে দল হিসেবে আয়ারল্যান্ড বেশ বিবর্ণই ছিল। কিউইদের বিপক্ষে তাঁরা এ ম্যাচটি হেরেছে ৩৫ রানে। এ দিনে প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ১৮৫ রানের স্কোর করতে সক্ষম হয়। আর সে লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৫০ এই আঁটকে যায় আইরিশরা। যদিও এ ম্যাচজয়ে কার্যত তাদের কোনো লাভ হতো না।
তবে অস্ট্রেলিয়ার সেমিযাত্রার হিসেব নিকেশের জন্য এ ম্যচটির দিকে নজর ছিল অনেকেরই। তবে অস্ট্রেলিয়া সমর্থকদের সে নজরটা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ আর হয় নি। এখন সেমিফাইনালে তাদের যেতে হলে নিজেদের শেষ ম্যাচ তো জিততেই হবে। তাঁর সাথে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের শেষ ম্যাচটিতে ইংলিশদের হারও কামনা করতে হবে। তবেই মিলবে অজিদের সেমিফাইনালের টিকিট।