বড় আশা নিয়েই লিওনেল মেসির ‘দশ নম্বর’ জার্সি তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিল বার্সেলোনা। বাঁ প্রান্তে দুর্দান্ত ড্রিবলিং আর বক্সের বাইরে থেকে চকিত শটে গোল করা, তাঁর মাঝে যেন সেই পুরনো মেসিকেই ফিরে ফিরে দেখছিল সবাই। কিন্তু দুই মৌসুম বাদেই বদলে গেছে সে দৃশ্য, নিজেকে হারিয়ে ফিরছেন আনসু ফাতি। ইনজুরির কারণে বড় একটা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন, জাভির অধীনে সুযোগও পাচ্ছেন না তেমন। আসন্ন গ্রীষ্মে তাই ফাতির ক্লাব ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁর বাবা বোরি ফাতি।
ফাতির ক্লাব ছাড়া নিয়ে গুঞ্জন ডালপালা মেলছিল সেই জানুয়ারি থেকেই। এবারে বোরি ফাতির বক্তব্য সেই গুঞ্জনকেই আরো জোরালো করে তুলেছে। এক স্প্যানিশ রেডিওতে তিনি বলেন, ‘যদি ব্যাপারটা আমার উপরে থাকতো, তাহলে আমি নিশ্চিতভাবেই তাঁকে ক্লাব বদল করতে বলতাম। কিন্তু ফাতি বার্সাতেই থাকতে চায়। তাঁর বাবা হিসেবে আমি বিষয়টা নিয়ে ভীষণ রাগান্বিত। আমি মাতেউ আলেমানির সাথে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন ক্লাব এখনো ফাতিকে তাঁদের ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কোচ হিসেবে নই, আমি ফাতির বাবা হিসেবে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করি। আমি ভুলও হতে পারি, কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে সে আপনার সেরা তারকাদের একজন। সে স্বয়ং লিওনেল মেসির দশ নম্বর জার্সির ভার বইবার যোগ্য। অথচ তাঁকে মাত্র এক মিনিট, দুই মিনিট করে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আমি বলছি না তাঁকে প্রতি ম্যাচেই শুরুর একাদশে রাখতে হবে কারণ বার্সার বাকি আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রাও বিশ্বের সেরাদের কাতারেই থাকবেন। কিন্তু আপনি স্পেন এবং বার্সেলোনার ভবিষ্যৎ আনসু ফাতির ব্যাপারে কথা বলছেন যে কিনা লা মাসিয়া থেকে উঠে এসেছে। তাঁকে সুযোগ না দিলে আপনি কাকে সুযোগ দেবেন?’
তবে তিনি জানান ফাতি দলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েই মোটেই হতাশ নন। তিনি বলেন, ‘আনসু সম্পূর্ণ ঠিক আছে। সে কিভাবে হতাশাগ্রস্থ থাকবে যখন তাঁর চারপাশে দারুণ একটা পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব আছে। সে ট্রেনিং থেকে ফিরে বেশ খুশিই থাকে। আর আনসু যখন নির্ভার থাকে, তখন তাঁকে রুখবার সাধ্য বিশ্বের কারো নেই।’
অথচ গিনিতে জন্ম নেয়া ফাতির বার্সা ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। লা মাসিয়া থেকে সরাসরি মূল দলে জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন, সেটাও রিজার্ভ দলে কোনো ম্যাচ না খেলেই। তাঁর প্রতিভা এবং সামর্থ্য নিয়ে সংশয় ছিল না কারোরই। ২০২০ সালে তৎকালীন কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে যখন তাঁকে মাঠে নামান, তখন সবেমাত্র ১৬ বছরের কিশোর ফাতি।
এরপর সময় যত গড়িয়েছে, রেকর্ড বুক ভাংচুর হয়েছে। ক্লাবের ইতিহাসে তাঁর চেয়ে কম বয়সে একাদশে জায়গা পায়নি কেউই, লা লিগা ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার পাশাপাশি অ্যাসিস্টদাতার নামটাও আনসু ফাতি। প্রথম মৌসুমেই ১৫ ম্যাচে আট করেন এই তারকা। স্পেন জাতীয় দল থেকেও ডাক আসে, ২০২০ সালে তো বার্সা প্রেসিডেন্ট জোসেফ বার্তোমেউ ঘোষণা দেন ফাতি আজীবন বার্সাতেই খেলবেন। মেসির যোগ্য উত্তরসূরী বোধহয় একেই বলে!
কিন্তু মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখতেও সময় লাগেনি। হাঁটুর ইনজুরিতে বারবার ছুরিকাঁচির তলায় যেতে হয়েছে, মাঠের বাইরে থেকে হতাশায় মুষয়ে পড়েছেন বার্সার ক্রমাগত পতনে। গত ছয় মাসে একই হাঁটুতে তিনবার অপারেশন করাতে হয়েছে তাঁকে, তিন মাসের রিকোভারি গিয়ে ঠেকেছে এগারো মাসে।
ইনজুরি থেকে ফিরলেও কোচ জাভি তাঁকে খুব একটা সুযোগ দিচ্ছেন না, এই মৌসুমে মোটে ৯২৪ মিনিট মাঠে ছিলেন এই তারকা। পারফরম্যান্সও ফাতির বিপক্ষেই কথা বলছে, এই তারকা গোল পেয়েছেন মোটে তিনটি। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনগুলোতে বার্সাতে ফাতি নিজের পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেন কিনা। অন্যথায় ন্যূ ক্যাম্পে তাঁর দিন ফুরোনোর পথে!