কাতার বিশ্বকাপে দু:স্বপ্নের মতো শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। সাড়ে তিন বছরে কোনো ম্যাচ না হারা দলটাই কিনা হেরে বসেছিল সৌদি আরবের বিপক্ষে। এক ম্যাচে হেরেই গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়ের শংকা জেগেছিল মেসিদের মনে। কিন্তু এরপর সময় যত গড়িয়েছে, আর্জেন্টিনা পুরনো রূপে ফিরেছে। দারুণ পারফর্ম করে মেক্সিকো এবং পোল্যান্ডকে হারানোর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শেষ আটের টিকিট কেটেছে তাঁরা।
তবে বিশ্বকাপে চার ম্যাচ খেলে ফেললেও এখনো পর্যন্ত বড় কোনো দলের মুখোমুখি হতে হয়নি মেসিদের। শেষ আটে তাঁরা মুখোমুখি হবে ফন গালের নেদারল্যান্ডসের। দুই আসর মিলিইয়েও নির্ধারিত সময়ে যাদেরকে হারাতে পারেনি কোনো দলই। এবারের বিশ্বকাপেও এখনো পর্যন্ত অপরাজিত কমলা সৈনিকরা। নিজেদের রক্ষণ সামলে প্রতি আক্রমণে উঠতে তাঁদের জুড়ি মেলা ভার। সুতরাং শেষ চারে উঠার লড়াইটা মোটেই সহজ হবে না আর্জেন্টাইনদের জন্য।
নিজের শেষ বিশ্বকাপটা শিরোপা জিতেই রাঙিয়ে তুলতে চান লিওনেল মেসি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই দলের গোলের মূল উৎস তিনিই। বিশ্বকাপের নকআউটে গোল না পাওয়ার দুর্নামও ঘুচিয়ে দিয়েছেন আগের ম্যাচেই। শেষ ষোলোতে অজিদের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের হাজারতম ম্যাচ খেলতে নেমে দারুণ এক গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই।
সেই গোলে ছাপিয়ে গিয়েছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনাকেও, তাঁর আট গোলকে ছাপিয়ে মেসির গোল নয়টি। বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোল অবশ্য গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার, দশটি। মেসি চাইবেন ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচেই বাতিস্তুতাকে ছাপিয়ে যেতে। এছাড়াও অজিদের বিপক্ষে গোলের পর মেসির আন্তর্জাতিক গোলের সংখ্যা ৯৪য়ি। খানিকটা ধীর গতিতে হলেও মেসি বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছেন শত গোলের মাইলফলক স্পর্শ করতে।
অভিজ্ঞ মেসির পাশাপাশি এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের ভরসার নাম তরুণ জুলিয়ান আলভারেজ। এবারের মৌসুমেই বোকা জুনিয়র্স ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে নাম লিখিয়েছেন তিনি। ক্লাবের পাশাপাশি জাতীয় দলে শুরুতে একাদশে জায়গা না পেলেও লাউটারো মার্টিনেজের বাজে ফর্মের সুবাদে তাঁকে সুযোগ দিয়েছেন কোচ স্কালোনি।
সুযোগ পেয়েই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন আলভারেজ, পোল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া দুই ম্যাচেই পেয়েছেন গোলের দেখা। এমনকি শেষ ম্যাচে ৭২ মিনিটে মাঠ থেকে উঠে যাবার সময় দর্শকরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছেন এই তরুণকে।
আক্রমণভাগে যেমন মেসি এবং আলভারেজ গোল করছেন, তেমনি রক্ষণভাগ সামলানোর দায়িত্ব বর্তেছে লিসান্দ্রো মার্টিনেজের উপর। আলভারেজের মতো তাঁরও শুরুতে একাদশে জায়গা পাবার কথা ছিল না। কিন্তু ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর ইনজুরির কারণে খানিকটা বাধ্য হয়েই তাঁকে একাদশে রাখেন লিওনেল স্কালোনি।
এবারের মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেয়া লিসান্দ্রোও হতাশ করেননি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনটি ভিন্ন পজিশনে তাঁকে খেলিয়েছেন স্কালোনি। বেঞ্চে থেকে ম্যাচ শুরু করলেও দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন তিনি। মার্কাস আকুনা উঠে গেলে তাঁকে লেফটব্যাক পজিশনে খেলান স্কালোনি। এরপর শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়া চাপ বাড়ালে সেন্টারব্যাক পজিশনে সরিয়ে আনেন কোচ।
দুই ভূমিকাতেই সমান সফল তিনি, শেষদিকে তো ম্যাচ বাঁচানো এক ট্যাকল করে নিশ্চিত গোল বঞ্চিত করেছেন অস্ট্রেলিয়াকে। অনেকে তাঁর সেই ট্যাকেলকে তুলনা করছে নেদারল্যান্ডসের আর্জেন রোবেনের বিপক্ষে মাসচেরানোর সেই বিখ্যাত ট্যাকলের সাথে। কোয়ার্টার ফাইনালেও আর্জেন্টিনার রক্ষণ সামলানোর দায়িত্ব থাকবে আয়াক্সের কসাইয়ের কাঁধেই।
আট বছর বাদে আরো একবার সেমিফাইনালে উঠার লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে ডাচরাও মুখিয়ে থাকবে ২০১৪ বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নিতে। মেসিদের জন্য তাই শেষ চারে উঠার লড়াইটা মোটেও সহজ হবে না।