ক্রিকেটের রঙিন এক উৎসবের নাম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। পুরো ক্রিকেটের ভবিষ্যতই পাল্টে দিয়েছে টি-টোয়েন্টি এই আসর। এখানে বিভিন্ন দেশের আলোচিত সব পারফরমাররা অংশ নেন বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে।
অনেক ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন একটি বারের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এই মহোৎসবে অংশ নেওয়া। সেটা টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেটারদের জন্য যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেটারদের জন্যও। সহযোগী দেশের গুটিকয়েক ক্রিকেটারের সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছে।
তাঁদের নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন। তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
- সন্দীপ লামিছানে (নেপাল)
দিল্লী ক্যাপিটালস দল ২০১৮ সালের আইপিএল নিলামে সবাইকে চমকে দিয়েই সন্দীপ লামিছানেকে দলে নিয়েছিল। সেবারের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো দূরের কথা, কোনো প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচই খেলেননি তিনি। তবে, সবাইকে মুগ্ধ করে আইপিএলের মত মেগা ইভেন্টে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই দারুণ বোলিং করেছেন এই লেগ স্পিনার। এখন অবধি নয় ম্যাচ খেলে পেয়েছেন সাত উইকেট। সেটা অপ্রত্যাশিতই ছিল না, কারণ কিশোর বয়সেই তাঁর প্রতিভার গুনমুগ্ধ ছিলেন স্বয়ং অজি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক।
এখন তিনি কেবল আইপিএল নয়, খেলেন অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, তাতেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন জোরেসোরেই। তিনি ক্রিকেট বিশ্বে শুধু নেপালেরই নন, সহযোগী দেশগুলোরও বড় বিজ্ঞাপন।
- রায়ান টেন ডেসকাট (নেদারল্যান্ডস)
তিনি সহযোগী ক্রিকেটের ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি। দক্ষিণ আফ্রিকান বংশদ্ভুত এই ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন নেদারল্যান্ডসের হয়ে। ইংলিশ কাউন্টিতে অধিনায়কত্ব করেছেন এসেক্সের, সেখানে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও জিতেছেন। তবে, তিনি জনপ্রিয়তা পান কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল খেলার মধ্য দিয়ে।
২০১১ সালে তিনি কেকেআর দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। শাহরুখ খানদের মালিকানাধীন দলটি এরপর যে দু’বার আসরের শিরোপা জিতেছে দু’বারই দলে ছিলেন রায়ান টেন ডেসকাট। তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য খুবই কার্যকর। কেকেআরের হয়ে ২৯ টি ম্যাচ খেলে ১৪০-এর মত স্ট্রাইক রেট নিয়ে করেছেন ৩২৬ রান। সাথে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে নিয়েছেন দু’টি উইকেট। মাঠে তাঁর ফিল্ডিংও দুর্দান্ত।
- তন্ময় মিশ্র (কেনিয়া)
তিনি মূলত ভারতেরই মানুষ। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন কেনিয়ার হয়ে। ২০০৬ সালে কেনিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর।
ডেকান চার্জার্স দল প্রথম তাঁকে দলে নেয়। এরপর তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু দলে যোগ। আরসিবির হয়ে তিনি আইপিএলে নিজের একমাত্র ম্যাচটা খেলেন। কেনিয়ার হয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ তিনি খেলেন ২০১৩ সালে। তন্ময় অবশ্য এখন ভারতেই থাকেন। ত্রিপুরা দলের হয়ে রঞ্জিও খেলেন।
- চিরাগ সুরি (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রিকেটার হলেও জন্ম ভারতে। তিনি দিল্লীর ছেলে। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য সহযোগী ক্রিকেটে তাঁর খ্যাতি আছে। ইউরোপিয়ান লিগুগুলোতেও বিস্তর রান করেছেন।
তারই জের ধরে ২০১৭ সালে গুজরাট লায়ন্স দল তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল। দল পেলেও অবশ্য তাঁর অভিষেক হয়নি। তবে, নেটে তিনি কোচদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন বলে শোনা যায়। আইপিএলে অভিষেক না হলেও তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে নিয়মিত ঝড় তুলে যাচ্ছেন।
- আলী খান (যুক্তরাষ্ট্র)
২০২০ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে নেয় আমেরিকান দলে খেলা পাকিস্তানি বংশদ্ভুত আলী খানকে। হ্যারি গার্নির বিকল্প হিসেবে টুর্নামেন্টের মাঝপথে এই ডানহাতি পেসারকে দলে নেয় কেকেআর। যদিও আলী খান একটা ম্যাচও খেলার সুযোগ পাননি আইপিএলে।
এই তালিকায় আসতে পারতো আরো কয়েকটা নাম। এর মধ্যে আফগানিস্তান থেকে আছেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী ও লেগ স্পিনার রশিদ খান। আইপিএলে ২০১৭ সালে যখন তাঁদের অভিষেক, আফগানিস্তান তখন আইসিসির সহযোগী সদস্য। তবে, সেই বছরই দলটি টেস্ট মর্যাদা লাভ করে।
এখানে নেদারল্যান্ডসের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা পেসার ডার্ক ন্যানেস ও অলরাউন্ডার ভ্যান ডার মারউইয়ের কথাও বলা যায়। তবে, তারা অবশ্য দু’টি ভিন্ন দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন। ন্যানেস পরে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি পরেন, আর মারউই নেদারল্যান্ডসের আগেই খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে।