ইঞ্জিনিয়ার হতে গিয়ে ক্রিকেটার

কখনো খেলোয়াড় হবেন, এমন চিন্তাধারার ছিটেফোঁটাও ছিল না তাঁর মাঝে। তবুও ভাগ্যের যাত্রাপথে তাঁর জীবনের পুরোটা জুড়েই এখন ক্রিকেট।

স্বপ্ন তাঁর হবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর দাদীকে সে কথাই বলেছিলেন। খেলাধুলা থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরত্বে ছিলেন তিনি। তবে ভাগ্য। অধিকাংশ সময়ে বড্ড নির্মম হয়। তবে সুপ্রসন্ন ছিল অক্ষর প্যাটেলের। ‘মেঘ না চাইতেই জল’। কখনো খেলোয়াড় হবেন, এমন চিন্তাধারার ছিটেফোঁটাও ছিল না তাঁর মাঝে। তবুও ভাগ্যের যাত্রাপথে তাঁর জীবনের পুরোটা জুড়েই এখন ক্রিকেট।

১৯৯৪ সালের জানুয়ারি গুজরাটের আনন্দনগরে জন্ম অক্ষর প্যাটেলের। ছেলেবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি ছিল ভীষণ আগ্রহ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, হবেন তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সে পথ অনুসরণ করেই দিন অতিবাহিত করছিলেন অক্ষর। স্কুলে পড়ালেখা, এইতো পাড়ার ছেলেদের সাথে টুকটাক খেলাধুলা আর দাদীর সাথে জম্পেশ আড্ডায় ভালই দিন কেটে যাচ্ছিল অক্ষরের।

জীবন কখনোই সোজা এক রাস্তা ধরে অগ্রসর হয় না। হঠাৎ আসা সব মোড় জীবনকে বদলে দেয়। একেবারেই কক্ষচ্যুত করে নতুন এক কক্ষে নিক্ষেপ করে। তেমনটাই হয়েছিল অক্ষরের সাথে। ক্রিকেট হবে ক্যারিয়ার এমন কোন ভাবনা তাঁর মধ্যে ছিল না কখনোই। তবে হঠাৎ করেই তাঁদের স্কুল দলে খেলোয়াড় সংকটের দেখা দেয়। তখন তাঁরই এক সহপাঠী রীতিমত জোর করেই অক্ষরকে খেলতে বলে স্কুল দলের হয়ে। ব্যাস! সেটাই ছিল অক্ষরের জীবনের মোড়।

এরপর আর কখনোই পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে সেজন্যে অবশ্য তিনি তাঁর সহপাঠী অপেক্ষা, তাঁর দাদী এবং বাবাকে দোষারোপ করতে পারেন। তবে এখন নিশ্চয়ই দোষারোপ করবার বিন্দুমাত্র কোন কারণ নেই। অনন্য উজ্জ্বল এক মহাকাশ সমান ইতিহাসে তিনিও তো এক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এখন নিশ্চয়ই আর আক্ষেপ হয়না ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজের জীবন গড়তে না পারায়।

সেবার স্কুল টুর্নামেন্টে তিনি বেশ দারুণ পারফর্ম করেন। এরপরই মূলত অক্ষরের স্কুলের বন্ধুরা তাঁর বাবাকে জানায় অক্ষরের সম্ভাবনার কথা। বাবা বুঝলেন। আর চটজলদি অক্ষরকে ভর্তি করিয়ে দিলেন ক্রিকেট কোচিংয়ে। অক্ষরের ছেলেবেলা থেকেই সবচেয়ে কাছের বন্ধু তাঁর দাদী। আর সে দাদী স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন একদিন তাঁর নাতি খেলবে ভারতের নীল জার্সি গায়ে।

তবে অক্ষরের খুব একটা মন বসত না ক্রিকেট অনুশীলনে। তিনি প্রায়শই ফাঁকি দিতেন। এ কথা জেনে যান তাঁর বাবা। ধরে বেঁধে নিয়ে গিয়েছিলেন আবার অনুশীলনে। এরপর দাদীর স্বপ্ন পূরণে নিজেকে বিলীন করে দেন অক্ষর। তবে অক্ষরের এই মনে ইচ্ছের বিরুদ্ধে করা কাজটার ফল যে একেবারেই খারাপ হয়েছে তা বলার কিন্তু সুযোগ নেই।

বয়সভিত্তিক দলের বিভিন্ন গণ্ডী পেরিয়ে তিনি ক্রমশ নিজের প্রতিভার আলো ছড়াতে থাকেন। অনূর্ধ্ব ১৯ গুজরাট দলে থাকাকালীন সময়ে তিনি পায়ের গুরুতর ইনজুরিতে পড়েছিলেন। তবে সেখান থেকে নিজেকে সামলেছেন, সুস্থ হয়ে ক্রিকেট মাঠে ফিরেছেন। নিজের জায়গা তৈরি করে নেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। মূলত একজন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই তিনি নজর কাড়েন।

ভারতের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট থেকে শুরু করে আইপিএল বিভিন্ন মঞ্চে তিনি নিজের প্রতিভার প্রমাণ রাখেন। ভারতের জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়াটা ভীষণ কঠিন। কাঁটায় মোড়ানো পথে হেঁটে তিনি পৌঁছে যান নীল জার্সির দ্বারপ্রান্তে। তবে আফসোস তিনি যখন সে জার্সি গায়ে মাঠে নামলেন ততক্ষণে তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধুর প্রয়াণ হয়ে গেছে। তাঁর দাদী সে সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না।

তবে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ক্রমশ উপরের দিকে উঠছেন অক্ষর প্যাটেল। নিশ্চয়ই তিনি এসেছেন জাতীয় দলে যুবরাজ সিংয়ের মত করে একজন ধ্রুবতারা হয়েই রয়ে যেতে। যখন থেকে ক্রিকেটকে আপন করেছেন তখন থেকেই যুবরাজ তাঁর আদর্শ। তাঁর মত করেই বা-হাতে ব্যাট-বলের কারিশমা দেখান অক্ষর। তবে একজন যুবরাজ হতে যে বড্ড দেরি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...