ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ এমনিতে একটু স্বস্তিতেই থাকে। অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় এই ওয়ানডেতেই সাফল্যের হার একটু বেশি। তারপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতবে এমনটা খেলার আগে নিশ্চিত করে বলা যায় নি। বিশেষ করে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে যেভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ, তাতে শঙ্কা জেগেছিল পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাট নিয়েও।
কিন্তু অধিনায়ক তামিমের নেতৃত্বে মাঠে নামতেই বদলে গিয়েছে টিম টাইগার্স। শঙ্কার মেঘ সরিয়ে আকাশে ভাসিয়েছে বিজয়ের কেতন। দুই ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের হেসেখেলে উড়িয়ে দিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ওয়ানডে সিরিজে নিয়মিত একাদশের তিনজন ছাড়াই খেলেছে বাংলাদেশ। তারপরও যেভাবে উইন্ডিজকে লজ্জায় ডুবিয়েছে সেটি দেখে খুশি একটু বাড়তেই পারে ভক্ত-সমর্থকদের।
খুশিটা বেড়েছে তামিম আর রাসেল ডোমিঙ্গোরও। এর পাশাপাশি বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। তাই দুইজনই শেষ ওয়ানডেতে চাচ্ছেন বেঞ্চের শক্তি পরখ করে নিতে। কেননা উইন্ডিজ সিরিজ আইসিসির সুপার লিগের আওতা মুক্ত তাই ম্যাচ হারলেও খুব একটা কিছু আসবে যাবে না।
এর আগে লম্বা সময় ধরে সুপার লিগের সিরিজ খেলতে থাকায় সম্ভাব্য সেরা একাদশ নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, বলাই যায় যেকোনো ধরনের এক্সপেরিমেন্টের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ক্যারিবীয় দ্বীপে।
সামনেই ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ওয়ানডে ফরম্যাটে যেভাবে এগুচ্ছে বাংলাদেশ তাতে স্বপ্নটাও ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। আর বড় কিছু অর্জন করতে হলে প্রয়োজন বেস্ট কম্বিনেশন, আর বেঞ্চের শক্তি। তাই বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অনেক খেলোয়াড়কেই দেখার বাকি আছে। ব্যাকআপ তৈরি রাখা কিংবা অন্যদের সুযোগ দেয়ার জন্য হলেও সামনের সময়গুলোতে সুবিধামত পরীক্ষা নিরীক্ষা করাটা আবশ্যক।
কথাগুলো জানেন আফ্রিকান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, জানেন তামিমও। তাই দুইজনই একমত তৃতীয় ওয়ানডেতে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে। এমনকি তামিম ইকবাল অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও একাদশে নিজের জায়গা ছাড়তেও রাজি বলেই জানিয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সামনে যেভাবে নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন এই দুইজন তাতে ধরে নেয়া যায় আগামীকালের ম্যাচে বেশকিছু নিয়মিত খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেয়া হতে পারে।
আর এমনটা হলে সবার আগে সুযোগ পেতে যাচ্ছেন এনামুল হক বিজয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে অতিমানবীয় পারফরম্যান্স দেখিয়ে লম্বা বিরতি কাটানোর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ডিপিএল দিয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি খেলা হলেও ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে নামা হয়নি এই উইকেট কিপার ব্যাটারের। শেষ ওয়ানডেতে তাই দেখা যেতে পারে এই ডানহাতিকে।
আর এনামুলকে জায়গা করে দিতে বিশ্রামে যেতে পারেন তামিম ইকবাল কিংবা লিটন দাসের যেকোনো একজন। কারন আরেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান শান্তকে তৃতীয় ম্যাচেও পরখ করে দেখার পক্ষে বেশ ইতিবাচক টিম ম্যানেজম্যান্ট। এছাড়া একাদশে বাড়তি ব্যাটসম্যান না থাকায় আর ব্যাটিং লাইনআপে আর কোন পরিবর্তন দেখার সুযোগ নেই।
তবে বোলিংয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা একটু বেশি। কন্ডিশনের কারনে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বেঞ্চে ছিলেন তাসকিন আহমেদ। তাকে হয়তো ফিরিয়ে আনা হবে আবার। কিছুটা অফ ফর্মে থাকা মুস্তাফিজুরকে সেক্ষেত্রে দেখা যাবে না শেষ ওয়ানডেতে। তাছাড়া আরেক পেসার ইবাদত হোসেন গত তিন বছর ধরেই লাল বলের নিয়মিত মুখ। তাকেও হয়তো আরেক পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গায় বাজিয়ে দেখতে পারেন নির্বাচকরা।
অন্যদিকে সদ্য অভিষিক্ত নাসুম আহমেদ আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তাইজুল ইসলামকে হয়তো তার জায়গায় একবার পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। যদিও মাত্র দুই ওয়ানডে খেলা নাসুম এখনই পরীক্ষার অংশ বানাবে কি না সেটি ভাবনার বিষয়। কেননা সাকিব আল হাসান ফিরলে এমনিতেই হয়তো একাদশের বাইরে যেতে হবে তাকে।
নিয়ম রক্ষার শেষ ম্যাচে এ রকম কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয়তো করবে বাংলাদেশ দল। তাতে সফলতা কিংবা ব্যর্থতা যেকোনো কিছু মিলতে পারে। দুইটি দারুণ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিশ্চয় ড্রেসিংরুমেও ছড়িয়ে গিয়েছে, এবার সেই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজেদের সক্ষমতা দেখানোর সময় আসতে যাচ্ছে এনামুল, ইবাদতদের সামনে।