হুট করেই বড় হয়ে যায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট; ছোট্ট শিশুর মত ধীরে ধীরে হাঁটতে শিখেছিল, এরপর এগিয়েছে পরিণত হওয়ার দিকে। আর বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুরুর দিকে যারা আঙুল ধরে চলতে শিখিয়েছিলেন তাঁরাই দেশের প্রথম দিককার কিংবদন্তি।
আর সেসব কিংবদন্তিদের নিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ লিজেন্ডস। রোড সেফটি লিজেন্ডস টুর্নামেন্ট দিয়ে প্রথমবার লাইম লাইটে এসেছিল দলটি। আর এবার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে খেলার সুযোগ পেয়েছে; আমেরিকান আটলান্টা ফায়ার ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ১৯ জুলাই স্থানীয় সময় চারটায় মাঠে নামবে আকরাম খান, আমিনুল ইসলামদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশ লিজেন্ডস।
আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম ছাড়াও এক ঝাঁক পরিচিত মুখ রয়েছে দলটিতে। বর্তমান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, সাবেক নির্বাচক ফারুক হোসেন, ভয়েজ অব বাংলাদেশ খ্যাত আতহার আলী খান, বিসিবি কর্তা তানভির হোসেন টিটু, খালেদ মাসুদ পাইলট সবচেয়ে বিখ্যাত।
এছাড়া জাভেদ ওমর, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, তাপস বৈশ্য, সানোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ শরিফ, এনামুল হক, সোহরাওয়ার্দী শুভদের মত প্রাক্তন ক্রিকেটাররা রয়েছেন প্রকাশিত স্কোয়াডে।
বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলাদের মধ্যে বাম-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু, ফরহাদ হোসেন খেলবেন আটলান্টা ফায়ার ক্লাবের বিপক্ষে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা দলটি আটলান্টা পারামভিরস ক্রিকেট মাঠে স্থানীয় ক্লাবটির মুখোমুখি হবে।
অর্থ কিংবা খ্যাতি; বর্তমান ক্রিকেটাররা যতটুকু পাচ্ছেন সেটার সিকিভাগও ১৯৯০ বা ২০০০ সালের দিকে ছিল না। তবু ক্রিকেট খেলা বন্ধ করেননি বুলবুল, পাইলটরা। ব্যাট বলের প্রতি ভালবাসা থেকে খেলেছেন; আর তাঁরা সেই দু:সময়ে হাল ধরেছেন বলেই বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের পায়ের নিচে শক্ত একটা জায়গা পেয়েছে টাইগাররা।
হ্যাঁ, পারফরম্যান্স হিসেব করলে তখনকারই অধিকাংশ খেলোয়াড়কেই ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা যায়। জাভেদ ওমর শুধু ডট খেলতেন কিংবা মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর ক্যারিয়ারে কোন ছক্কা হাঁকানোর ঘটনা নেই – এমন কথা বলে হাসাহাসিও করা যায়। কিন্তু এরাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তি; দেশে ক্রিকেট কাঠামো গড়ে ওঠার পিছনে এদের অবদান সবচেয়ে বেশি।
এখনকার পরিচয়ে যেমনই করুক না কেন; নান্নু, সুজন অথবা আথার আলী খান এরা সবাই নিজেদের সময়ে সেরা তারকা ছিলেন। বাংলাদেশিদের মাঝে প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার জিতেছিলেন ধারাভাষ্যকার আতহার আলী।
খালেদ মাহমুদ সুজন তো ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন, আলোচিত মুলতান টেস্টেও দলকে প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর মিনহাজুল আবেদীন নান্নু তো বিশ্ব মঞ্চে লাল সবুজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিয়ান।
সে সময় জয়ের আশা খেলা দেখতেন এমন দর্শক বোধহয় একজনও নেই। একটা চার, একটা উইকেট উদযাপন করতেই খেলা দেখতেন তারা; আর কালেভদ্রে একটা জয় পেলে ঈদ আনন্দ শুরু হয়ে যেত। সে যুগের সমর্থকেরা তো বটেই, তরুণদের একটা অংশও শ্রদ্ধাশীল সেই শুরুর দিককার ক্রিকেটারদের প্রতি।
তাদের জন্য ক্রিকেটের ওল্ড হিরোদের মাঠে দেখতে পাওয়া নি:সন্দেহে দারুণ কিছু। আমেরিকান ক্লাবটির আশেপাশে থাকা বাংলাদেশিরা তাই নিশ্চিতভাবেই সেদিন মাঠে থাকতে চাইবেন; এদেশে থাকা ভক্ত-সমর্থকেরাও বাংলাদেশ লেজেন্ডসকে বাইশ গজে সরাসরি দেখার অপেক্ষায় থাকবে।