পিছল হাতের পরিণতি

প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর আজ প্রয়োজন ছিলো ব্যাটিং দৃঢ়তার। অধিনায়ক তামিম ইকবাল দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের সুর বেঁধে দেওয়ার পর সময়ের দাবি মিটিয়ে মোহাম্মদ মিঠুন খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। কিন্তু এই দুজনের ব্যাটিং বিরত্বের পরেও দৃশ্যপটের কোন পরিবর্তন হয়নি।

বড় পুঁজি নিয়ে বোলাররা দারুণ শুরু করলেও ক্যাচ মিসের খেসারত দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এই জয়ের ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা।

হ্যাগলি ওভালের উইকেটে আর্দ্রতা ও ঘাসের ছোঁয়া না থাকার সুযোগ নিয়ে স্বাগতিকদের ২৭২ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। মেহেদী হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তোপে ৫৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে কিউইরা।

প্রথমে মার্টিন গাপটিলকে(২০) ফিরিয়ে দেওয়ার পর হেনরি নিকোলস(১৩) ও উইল ইয়ংয়ের(১) উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান। কিন্তু এরপরই কনওয়ে ও লাথামের ব্যাটে ঘুড়ে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। এই দুজন চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ১১৩ রান। ৭২ রান করে কনওয়ে রান আউটের ফাঁদে পড়লে ভাঙ্গে এই জুটি।

কনওয়ে বিদায় নেওয়ার পরই ক্যাচ মিসের মহড়া দেয় বাংলাদেশ। ৩৬ থেকে ৩৮ এই তিন ওভারে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ক্যাচ মিস করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। প্রথমে তাসকিনের করা ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পিছনে জিমি নিশামের সহজ ক্যাচ ছাড়েন মুশফিকুর রহিম।

এরপর ৩৭তম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া লাথামের ক্যাচ ছাড়েন মেহেদী হাসান। ক্যাচ মিস ও ফিল্ডিং মিসে ঐ তিন ওভারে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে ২৯ রান। মূলত ঐ সময়ই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১১০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন লাথাম। এছাড়া জেমি নিশামের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান।

বাংলাদেশি বোলারদের ভিতর ২ টি করে উইকেট শিকার করেছেন মেহেদী হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ম্যাট হেনরির শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন লিটন দাস। প্রথম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে দারুণ এক ফ্লিকে চার মেরে ইনিংস শুরু করলেও লিটনের বিদায়ের পর সাবধানে খেলা শুরু করেন তামিম।

আগের ম্যাচে শূন্য রানে ফিরে যাওয়া সৌম্য সরকারও উইকেটে এসে শুরুতে ধুঁকতে থাকেন। এক পর্যায়ে ৭ ওভারে মাত্র ১৪ রান ছিলো বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। এরপরই খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন সৌম্য সরকার। উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে আত্ববিশ্বাসী এক শটে ছয় মেরে রানের গতি বাড়ানোর চেস্টা করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

কিন্তু বেশী আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি সৌম্য। ৪৬ বলে ৩২ রান করার পর কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনারকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে যান সৌম্য। তামিম সৌম্যর ৮১ রানের জুটি ভাঙ্গার পর উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম।

তৃতীয় উইকেট জুটিতেও সাবলীল ব্যাট করতে থাকেন মুশফিক-তামিম। এর মাঝেই ৮১ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। হাফসেঞ্চুরি করার পর তামিম যখন দ্রুত রান বাড়ানোর চেস্টা করছিলেন তখনই মুশফিকের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান তামিম। সেঞ্চুরি মিসের হতাশা নিয়ে তামিম বিদায় নেন ১০৮ বলে ৭৮ রান করে।

তামিমের বিদায়ের পর উইকেটে এসে মোহাম্মদ মিঠুন শুরু থেকেই নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেললেও অপর প্রান্তে অস্বস্তি নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন মুশফিকুর রহিম। ৫৯ বলে ৩৪ রানের ধীরগতির ইনিংস খেলে মুশফিক বিদায় নিলে ভাঙ্গে দুজনের ৫১ রানের জুটি।

দলের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা মুশফিক বিদায় নিলেও পথ হারায়নি বাংলাদেশের ইনিংস। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে মাত্র ৪৫ বলে ৬৩ রান যোগ করেন মিঠুন। মাহমুদউল্লাহ সময়ের দাবি মেটাতে না পেরে ১৮ বলে ১৬ রান করে আউট হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে লড়াই চালিয়ে যান মিঠুন।

মিঠুনের অপরাজিত ৫৭ বলে ৭৩ রানের দারুণ ইনিংসে ভর করেই ২৭২ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এছাড়া মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ব্যাট থেকে আসে ৭ রান করে। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে মিচেল স্যান্টনার ২টি এবং বোল্ট, জেমিসন ও হেনরি ১টি করে উইকেট শিকার করেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশঃ ২৭১/৬ (ওভার:৫০; তামিম- ৭৮, লিটন- ০, সৌম্য- ৩২, মুশফিক- ৩৪, মিঠুন- ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ- ১৬, মেহেদী- ৭, সাইফউদ্দিন- ৭*) (হেনরি- ১০-৩-৪৮-১, স্যান্টনার- ১০-০-৫১-২, জেমিসন- ১০-২-৩৬-১, বোল্ট- ১০-০-৪৯-১)

নিউজিল্যান্ডঃ ২৭৫/৫ (ওভার:৪৮.২; গাপটিল- ২০, নিকোলস- ১৩, কনওয়ে- ৭২, ইয়ং- ১, ল্যাথাম- ১১০*, নিশাম- ৩০, মিচেল- ১২*) (মুস্তাফিজ- ৮.৩-০-৬২-২, মেহেদী- ১০-১-৪২-২)

ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link