কেনো এমন হয়!

সোজা কথায় এই গ্যাপটা তৈরী হয়েছে সাকিব আল হাসান না থাকায়। হ্যা, একজন সাকিব না থাকায় আমরা শেষ দিকে মিঠুনকে ঠিকমতো সঙ্গ দিতে পারলাম না। আবার একজন সাকিব না থাকায় বোলিংয়ে আমরা কোটা পূরণ করতে গিয়ে চোখে শর্ষে ফুল দেখলাম।

কেনো আমরা কাছে গিয়ে ডুবে যাই?

কখনো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা স্ট্যাম্পের আগে থেকে বল সংগ্রহ করতে গিয়ে রান আউট মিস করি। কখনো ভারতের বিপক্ষে জয়ের আগে উল্লাস করে ম্যাচ হারি। কখনো স্রেফ ২টি রান করতে না পেরে একটা ট্রফি মিস করি।

এসব কী কেবলই ভাগ্য? নাকি কোনো বিজ্ঞানও আছে?

একটা কথা বলা হয় যে, অনুশীলন মানুষকে পারফেক্ট করে তোলে। বেশী বেশী অনুশীলনের ফলে খেলোয়াড় অভ্যস্থ হয়ে ওঠেন গুরুত্বপূর্ণ সেই মুহুর্তের জন্য। অনুশীলন তাকে শিখিয়ে দেয়, ওখানে কীভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজটা করতে হবে।

বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে মুশফিকুর রহিমের চেয়ে বেশী অনুশীলন তো আর কেউ করেন না। তাহলে তিনি কেনো বারবার এরকম সময়ে এরকম ভুল করে ফেলেন? এর পেছনে আবার বিজ্ঞানটা কী?

একটা বিজ্ঞান আছে।

মুশফিকুর রহিম চাপ নিতে পারার লোক নন। তিনি সামান্য চাপ দেখলেও আবেগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। স্বচ্ছন্দের কাজটা করতে না পারলে তার চোখ আর বাঁধ মানে না। এরকম একটা লোকের পক্ষে অধিনায়কত্ব, উইকেট রক্ষনের মত কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন। অধিনায়কত্ব পর্বটা শেষ হয়েছে। টেস্টে উইকেট রক্ষনও হারিয়েছেন। এখন তাকে আসলে সীমিত ওভারের কিপিংটাও ছাড়তে হবে।

মুশফিকের এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে সেরা। অবশ্যই সেরা। ব্যাটসম্যান হিসেবেই আরও কয়েকটা বছর বাংলাদেশ দলে খেলে যাওয়ার সামর্থ তার আছে। ফলে কিপিং ছাড়লে তিনি দলে জায়গা হারাতে পারেন, এই ধারণা তার ভেতর থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আর তাহলেই এই সমস্যাটার সমাধাণ হবে।

কিন্তু আমরা কেবলই মুশফিক নিয়ে কথা বলছি কেনো? বাকী সব কী আজ ঠিক ছিলো?

কেনো মোহাম্মদ মিঠুনকে বল করতে হলো?

আমি জানি, মিঠুন ক্রিকেটের জন্য জীবন দিয়ে দিতে রাজী আছেন। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় টিম ম্যান মিঠুন। তাকে যদি বলা হয় যে, তিনি মাঠে রক্ত ঢেলে দিলে দল জিতবে; মিঠুন রক্তই ঢেলে দেবেন। এ নিয়ে প্রশ্নই করবেন না। ফলে কিপার-ব্যাটসম্যান মিঠুনকে বল করতে বললে তিনি আপত্তি তো করবেন না। কিন্তু আমার কথা হলো, এই দরকারটা হলো কেনো?

কারণ, পছন্দের কন্ডিশনে সৌম্যর ওপর ভরসা করা গেলো না। কারণ স্পিনাররা সুবিধা পেতে থাকলেও রিয়াদ নিশ্চয়ই রাজী হলেন না বল করতে। আর সাইফউদ্দিন কোনো এক বিচিত্র কারণে নখদন্তহীন বোলিং করলেন।

এই বিষয়গুলোর সুরাহা হওয়া খুব জরুরী। পঞ্চম বোলার ব্যর্থ হলে ষষ্ঠ বোলার কে হতে পারেন, সেটা নিয়ে অবশ্যই আগে থেকে প্রস্তুতি থাকতে হবে ম্যানেজমেন্টের। তামিম যদি আগে থেকে নিজের বিকল্প সম্পর্কে নাই জানেন, তিনি এরকম দিনে কী করে ৫০ ওভার শেষ করবেন!

হ্যা, সাদা চোখে মনে হচ্ছে যে, ক্যাচ মিসের ফলেই হেরে গেছি আমরা। ক্যাচ মিসের ফলেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয়টা পাওয়া হলো না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শেষ দশ ওভারের বোলিং নিয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনাই ছিলো না। লাথাম যখন হঠাৎই রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন, আমরা সবাই খেই হারিয়ে ফেললাম।

এর বিটুইন দ্য লাইন পড়তে পারছেন?

সোজা কথায় এই গ্যাপটা তৈরী হয়েছে সাকিব আল হাসান না থাকায়। হ্যা, একজন সাকিব না থাকায় আমরা শেষ দিকে মিঠুনকে ঠিকমতো সঙ্গ দিতে পারলাম না। আবার একজন সাকিব না থাকায় বোলিংয়ে আমরা কোটা পূরণ করতে গিয়ে চোখে শর্ষে ফুল দেখলাম।

এটা ২০২১ সাল। সাকিব আর কতদিন থাকবেন? সাকিবের বয়স কত হলো?

এখনও আমরা সাকিব ছাড়া একটা কদমও চলতে পারছি না। এরপর কী হবে? কীভাবে চলবে এই সংসার? সাকিব তো এই প্রশ্নটাই করেছিলেন, তাই না?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...