চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে অপ্রত্যাশিত ভাবে হারের পর দ্বিতীয় টেস্ট জিতে যেখানে সিরিজে সমতা আনার কোন বিকল্প নেই। সেখানে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় দ্বিতীয় টেস্ট জয় তো দূরের কথা; ম্যাচ বাঁচানোই কঠিন হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য। দ্বিতীয় দিন শেষে ঢাকা টেস্টেও চালকের আসনে রয়েছে সফরকারীরা।
দিনের প্রথম সেশনে চ্যালেঞ্জ ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্রুত বেঁধে ফেলা আর দিনের শেষ সেশনে লক্ষ্য ছিলো সফরকারী বোলারদের দেখে শুনে খেলে লম্বা সময় উইকেটে থাকা। শুরু ও শেষের দুই চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় দিন শেষেই টেস্টের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফলোওয়ানে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ!
দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের থেকে ৩০৪ রানে পিছিয়ে থাকা স্বাগতিকদের ফলোওয়ান এড়াতে এখনো প্রয়োজন ১০৫ রান। হাতে রয়েছে ৬ উইকেট। ধংবস্তুপে পড়া বাংলাদেশ টেস্টের তৃতীয় দিনে তাকিয়ে থাকবে মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মাদ মিথুন, লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটের দিকে।
প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার আগেই গ্যাব্রিয়েলের বলে মায়ার্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সৌম্য সরকার। দলীয় ১ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশের ইনিংসে নিজের দ্বিতীয় ওভারে আবারো আঘাত করেন গ্যাব্রিয়েল।
গ্যাব্রিয়েলের অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বলে টাইমিং ও ফুটওয়ার্কের সমন্বয়ে দারুণ ব্যালান্স এবং প্লেসমেন্টে বাউন্ডারি মারার পরের বলে আবারো একই শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত (৪)। শান্তর বিদায়ের পর উইকেটে এসে তামিমের সাথে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক মমিনুল হক।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে তামিম ইকবাল ও মমিনুল হকের ব্যাটে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেস্টা করে স্বাগতিকরা। কিন্তু উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে মমিনুল হক (২১) আউট হয়ে গেলে ভাঙ্গে ৫৮ রানের জুটি। সঙ্গী হারিয়ে বেশীক্ষণ থাকতে পারেননি তামিম ইকবালও।
মমিনুল হক ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই বাজে ভাবে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন তামিম ইকবাল। দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকা তামিমের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৫২ বলে ৪৪ রান। ৭১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেটে মুশফিক–মিথুনের ব্যাটে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেস্টা করছে। দ্বিতীয় দিনের শেষ ঘন্টা নিরাপদেই কাটিয়ে দিয়েছে দুজন।
দিন শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ১০৫ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। মুশফিক ২৭ এবং মিথুন ৬ রানে অপরাজিত রয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের থেকে এখনো ৩০৪ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
এর আগে দিনের শুরুতে ৫ উইকেটে ২২৩ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিনের প্রথম ঘন্টায় বাংলাদেশি বোলারদের স্বচ্ছন্দ্যে খেলেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান বোনার ও সিলভা। কিন্তু দারুণ খেলতে থাকা বোনার আগের ম্যাচের মতো সেঞ্চুরি মিস করেন আজও। মিথুনের হাতে ক্যাচ দিয়ে মিরাজের প্রথম শিকার হয়ে বোনার ফিরে যান ৯০ রান করে।
বোনারের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন আলজারি জোসেফ; সপ্তম উইকেটে জুটি বাঁধেন সিলভার সাথে। মাঠে নেমে বাংলাদেশের পেস–স্পিন সাবলীল ভাবে খেলে দ্রুত রান তুলতে থাকেন জোসেফ। এই দুজনের জুটিতে চারশ ছোঁয়ার পথে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এবার সেঞ্চুরি মিস করেন সিলভা। ১৮৭ বলে ৯২ রান করে সিলভা বোল্ড হয়ে গেলে ভাঙ্গে ১১৮ রানের জুটি।
সঙ্গী হারিয়ে বেশীক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি জোসেফও। আবু জায়েদ রাহির তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান জোসেফ (৮২)। এরপর বাকি দুই উইকেট হারিয়ে ৪০৯ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। বাংলাদেশের হয়ে আবু জায়েদ রাহি ও তাইজুল ইসলাম ৪ টি করে এবং সেহেদী হাসান মিরাজ ও সৌম্য সরকার শিকার করেন ১ টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: দ্বিতীয় দিন শেষে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৪০৯/১০ (১৪২.২)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৬ ওভারে ১০৫/৪ (তামিম– ৪৪, সৌম্য– ০, শান্ত– ৪, মমিনুল– ২১, মুশফিক– ২৭*, মিথুন–৬*)