লিটন দাসের ব্যাটিংয়ে প্রথমে আশা জেগেছিল। কিন্তু, এরপরের বাকিটা সময় নিদারুণ ব্যর্থতা। শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহান আর তাসকিন আহমেদের ক্যামিও কোনো কাজেই আসেনি। পাঁচ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই ম্যাচের একমাত্র প্রাপ্তি।
অ্যাডিলেডের মেঘাচ্ছন্ন বিকেলে এদিন টসে জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট করতে নেমে তাসকিন আহমেদের আউটসুইংয়ে ভুগতে থাকে অফ ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুল। ওপর প্রান্তে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা তাসকিনের বলে ডিপ থার্ড ম্যানে হাসান মাহমুদ কে ক্যাচ দেয়। কিন্তু হাসান মাহমুদ সেই ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হয়।
যদিও এর পরের ওভারে নিজের বোলিংয়ে, ব্যাকওয়ারড পয়েন্ট অঞ্চলে ইয়াসীর আলির ক্যাচ বানিয়ে রোহিত শর্মা কে আউট করে হাসান মাহমুদ। এরপর ক্রিজে জুটি বাঁধে ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি এবং ওপেনার লোকেশ রাহুল।
দুজনে দেখে শুনে খেলতে থেকে পাওয়ার প্লে শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় এক উইকেটে ৩৭ রান। এরপরই মূলত লোকেশ রাহুল বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া শুরু করেন। এরই মধ্যে ইনিংসের নবম ওভারে এই ম্যাচের জন্য দলে আসা শরিফুলের এক ওভারে নেন ২৪ রান।
সাথে সাথে এই টুর্নামেন্ট এ নিজের প্রথম ফিফটি ও পূরন করেন। যদিও পরের বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এর দিনের প্রথম শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরত যান। এর মধ্যেই বিরাট কোহলি তার স্বভাব সুলভ খেলা খেলে ৩৮ বলে নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন।
যদিও শেষ দিকে মুস্তাফিজ এবং হাসান মাহমুদ এর কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং এর ফলে ভারত তাদের নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রান করে। ভারতের পক্ষে বিরাট কোহলি সর্বোচ্চ ৪৪ বলে ৬৪ রান করেন। লোকেশ রাহুল করেন ৩২ বলে ৫০।
বাংলাদেশ এর পক্ষে সেরা বোলার ছিল তাসকিন আহমেদ। যদিও উইকেট শূন্য ছিলেন তবে বরাদ্দকৃত ২৪ বলের ১৬ টিই ডট বল দিয়ে মাত্র ১৫ রান দেন তাসকিন। হাসান মাহমুদ তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন। ৪৭ রানের বিনিময়ে নেন তিন উইকেট।
সৌম্য সরকারের অনুপস্থিতিতে এদিন ওপেনিংয়ে নিজের জায়গায় ফেরত আসেন লিটন কুমার দাস। এসেই যেন নিজের আক্রমণাত্মক রুপে ফেরত যান। ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হোন। প্রথম ওভারে ভূবনেশ্বর কুমার কে দেখে শুনে খেললেও পরের ওভারে এই টুর্নামেন্ট এর অন্যতম সেরা বোলার আর্শদ্বীপকে পর পর তিনটি চার মেরে শুরু করেন।
ক্রমানুসারে ভুবেনেশ্বর,শামী এদের ওপরেও চড়াও হোন। মাত্র ২১ বলে ৭ চার এবং তিন ছয়ে এই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি করেন। ম্যাচের ৭ ওভার শেষে দলের স্কোর দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৬৬। যার মধ্যে ২৯ বলে ৫৯ রানই লিটন দাসের।
এরপরে অ্যাডিলেডের আকাশ ভেঙে বৃষ্টি আসে। সেই সময় বাংলাদেশ ডাক ওয়ার্থ লুইস মেথডে ভারতের চেয়ে ১৭ রানে এগিয়ে ছিল। প্রায় এক ঘন্টা খেলা বৃষ্টির কারণে বন্ধ থাকার পর ম্যাচের ৪ ওভার হারায়। বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ ওভারে ১৫১ রানের। কিন্তু, বৃষ্টির পর প্রথম ওভারেই লোকেশ রাহুলের দারুণ থ্রো তে রান আউটে দূর্ভাগ্যজনক ভাবে কাটা পড়েন দারুন ফরমে থাকা লিটন দাস। আউট হওয়ার আগে ২৭ বলে করেন ৬০ রান।
এরপরই যেন পথ হারায় বাংলাদেশ।মাঝে শান্ত কিছুটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেও শামির বলে সুরিয়া কুমারের কাছে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনিও। মাঝে সাকিব, আফিফ এবং ইয়াসির আলী দ্রুত আউট হয়ে গেলে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। এক পর্যায়ে স্কোরলাইন ৬৭/০ থেকে ১০৫/৬ এ গিয়ে দাঁড়ায়।
এরপরই তাসকিন এবং সোহান যেন শেষ চেষ্টা শুরু করেন।শেষ ১৮ বলে ৪৩ রানের দরকার ছিল, এমনকি শেষ ওভারে ২০ রানের প্রয়োজন ছিল। আর্শদ্বীপের করা সেই ওভারে সোহান এবং তাসকিন মিলে নিতে পারে মাত্র ১৪ রান। শেষ দিকে, নুরুল হাসান সোহান ঝড়ো ১৪ বলে ২৫ এবং তাসকিন আহমেদ এর ৭ বলে ১২ করেন।
ভারতের পক্ষে আর্শদ্বীপ এবং পান্ডিয়া ২ টি করে উইকেট লাভ করে। এই জয়ের মাধ্যমে ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ভারত পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেল। ওপর দিকে বাংলাদেশের হারে,সেমিতে ওঠার আশা আরও ক্ষীণতর হয়ে গেল।