শ্রীলঙ্কা যেন বাংলাদেশের হোমগ্রাউন্ড। অন্তত, কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে ও স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথের ক্ষেত্রে এই কথাটা শতভাগ সঠিক। আর স্পিন দিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকানোর কৌশল রঙ্গনার চেয়ে ভাল কেউ বা জানেন!
৯৩ টেস্ট, ৭১ ওয়ানডে আর ১৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ – সব মিলিয়ে রঙ্গনা হেরাথের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার প্রায় ১৯ বছরের। টিম কম্বিনেশনের কারণে শুরুর দিকে দলে নিয়মিত না হলেও অভিজ্ঞতার কমতি এই কিংবদন্তির। আর তিনি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পিন বোলিং কোচ – সাকিব, নাসুমদের মাঝেও তাই ছড়িয়ে দিচ্ছেন নিজের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার আলো।
রঙ্গনা হেরাথ বাঁ-হাতি স্পিনার, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও বাঁ-হাতি স্পিনার। ফলে গুরু-শিষ্যের বন্ধনের কার্যকারিতা বেড়েছে কয়েক গুণ। সাকিব ছাড়াও জাতীয় দলের রাডারে থাকা নাসুম, তাইজুলদের বাঁ-হাতিরাও নিজেদের জ্বালিয়ে নিতে পারছেন হেরাথের অধীনে।
আপাতত এশিয়া কাপের অনুশীলনে ব্যস্ত টিম টাইগার্স; নাসুম আর সাকিবই তাই রঙ্গনা হেরাথের ক্লাসের মনোযোগি ছাত্র। বোলিংয়ের ধরন খানিকটা একই হওয়ায় হেরাথের কাজ যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশি দুই স্পিনারও স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করতে পারছেন গুরুর দীক্ষা।
নাসুম আহমেদের অবশ্য এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা একদমই কম। শুধু প্রথম ম্যাচই নয়, সাকিব আল হাসান থাকলে পুরো টুর্নামেন্টেই হয়তো তাঁকে খেলানোর কথা ভাববে না টিম ম্যানেজম্যান্ট। কিন্তু সেটা ভেবে বসে থাকার সুযোগ কই, নাসুম তাই নেটে বোলিং করে প্রস্তুত রাখছেন নিজেকে। টুকটাক ভুল শুধরানোর কিংবা উন্নতির উপায় জেনে নিচ্ছেন কোচ হেরাথের কাছ থেকে।
অন্যদিকে সাকিব আল হাসান তো নিজেই কিংবদন্তি; তবু তিনি শেখা ছাড়েন না। ভান্ডারে নিত্যনতুন অস্ত্র জমা করতে সবসময়ই মুখিয়ে থাকেন এই তারকা। কখনো দুসরা শেখেন, কখনো আবার স্লাইড কাটার। আর তাঁর নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গী রঙ্গনা হেরাথ। লঙ্কান এই স্পিনারের তত্ত্বাবধানে পরিপূর্ণ সাকিব হয়ে উঠছেন আরো ধারালো।
এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক দেশ পাকিস্তান হলেও বাংলাদেশ এখন আছে রঙ্গনা হেরাথের জন্মভূমি শ্রীলঙ্কাতে। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই এবারের এশিয়া কাপ শুরু করবে টাইগাররা। তাই তো বলাই যায়, কন্ডিশন আর প্রতিপক্ষ দুটোই হাতের তালুর মত চেনা আছে সাকিব, নাসুমদের কোচের।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে কিভাবে স্পিন বোলিংয়ে সাফল্য পাওয়া যাবে সেটা অন্তত রঙ্গনা হেরাথের ভালোই জানা আছে। তাই তো সাকিব, নাসুমরা কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও সাহায্য পাচ্ছেন কোচের; স্বয়ং হেডকোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহেও এই দেশেরই নাগরিক। সেজন্য লঙ্কানদের ডেরা অপরিচিত মনে হওয়ার কথা নয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের জন্য।
এবারের এশিয়া কাপে বড় কিছু করার স্বপ্ন নিয়েই দেশ ছেড়েছে টাইগাররা। আর সেই স্বপ্ন পূরণের অনেকটা দায়িত্ব আছে স্পিন বিভাগের উপর। রঙ্গনা হেরাথের নেতৃত্বে সাকিব, মিরাজরা সেই দায়িত্ব ভালভাবে পালন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।