আরেকটি অসহায় আত্মসমর্পণ

ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিশেলের জোড়া সেঞ্চুরিতে লক্ষ্য ছিলো অনেক বড়; গতি, সুইং, বাউন্স এবং শর্ট বলের তোপ ছিল প্রচুর। স্কিলের পরীক্ষার সাথে ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জ ছিল প্রবল। জবাবটা দিতে হতো দুর্দান্ত ব্যাটিং স্কিল ও সাহসিকতায়। কিন্তু এর কোনটাই করতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

ফিল্ডিং মিস, রান আউটের সুযোগ নস্ট ও ব্যাটিং ব্যর্থতা; সব কিছু মিলিয়ে আরো একটি হতাশার গল্প লিখে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ১৬৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াটওয়াশ হয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ।

৩১৮ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই দলের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও লিটন দাসকে হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। ৯ বলে ১ রান করে উইকেটের পিছনে তামিম ক্যাচ দেওয়ার পর শিশু সুলভ এক শর্ট খেলে ৬ বলে ১ রান করে ফিরে যান সৌম্য সরকারও।

তিনটি চার মেরে আত্নবিশ্বাসী লিটন দাস ভালো শুরু করলেও অতি আত্নবিশ্বাসী শর্ট খেলতে গিয়ে ট্রেন্ট বোল্টের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি এই ওপেনার।

২১ রান করে লিটন দাস ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে টিকে থাকার লড়াই করেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন।

অতি সাবধানে খেলে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেস্টা করে চতুর্থ উইকেট জুটিতে এই দুজন যোগ করেন ৬৬ বলে মাত্র ২২ রান। কিন্তু ৩৯ বলে ৬ রান করে মিঠুন ও ৪৪ বলে ২১ রান করে মুশফিক বিদায় নিলে শেষ হয় প্রতিরোধ। এরপর দ্রুত মেহেদী হাসান মিরাজ ও শেখ মেহেদী হাসানকে হারায় বাংলাদেশ।

অষ্টম উইকেটে তাসকিন আহমেদকে সাথে নিয়ে ২০ রানের এবং নবম উইকেটে রুবেল হোসেনকে সাথে নিয়ে ৫২ রানের জুটি গড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে হারের ব্যবধানই শুধু কমিয়েছে।

তাসকিন ২৪ বলে ৯ রান ও রুবেল ২৮ বলে ৪ রান করে আউট হয়ে গেলেও ৭৩ বলে ছয়টি চার ও চারটি ছয়ের সাহায্যে ৭৬ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অলআউট হওয়ার আগে ৪২.৪ ওভারে ১৫৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের পক্ষে জিমি নিশাম পাঁচটি এবং ম্যাট হেনরি চারটি উইকেট শিকার করেন।

এর আগে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিশেলের জোড়া সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় গড়ে কিউইরা। কিন্তু তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেনের বোলিং নৈপুণ্যে শুরুটা ভালো হয়েছিলো না নিউজিল্যান্ডের।

সিরিজে প্রথম বারের মতো আগে বোলিংয়ের সুযোগ পেয়ে উইকেটে ঘাসের সাথে হালকা বাতাস কাজে লাগিয়ে মাত্র ৫৭ রানেই নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডারের তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের উইকেট তুলে নেন দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন।

দুটি ক্যাচ ও একটি রান আউটের সুযোগ নষ্ট হওয়াতে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৪ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার হেনরি নিকোলস ও মার্টিন গাপটিল। তবে তিন বার বেঁচে গিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি হেনরি নিকোলস। তাসকিনের বলে গালিতে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে কিউই ওপেনার ফিরে যান ২১ বলে ১৮ রান করে।

নিকোলস ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই রুবেল হোসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে মিড অনে লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া মার্টিন গাপটিল। গাপটিলের ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান।

চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা রস টেইলরও বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। রুবেলের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে টেলর ফিরে যান ১৪ বলে ৭ রান করে। এর আগে ৩ রানে রুবেলের বলেই মিড অফে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন রস টেইলর।

দ্রুত ৩ উইকেট হারালেও পেসাররা আক্রমণ থেকে সরে যাওয়ার পরই ঘুড়ে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। দুই স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬৩ রান যোগ করেন ডেভিন কনওয়ে ও টম ল্যাথাম।

বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙতে সৌম্য সরকারকে বোলিংয়ে আনেন তামিম ইকবাল। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে পয়েন্টে মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচ বানিয়ে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথামকে ফিরিয়ে দেন সৌম্য সরকার। ল্যাথামের ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান।

১২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়লেও কনওয়ে ও মিশেলের পঞ্চম উইকেট জুটিতে বড় রানের ভিত্তি পায় স্বাগতিকরা। কিন্তু বাংলাদেশ ভুল না করলে গল্পটা অন্য রকমও হতে পারতো। স্লিপে কোনো ফিল্ডার না থাকায় দুই বার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান কনওয়ে এবং আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পিচ্ছিল হাতে দুই বার জীবন ফিরে পান মিশেল।

ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে কনওয়ে ফিরে গেলে ভাঙে ১৫৯ রানের জুটি। মুস্তাফিজকে ছয় মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়ার আগে কনওয়ে করেন ১১০ বলে ১৭টি চারের সাহায্যে ১২৬ রান। এরপর রুবেলকে ছয় মারতে গিয়ে জিমি নিশাম দ্রুত ফিরে গেলেও শেষ দুই ওভারে ২৯ রান নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন মিশেলও।

শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৮ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। ৯২ বলে ১০০ রান করে অপরাজিত থাকেন মিশেল। বাংলাদেশি বোলারদের ভিতর তিনটি উইকেট শিকার করেন রুবেল হোসেন এবং ১টি করে উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার ও মুস্তাফিজুর রহমান।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড: ৩১৮/৬ (ওভার:৫০; গাপটিল- ২৬, নিকোলস- ১৮, কনওয়ে- ১২৬, টেইলর- ৭, ল্যাথাম- ১৮, মিশেল- ১০০*, নিশাম- ৪, স্যান্টনার- ৩*) (মুস্তাফিজ- ১০-০-৮৭-১, তাসকিন- ১০-১-৫২-১, রুবেল- ১০-১-৭০-৩, মেহেদি- ৭-০-৪৬-০, মিরাজ- ৫-০-২৩-০, সৌম্য- ৮-০-৩৭-১)

বাংলাদেশ: ১৫৪/১০ (ওভার: ৪২.৪; তামিম- ১, সৌম্য- ১, লিটন- ২১, মিঠুন- ৬, মুশফিক- ২১, মাহমুদউল্লাহ- ৭৬* মিরাজ- ০, মেহেদী- ৩, তাসকিন- ৯, রুবেল- ৪, মুস্তাফিজ- ০) (হেনরি- ১০-২-২৭-৪, নিশাম- ৭.৪-১-২৭-৫)

ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ১৬৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: নিউজিল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরা: ডেভন কনওয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link