হারারে টেস্টের চতুর্থ দিন শেষেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিলো বাংলাদেশ। এরপরেও একটা শঙ্কা তো ছিলোই। দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে এমন অবস্থায় থেকেও হেরেছিল সাকিব তামিমরা। তবে জিম্বাবুয়ের সাথে এমন কিছুই হয়নি। স্বাগতিকদের একমাত্র টেস্টে ২২০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে সফরকারী।
বড় জয় দিয়েই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিদায় জানালো বাংলাদেশ। বিদায়ী টেস্টে দলের জয়ে ব্যাট হাতে বড় অবদান রেখেছেন এই ব্যাটসম্যান নিজেও। প্রায় দেড় বছর পর টেস্টে ফিরে দলের বিপর্যয়ে খেলেছেন ১৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস। পঞ্চম দিন মাঠে নামার আগে সতীর্থদের কাছ থেকে পেয়েছেন গার্ড অব অনারও।
বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট জয় পেয়েছিল এই জিম্বাবুয়ের সাথেই গত বছরের মার্চে। এরপর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াটওয়াশ হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার সাথেও টেস্ট হেরেছিল বাংলাদেশ। তাই এই জয়টা বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি হয়েই এসেছে। জয় ছাড়াও এই ম্যাচে প্রাপ্তি নেহাত কম নয়।
সর্বশেষ সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলার পরের চার ইনিংসে মাত্র ২৮ রান এসেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে। পাঁচ বার যেতে পারেননি দুই অংকের ঘরে। যার ভিতর শূন্য রানেই ফিরে ছিলেন দুই বার। এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন শান্ত।
ঘরের মাঠে গত জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে হাফ সেঞ্চুরি করার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাইফ হাসানের কাছে জায়গা হারিয়ে ছিলেন সাদমান। তামিমের চোটে সুযোগ পেয়ে ছিলেন এই টেস্টে। তাই এই ম্যাচে সাদমানের চ্যালেঞ্জ ছিলো নিজের জায়গা শক্ত করা। অনবদ্য এক সেঞ্চুরি করে নিজের কাজটা ভালো ভাবেই করেছেন এই ওপেনার।
লাইন, লেংথ ও গতির পসরা সাজিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে নতুন রূপে আবির্ভাব হয়ে ছিলেন তাসকিন আহমেদ। জিম্বাবুয়ের সাথে প্রথম ইনিংসে এক উইকেট পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার। ব্যাট হাতেও প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলে ছিলেন তাসকিন।
বল হাতে দুই ইনিংসেই দুর্দান্ত ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারের অস্টম পাঁচ উইকেট ও দেশের বাইরে দ্বিতীয় বার পাঁচ উইকেট শিকার করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও চার উইকেট শিকার করেছেন এই স্পিনার। তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ফিরে ছিলেন শূন্য রানে।
এত প্রাপ্তি ও রান উৎসবের ম্যাচে অপ্রাপ্তি শুধু সাকিব আল হাসানের রান না পাওয়া। কিছু দিন হলো ব্যাট হাতে অফফর্মে থাকা সাকিব এই ম্যাচেও ছিলেন ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে ৩ রান করা সাকিব দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগই পাননি। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বল হাতে সফল ছিলেন এই অলরাউন্ডার।
বল হাতে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে ছিলেন সাকিবই। প্রথম ইনিংসে চার উইকেট শিকার করা সাকিব দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছেন এক উইকেট। প্রথম ইনিংসে রান পাননি মুশফিকুর রহিমও। দুই ইনিংসেই বল হাতে ব্যর্থ ছিলেন পেসার এবাদত হোসেন।
গতকালের ৩ উইকেটে ১৪০ রান নিয়ে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ের আজকের শুরুটাও ভালো হয়নি। মেহেদী হাসান মিরাজের জোড়া আঘাতে ফিরে যান ডিয়ন মেয়ার্স ও টিমিসেন মারুমা। মেয়ার্স করেন ২৬ রান আর শূন্য হাতে ফিরে যান মারুমা। এরপর তাসকিন আহমদের জোড়া ধাক্কায় ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় জিম্বাবুয়ে।
এই পেসার ফিরিয়ে দেন রয় কাইয়া ও রেগিস চাকাভাকে। চাকাভা এক রান করলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি কাইয়া। ১৬৪ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর অস্টম উইকেটে ৩৪ রান যোগ করেন ডোনাল্ড টিরিপানো ও ভিক্টর নিয়াউচি। ১০ রান করা নিয়াউচিকে ফিরিয়ে দিয়ে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন।
এরপর টিরিপানো লড়াই করলেও ৫২ রান করে এবাদত হোসেন বলে ফিরে যান তিনি। টিরিপানোর বিদায়ের পর এনগারাভা ফিরে গেলে ২৫৬ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ চারটি উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়া সাকিব আল হাসান ও এবাদত হোসেন একটি করে উইকেট পেয়েছেন।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৬৮/১০ (ওভার: ১২৬; সাদমান- ২৩, সাইফ- ০, শান্ত- ২, মুমিনুল- ৭০, মুশফিকুর- ১১, সাকিব- ৩, মাহমুদউল্লাহ- ১৫০*, লিটন- ৯৫, মিরাজ- ০, তাসকিন- ৭৫) (মুজারাবানি- ২৯-৪-৯৪-৪, নিয়াউচি- ১৭-১-৯১-২, টিরিপানো- ২৩-৫-৫৮-২)
ও দ্বিতীয় ইনিংস: ২৮৪/১ (ডি.) (ওভার: ৬৭.৪; সাইফ- ৪৩, সাদমান- ১১১*, শান্ত- ১১৭*) (নিয়াউচি- ৯-০-৩৬-১)
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ২৭৬/১০ (ওভার: ১১১.৫; শুম্বা- ৪১, কাইতানো- ৮৭, টেইলর- ৮১, মেয়ার্স- ২৭, চাকাভা- ৩১) (সাকিব- ৩৪.৫-১০-৮২-৪, মিরাজ- ৩১-৫-৮২-৫, তাসকিন- ২৪-১০-৪৬-১)
ও দ্বিতীয় ইনিংস: ২৫৬/১০ (ওভার: ৯৪.৪; টেইলর- ৯২, শুম্বা- ১১, কাইতানো- ৭, মেয়ার্স- ২৬, টিরিপানো- ৫২,নিয়াউচি-১০) (সাকিব- ২৫-৯-৪৪-১, মিরাজ- ৩০.৪-১০-৬৬-৪, তাসকিন- ২৪-৪-৮২-৪)
ফলাফল: বাংলাদেশ রানে ২২০ রানে জয়ী।