স্যালারি ক্যাপ: বার্সার গলার কাঁটা

গাম্পার কাপে মেক্সিকান ক্লাব পুমার বিপক্ষে তো দারুণ খেললেন রবার্ট লেওয়ানডোস্কি, রাফিনহা, কেসি, জুলস কুন্ডেদেরা। কিন্তু কিছুদিন পর শুরু হতে যাওয়া লা লিগায় আদৌ তাঁদের বার্সার জার্সিতে দেখা যাবে তো? স্যালারি ক্যাপের কারণে নতুন দলে ভেড়ানো ফুটবলারদের কাওকেই যে এখনো নিবন্ধিত করাতে পারেনি কাতালান ক্লাবটি!

মৌসুমের প্রথম দিন রায়ো ভাল্কানোর বিপক্ষে নু ক্যাম্পে এই তারকাদের কাউকেই কি মাঠে বার্সার জার্সিতে দেখা যাবে? পুরো ফুটবল দুনিয়ার এখন এই একটাই প্রশ্ন।

এক বিলিয়ন ইউরোর বেশি ঋণের বোঝা কোন ক্লাবের উপর থাকলে সে তার খরচ গুটিয়ে আনবে এবং ঋণের পরিমাণ কি ভাবে কমানো যায় সেই চেষ্টা করবে, সাধারন লোকে হয়তো তাই ভাবে কিন্তু ‘মোর দ্যান আ ক্লাব’ স্লোগান নিয়ে চলা বার্সেলোনা করলো ঠিক তাঁর উল্টোটা।

ক্লাবের সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা সাহেব একের পর এক লেভারের কেরামতি দেখিয়ে জোগার করলেন প্রায় ৬৬৭ মিলিয়ন ইউরো। এরপর দলবদলের বাজারে সকলের চক্ষু চরকগাছ করে দলে ভেড়ালেন একের পর এক হাই প্রোফাইল ফুটবলার। ইউরোপিয়ান ফুটবল যারা দেখেন বা নিয়িমিত খোজ খবর রাখেন তাদের মধ্যে এই নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি হয়েছে অনেক মিম।

প্রতিপক্ষরা বলছেন ‘খাইতে পারে না মাঠা মাঠা করে’ আর সমর্থকরা বলছেন বার্সার নিন্দুকদের কলিজা পোড়ার গন্ধ তাঁরা পাচ্ছেন। একে অপরকে শব্দবাণে বিদ্ধ করলেও সকলের মনের কথা ছিল একটাই বার্সা এদের সবাইকে দলে নিবন্ধন করাতে পারবে তো? লা লিগার স্যালারি ক্যাপ বাধা হয়ে দাড়াবে না তো? নিন্দুকদের মুখের এবং সমর্থকদের বুকের মধ্যে থাকা এই প্রশ্নটির উত্তর ইতি মধ্যে লা লিগা কর্তৃপক্ষ দিয়ে দিয়েছে।

কিছুদিন আগেই লা লিগাকে দেওয়া বার্সার হিসাবকে নাকচ করে দিয়েছে লা লিগা কর্তৃপক্ষ, তাদের কথা বার্সার দেওয়া হিসাবে ১৫০ মিলিয়ন ইউরোর ঘাপলা আছে। এ ব্যাপারে বার্সা এখনো তাদের অফিশিয়াল ওয়েব সাইটে কোন কথা বলেনি, তারা আশাবাদী যে মৌসুম শুরুর আগেই তারা সব সমসশার সমাধান করতে পারবে। লা লিগা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে চতুর্থ লেভার না টেনে তারা খেলোয়াড় নিবন্ধন করাতে পারবে না।

বার্সা না জানলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই ব্যাপারে অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যার সারমর্ম প্রায় এক এবং সুত্র হিসেবে স্প্যানিশ রেডিও কাদেনা কোপকে ব্যাবহার করা হয়েছে। যদিও আগে এই রেডিও স্টেসন থেকে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা না থাকার কারণে তাদের বিরদ্ধে বার্সা আইনি ব্যবস্থা নেয় এবং ক্ষতিপূরণ আদায় করে তবে দা এথলেটিকও নিজেদের অনুসন্ধানে ঠিক একই সংবাদ পেয়েছে তাই এইবার তাদের খবরের উপর আস্থা রাখা যেতেই পারে।

রেডিও কাদেনা কোপের সূত্র অনুযায়ী বার্সা তাদের লা লীগা সম্প্রচার সত্ত্ব আমেরিকান কম্পানি সিক্স স্ট্রিটের কাছে সরাসরি বিক্রি করে নি। ব্লাগুরানারা সিক্স স্ট্রিটের সাথে মিলে লক্সলে ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি কোম্পানি খুলে যারা কাতালান ক্লাবটির সম্প্রচার সত্ত্ব কিনে নেয়।

সিক্স স্ট্রিট এই কোম্পানির কাছ থেকে ৫১৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আগামী ২৫ বছরের জন্য লা লিগার সম্প্রচার সত্তের ২৫ ভাগ কিনে নেয় এবং বার্সা ১৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ২৬ তম বছর থেকে সম্প্রচার সত্ত্ব কিনে নেয়। এই সম্প্রচার সত্ত্বের চুক্তির মাধ্যমে পাওয়া মোট ৬৬৭ মিলিয়ন ইউরো বার্সা তাদের নতুন আয় হিসেবে নিজেদের হিসাবের মধ্যে দেখায় যদিও এখানে ১৫০ মিলিয়ন তারা নিজেরাই বিনিয়োগ করেছে এবং তা নিয়েই লা লীগার কর্তৃপক্ষে সাথে তাদের বিবাদ।

লা লিগা কর্তৃপক্ষ বলছে যেহেতু কাতালান ক্লাবটি নিজেরাই এখানে ১৫০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে তাই এটাকে তারা নতুন আয় হিসেবে দেখাতে পারবে না যার ফলে লা লিগার স্যালারি ক্যাপ অনুযায়ী বার্সার ১৪৪ মিলিয়ন ইউরোর ঘাটতি রয়ে যাবে যার কারণে তারা নতুন খেলোয়াড়দের সবাইকে নিবন্ধন করাতে পারবে না।

একাউন্টিংয়ের মারপ্যাচে বার্সা নিজেদের হিসাব মিলালেও লা লিগা কর্তৃপক্ষ এত সহজে তা মানার পাত্র না এটা তারা ইতিমধ্যে বুঝে গেছে। উপরন্তু যদি এটাকে লা লিগা কর্তৃপক্ষ ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে ধরে তবে মরার উপর খারার ঘায়ের মত ২৩ ভাগ ট্যাক্স দিতে হবে তাদের, তবে তা নিয়ে তারা এখন তেমন ভাবছে না বরং ১৪৪ মিলিয়ন ইউরোর হিসাব মিলাতেই ব্লাগুরানারা ব্যস্ত।

ধারণা করা হয়েছিল কাতালান ক্লাবটি এখন বার্সা স্টুডিও এবং মারচেন্ডাইসের লাইসেন্সিংয়ের ৪৯ ভাগ বিক্রি করবে যা চতুর্থ লেভার হিসেবে তারা আগেই উল্লেখ করেছে কিন্ত তা না করে বার্সা অন্য ভেল্কিই দেখাচ্ছে। বার্তামেউ আমলে ২০২০ সালে ডি ইয়ং, ল্যাঙলেট, পিকে এবং টার স্টেগেনের চুক্তি এক্সটেন্ড করা হয় যার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বর্তমান বার্সা প্রশাসন।

ক্লাবটি তাদের আগের চুক্তিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় যা হলে খেলোয়াড়দের বেতনের খরচ থেকে বছরে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি সাশ্রয় হবে আর বার্সার গলায় বিধে থাকা লা লিগার স্যালারি ক্যাপের কাটা নেমে যাবে।

অনেক ফুটবল বোদ্ধা বলছেন বার্সা সবাইকে একসাথে নিবন্ধন না করিয়ে আপাতত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের নিবন্ধনটা সেরে ফেলুক কিন্ত তাতে যে ড্রেসিং রুমে বিরুপ পরিবেশের সৃষ্টি হবে তা আর না বললেই না। ১২ আগস্ট, বাংলাদেশ সময় রাত একটায় বার্সা নু ক্যাম্পে যখন রায়ো ভায়েকানোর মুখোমুখি হবে তখন তাদের লাইনআপ দেখে অন্তত বোঝা যাবে খেলোয়াড় নিবন্ধন নিয়ে তারা শেষমেশ কি করলো কিংবা তার আগেই আমরা টুইটারে লাপোর্তার লেভার টানার আওয়াজ পাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link