বাঁশ নিয়ে লাঠালাঠি

বর্তমানে যেই ব্যাট দিয়ে খেলা হয় সেটা তৈরি হয় উইলো কাঠ দিয়ে। একটি উইলো গাছ বড় হতে প্রায় ১৫ বছর সময় দরকার হয়। ওদিকে বাঁশের ব্যাট তৈরি করা যায় অনেক কম খরচেই। তাছাড়া এটি বেশ সহজল্ভ্য এবং মেসো জাতীয় এই বাঁশ ৫ বছরের মধ্যেই পরিপক্ক হয়ে উঠে।

সম্প্রতি বাঁশ নিয়ে ক্রিকেট অঙ্গনে আলোচনার ঝড়।

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন ক্রিকেটে আবার বাঁশ এলো কোত্থেকে? ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন বাঁশের ব্যাট। কিন্তু হঠাৎ কাঠের ব্যাট রেখে বাঁশ কেনো? এই প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন গবেষক ড. ডার্শিল শাহ এবং বেন টিঙ্কলার ডেভিস।

বর্তমানে যেই ব্যাট দিয়ে খেলা হয় সেটা তৈরি হয় উইলো কাঠ দিয়ে। একটি উইলো গাছ বড় হতে প্রায় ১৫ বছর সময় দরকার হয়। ওদিকে বাঁশের ব্যাট তৈরি করা যায় অনেক কম খরচেই। তাছাড়া এটি বেশ সহজল্ভ্য এবং মেসো জাতীয় এই বাঁশ ৫ বছরের মধ্যেই পরিপক্ক হয়ে উঠে। ফলে এই ব্যাট ব্যবহার করলে স্বল্প আয়ের দেশগুলোও অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। এছাড়াও গবেষকদের মতে বাঁশের তৈরি ব্যাটে কাঠের ব্যাটের চেয়ে বেশি শক্ত ও মজবুত।

গবেষক ড.ডার্শিল শাহ এই ব্যাটকে ‘স্বপ্নের ব্যাট’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। এই ব্যাট বেশি শক্ত হওয়ায় বল ব্যাটের সংস্পর্শে আসার পর আগের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটে যাবে। ফলে ব্যাটসম্যানদের শট খেলতে বেশ সুবিধা হবে। এছাড়া এই ব্যাটের কোণায় সুইট স্পট কাঠের ব্যাটের চেয়ে বড় হবে। ফলে ইয়োর্কার বলেও খুব সহজেই চার আদায় করে নিতে পারবে ব্যাটসম্যানরা।

সবমিলিয়ে এই ব্যাট ব্যাটসম্যানদের বাড়তি অনেক সুবিধা তো দিচ্ছেই পাশাপাশি ব্যাট পাওয়া যাবে অনেক সস্তায়ও। এছাড়া কাঠের ব্যাটের মতই ব্যাট-বলের স্পর্শে আওয়াজ হবে এই ব্যাটেও। তবে সমস্যা হয়েছে এই ব্যাটের ওজন নিয়ে। কাঠের ব্যাটের চেয়ে এই ব্যাটের ওজন অনেকটাই বেশি। তবে ওই গবেষক দল বলছে এই ওজন কমিয়ে আনা সম্ভব।

এদিকে ঐতিহ্যগতভাবে ক্রিকেটের নিয়ম কানুন তৈরি করে আসছে লন্ডনের মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। ব্যাটের গঠন প্রকৃতিও নির্ধারণ করেছে এই ক্লাব। এই বাঁশের ব্যাট প্রসঙ্গে তাঁরা বেশ কিছু সমস্যা খুঁজে বের করেছেন। প্রথমত, ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাট শুধু কাঠ দিয়েই তৈরি করা যাবে। ফলে এই ব্যাট ব্যবহার করতে হলে সেই আইন পরিবর্তক করতে হবে। কেননা বাঁশ কাঠ নয়, এটি একধরনের ঘাস। দ্বিতীয়ত, এই বাঁশের ব্যাটের উপর একধরনের আস্তরন দিয়ে বানানো হয়। এই আস্তরণ দেয়া ব্যাট ছোট ক্রিকেটে ব্যবহার করা গেলেও, বড়দের ক্রিকেটে এটি একেবারেই নিষিদ্ধ।

ফলে কাঠের ব্যাটের আইন পরিবর্তন করলেও প্রলেপের কারণে পেশাদার ক্রিকেটে বাঁশের ব্যাট সম্ভব করা যাচ্ছেনা। তবে এমসিসি ব্যাট নিয়ে এই গবেষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। এছাড়া তাঁদের উপ কমিটির বৈঠকেও এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছে ক্লাবটি।

সবমিলিয়ে এখনই কাঠের ব্যাটের পরিবর্তে বাঁশের ব্যাট ব্যবহার না করা গেলেও এটি যে অর্থনৈতিক ও প্রকৃতির জন্য কাঠের চেয়ে ভালো তা প্রমাণিত। হয়তো ব্যাটের ওজন কমানো সম্ভব হলে কিংবা প্রলেপ ছাড়া বাঁশের ব্যাট তৈরি করা সম্ভব হলে অদূর ভবিষ্যতের আমরা ক্রিকেট মাঠে এই ব্যাটের রাজত্ব দেখব।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...