মাঠের ক্রিকেটের চেয়ে হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে আবার বর্ণবাদ।
গত বছর দেড়েক ধরেই বর্ণবাদ নিয়ে ক্রিকেটে বেশ তোলপাড় চলছে। বিশ্বের বেশিরভাগ ক্রিকেট দলই বর্ণবাদ বিরোধী সংহতি ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারস’-এ অংশ নিয়েছে। সবচেয়ে দেরি করে এই সংহতি প্রকাশের আন্দোলনে তাল মেলালো বর্ণবাদে একসময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এই দলীয় কার্যক্রমে একমত না হয়েই ম্যাচ থেকেই সরে দাড়ালেন দলটির সাবেক অধিনায়ক কুইন্টন ডি কক।
এই ঘটনার জের কতদূর যাবে, সেটা এখনই বলা মুশকিল। তবে মঙ্গলবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের পর দলটির অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা বলেছেন, ডি ককের এই সিদ্ধান্ত দলকে একাধারে আহত করেছে এবং একত্রিত করেছে।
বর্ণবাদ বিরোধী মুভমেন্টের অংশ হিসেবে ক্রিকেটাররা মাটিতে হাটু গেড়ে বসে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে প্রতীকি প্রতিবাদ করে থাকেন। এর আগেও ডি কক এই ধরণের প্রতিবাদের সময় চুপ করে ছিলেন। গতকালকে ম্যাচের আগে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) দলকে জানায় যে, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে বাধ্যতামূলকভাবে এই প্রতিবাদে অংশ নিতে হবে। আর এই নির্দেশ মানতে না পেরে খেলা থেকেই নিজেকে সরিয়ে নেন ডি কক।
ম্যাচ শেষে বাভুমা বলেছেন, এটা একাধারে তাদের জন্য আঘাত এবং প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তিনি বলছিলেন, ‘আমার মনে হয়, দুটোই ঘটেছে (প্রেরণা ও আঘাত)। ডি ককের খবরটা আমরা যখন পেলাম, এটা আমাদের আহত করেছে। এতে দল হিসেবে আমরা কিছুটা পেছন পায়ে চলে গিয়েছিলাম। কুইনির মত একজন খেলোয়াড়…। সে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কেবল একজন ব্যাটসম্যান নয়, সে দলের সিনিয়র একজন খেলোয়াড়। কিন্তু এটা অন্যদের জন্য সুযোগও বটে। তাঁর বদলে ক্লাসেন এসেছে। এটা তার জন্য সুযোগ ছিলো।’
বাভুমা ডি ককের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিষ্কার মন্তব্য করেননি। তবেেএটা বলেছেন যে, তাঁরা জাতীয় দলের হয়ে খেলার সম্মানটাকেই বড় করে দেখতে চান, ‘দেখুন, দিনশেষে এটা দেশের হয়ে আরেকটা ম্যাচ খেলার সুযোগ ছিলো। আমাদের এটুকু নিশ্চিত করা উচিত যে, আমরা যেনো এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারি। ছেলেরা মাঠে নিজেদের হৃদয় দিয়ে খেলেছে। তারা ওখানে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে। আর টুর্নামেন্ট এগোনোর সাথে সাথে এটাই আমরা দেখতে চাই।’
সবমিলিয়ে বাভুমা মনে করেন, এই ম্যাচে তারা প্রথম ম্যাচের চেয়ে অনেক ভালো খেলেছেন। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের উন্নতিতে খুশি তিনি, ‘প্রথম ম্যাচের চেয়ে অনেক ভালো খেলেছে দল। আমরা জানতাম, কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। বোলিং দুর্দান্তই হচ্ছে। আমাদের জন্য ভালো একটা দিন। আমরা মাঠে যে আলোচনা করেছি, তা খুব সংক্ষিপ্ত ও পরিষ্কার ছিলো। রাবাদা ও নরকে দারুণ বল করেছে।’
ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে আট উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে মাত্র দুই উইকেট হারিয়েই জয়ের বন্দরে যখন দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছায় তখনও হাতে ১০ টি বল ছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হারের পর এই ম্যাচ দিয়ে জয়ে ফিরলো টেম্বা বাভুমার দল। বর্ণবাদ বিতর্ক ছাপিয়ে জয়টাই দিনের প্রাপ্তি হয়ে রইলো প্রোটিয়াদের।