তিন ঘন্টা, ৯ মিনিট, ৫৯.৯ সেকেন্ড; গোটা ১২৪ টা ডেলিভারি সামলে রোদের মাঝে পিচে ঠায় দাঁড়িয়ে টেম্বা বাভুমা করেছিলেন ৭১ রান।
টেম্বা বাভুমামডার্ন ডে ক্রিকেটে টেস্ট ম্যাচে তাঁর মত ধৈর্য্য খুব কম সংখ্যক ব্যাটসম্যানই দেখায়। যতক্ষণ পিচে থাকেন, টাইমিং আর শট বোধে রান করতে থাকেন সাবলীলভাবে।
সেদিনও ১২৪ বল অব্দি ফাফ ডু প্লেসিকে সাথে নিয়ে টাইমিং এর প্রদর্শনীই দেখাচ্ছিলেন টেম্বা বাভুমা। এরপর তাকে মুখোমুখি হতে হয় ১২৫তম বলের।
দাশুন শানাকার করা বলটা ছিল শর্ট লেংথে, আর ছিল কিছুটা ওয়াইডিশ। টেম্বা বাভুমা খেলতে চেয়েছিলেন অফ সাইডে, কিন্তু বল গিয়ে পৌছায় উইকেট কিপার নিরোশান ডিকওয়েলার গ্লাভসে। বোলার দাশুন শানাকা আউটের আবেদন করেন, আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাসকেও দ্বিধাগ্রস্ত লাগছিল।
কিন্তু, তার আগেই দেখা গেল টেম্বা বাভুমা প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন!
তা তিনি ধরতেই পারেন, ক্রিকেটের স্পিরিট রক্ষা করে ক্রিকেটের বিচারে নিষ্ঠা দেখাতে পারেন। কিন্তু পরে যে দেখা যায়, বাভুমার ব্যাটে আসলে বল লাগেইনি!
তাহলে তিনি কেন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে হাঁটা শুরু করলেন? আধুনিক ক্রিকেটে এসব জটিলতা দূর করতে যেখানে উন্নত বিভিন্ন প্রযুক্তি আছে, সেসবের অপেক্ষায়ও তো বাভুমা থাকলেন না।
উত্তরটা বাভুমাই দিয়েছেন। শুক্রবার ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার (সিএসএ) দেয়া এক ভিডিও বার্তায় বাভুমা বলেছেন, ‘এটা ঘটনার আকষ্মিকতায় হয়ে গেছে। আমি উইকেটে স্বচ্ছন্দ্য ছিলাম, রানও পাচ্ছিলাম।আমার মনে হয়, আমি আরও রান করতে পারতাম। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে হাঁটা শুরু করা খুবই অপরিপক্ক্ব আচরণ হয়েছে।’
টেস্ট ম্যাচটাতে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে ইনিংস ও ৪৫ রানের বিশাল ব্যাবধানে। ২০২০ সালে সাউথ আফ্রিকার যেটা কিনা টেস্ট ক্রিকেটে অনেক বড় সাফল্য। আর তাতে ভাল অবদান রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং। বাভুমা কথা প্রসঙ্গে টেনে এনেছেন সাউথ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানেরা দীর্ঘদিন ছন্দে ছিলেন না। ধারাবাহিকতা কিংবা আত্মবিশ্বাস, দুটোরই ঘাটতি ছিল আমাদের ব্যাটিংয়ে। তাই ম্যাচ শুরুর আগে ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ ছিল প্রচুর, বিশেষ করে দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের ওপর।’
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হচ্ছে রবিবার, ওয়ান্ডারার্সে। ওয়ান্ডারার্সের কন্ডিশন অনেকটাই সেঞ্চুরিয়নের মতই। বাভুমা পরিকল্পনাতে কোন পরিবর্তনের সুযোগ দেখেন কিনা এমন প্রশ্নে বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, না! আমাদের নিজেদের খেলাটাই খেলতে হবে, স্কোরবোর্ডে রান তুলতে হবে।’
এদিকে শ্রীলঙ্কান স্কোয়াডে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি না সেরে যাওয়ায় দ্বিতীয় টেস্টেও অনিশ্চিত সুরঙ্গা লাকমাল। সেঞ্চুরিয়নে অভিষিক্ত হাসারাঙ্গাকেও আরেকবার দিতে হবে ফিটনেস টেস্ট।
ফিটনেস সমস্যা আছে সাউথ আফ্রিকা শিবিরেও। গ্লেনটন স্টারমানকে ইতোমধ্যেই স্কোয়াড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কোয়াড্রিসেপ স্ট্রেইন সমস্যাতে।
ওয়ান্ডারার্স বাভুমার নিজের ভেন্যু। এখানে তাঁর পরিসংখ্যানও সবচাইতে জোরে কথা বলে। বাভুমা বলেছেন এখানে তিনি আরো কিছু রেকর্ড যোগ করতে চান। তা তো তিনি চাইবেনই, তবে তার জন্যে ক্রিকেট ব্যাটের মত নিজের মাথাটাকেও একটু বেশিই খাটাতে হবে তাকে!
আবার না পাছে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের আগে হেঁটে যান!