হ্যামস্ট্রিং চোটে বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপে মাশরাফির অংশগ্রহণ নিয়েই ছিল অনিশ্চয়তা। চোট কাটিয়ে সকল বাঁধা পেরিয়ে মাশরাফি মাঠে ফিরলেন দশ মাস পর। শুধু ফিরলেন বললে ভুল হবে; মাশরাফি বাইশ গজে রীতিমতো আগুন ঝরালেন। গ্রুপ পর্বের ২ ম্যাচে মিতব্যয়ী বোলিং করে নিলেন ২ উইকেট আর কোয়ালিফায়ারে ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় প্রথম বারের মতো টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নিয়ে দলকে তুললেন ফাইনালে।
মাশরাফি ও তার দলের কোচ বলছিলেন এই সাফল্যের নেপথ্য কথা।
সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি খেলেছেন ২০১৭ সালে। সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক টি-টুয়েন্টিও খেলেছেন ১ বছর আগে। আর সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন চলতি বছরের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। মার্চেই শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। এরপর করোনার কারনে সব ধরনের খেলাধূলা বন্ধ হয়ে গেলে সব ক্রিকেটারই খেলার বাইরে ছিলেন। খেলার বাইরে থাকলেও বিসিবির ফিটনেস প্রোগ্রামের অধীনে ছিলেন সবাই। নিজে ও পরিবারের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হওয়াতে মাশরাফি ফিটনেস নিয়েও কাজ করতে পারেননি। খেলা হয়নি প্রেসিডেন্টস কাপেও।
এরকম একজন ক্রিকেটার চোট কাটিয়ে দশ মাস পর কোন প্রস্তুতি ছাড়াই টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টে মাঠে কি করতে পারবে বা কেনো ফিরছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে দারুণ আশাবাদী লোকটিও হয়তো মাশরাফির অভিজ্ঞতার কথা বলবেন। কিন্তু তার পারফরম্যান্স নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন খুব কম মানুষ। কিন্তু মাশরাফি আরেকবার পারফরম্যান্স দিয়েই কথা বললেন।
২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯ রানে ৪ উইকেট আর ২০১৮ সালের বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১১ রানে ৪ উইকেট পেয়েছিলেন মাশরাফি। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে ১৫ বছরের টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারে মাশরাফি ২ বার ৪ উইকেট করে পেলেও অধরাই ছিলো ৫ উইকেট। এবার সব ছাপিয়ে মাশরাফি পূর্নতা দিয়েছেন এখানেও।
ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে ৫ উইকেটের হিসাবও মিলিয়ে দিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে মাশরাফির সাফল্যের রহস্য জানালেন জেমকন খুলনার কোচ মিজানুর রহমান বাবুল। বাবুল বলেন, ‘এখন বোলারদের চেঞ্জ অব পেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে, সহজাত বোলিংয়ের থেকেও চেঞ্জ অব পেস অনেক বেশি কার্যকরী এবং ফলপ্রসূ। যারা এটা ব্যবহার করতে পারে তারা সফল হচ্ছে। মাশরাফি আরো বেশি অভিজ্ঞ, নতুন বলেও সে সহজাত গতির পরিবর্তন করতে পারে। লেগ কাটার, অফ কাটার মারতে পারে। এই অভিজ্ঞতা দিয়েই মাশরাফি শেষ ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে নিয়েছে।’
ফাইনালেও মাশরাফির দিকে তাকিয়ে থাকবে জেমকন খুলনা। খুলনার কোচ বলেন, ‘মাশরাফিকে নিয়ে বলার কিছু নেই। মাশরাফি ইজ মাশরাফি। এতদিন পরে এসে এরকম পারফরম্যান্স, পাঁচ উইকেট নেওয়া। তার পড়ন্ত বেলায় (ক্যারিয়ারের) এমন পারফরম্যান্স আমাদের দলের জন্য অনেক উপকার হয়েছে। আমরা তাকে লটারিতে পেয়েছি, তাকে পেয়ে আমাদের বোলিং বিভাগ আরো বেশি ভাল হয়েছে।আমরা ফাইনালেও তার ভালো পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকব।’
তবে যাকে নিয়ে এতো কথা, এই পর্যায়ে এসেও যার পারফর্ম করার রহস্য খুজে বেড়াচ্ছে সবাই সেই মাশরাফির কন্ঠে ভিন্ন সুর। মাশরাফি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন সঠিক জায়গাতে বল করার ফলই পেয়েছেন তিনি। মাশরাফি বলেন, ‘না এটাতে কোন রহস্য নাই। বল সঠিক জায়গাতে করতে হবে এটাই একমাত্র জিনিস। আর ২য় কথা হচ্ছে আমরা বড় স্কোর করেছিলাম ঐ সুবিধাটা ছিলো। এবং প্রতিপক্ষের উপর ঐ চাঁপটা ছিলো যে তাদের শটস খেলতে হবে।’
তবে মাশরাফি হঠাৎ করে এসেই ভালো করেননি বলে জানিয়েছেন। এটার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন, নিজকে সময় দিয়েছেন, নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছেন এরপরই মিলেছে সাফল্য। মাশরাফি বলেন, ‘এটা সময়ের ব্যাপার। টাইম বাই টাইম এটা হয়েছে। আল্লাহর রহমত যে আমি সঠিক সময়ে সুস্থ হতে পেরেছি।’
মাশরাফি অপেক্ষায় আছেন বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপের শিরোপা জিতে শেষটা রাঙ্গানোর। শিরোপা জিতলে মাশরাফির ভান্ডারে যোগ হবে আরো একটা সাফল্য। সবাই শেষ ধরে নেওয়ার পরেও মাশরাফি যে ভাবে ফিরে এসেছেন তাতে নিশ্চিত মাশরাফি আরো রুপকথার জন্মদিন দিবেন। তার রুপকথার ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করবেন।