নান্দনিক ও কিংবদন্তীতুল্য পেস বোলারদের জন্মস্থান পাকিস্তান। দুর্দান্ত, আগ্রাসী সব পেসারদের জন্ম দিয়েছে পাকিস্তান। তাই বলে যে পাকিস্তান ক্রিকেটে ব্যাটারদের অভাব হয়েছিল তা কিন্তু নয়। আগ্রাসী সব পেসারদের সাথে সাথে নানন্দিক সব ব্যাটারদেরও পাকিস্তান তুলে ধরেছিল বিশ্বমঞ্চে।
আসলে পাকিস্তান ক্রিকেট হল প্রতিভার খনি। আর সেখানে ব্যাটিং প্রতিভাও নেহায়েৎ কম নয়। ধুরন্ধর সেই সব ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
- জহির আব্বাস
চশমা পড়ে খেলার জন্য বেশ একটা আলাদা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন জহির আব্বাস। তবে তাঁর ব্যাটিং ও ছিল বেশ দৃষ্টিনন্দন। টেস্ট ও ওয়ানডেতে সমানতালে ব্যাটিং করতে পারতেন তিনি। তবে ওয়ানডেতে তাঁর আলাদা একটা কদর ছিল বরাবরই। অবশ্য সেখানে তাঁর গড়টা তাঁর সেই কদরের স্বপক্ষেই কথা বলে। ৪৮ গড়ে ব্যাটিং করতেন জহির আব্বাস। এর পাশাপাশি টেস্টে ৪৫ এর গড় রয়েছে তাঁর।
তাছাড়া পাঁচ হাজারের বেশি রান রয়েছে এই ফরম্যাটে। ওয়ানডেতে তাঁর করা রানের সংখ্যা ২৫০০ ছাড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে পেশির জোরে উপর ভর করেই ব্যাটিং করেন ব্যাটাররা। তবে জহির আব্বাস টাইমিংয়ে বিশ্বাসী ছিলেন বেশি। অসাধারণ সব শট খেলতেন তিনি দারুণ টাইমিংয়ে। নিঃসন্দেহে তিনি পাকিস্তানের সেরা ব্যাটারদের একজন।
- ইনজামাম উল হক
অলস সৌন্দর্য – এই উপমা দিয়ে আখ্যায়িত করা যাবে ইনজামাম উল হকের ব্যাটিংকে। অহেতুক সব রান আউটের কারণে নিজের ব্যাটিং গড়টা খুব বাড়িয়ে নিতে পারেননি তিনি। নতুবা আজ দারুণ এক গড়ের মালিক হতে পারতেন তিনি। এখন যে তাঁর গড়টা নেহায়েৎ মন্দ তা কিন্তু নয়। প্রায় ৫০ গড়ে তিনি রান করেছেন টেস্টে। অন্যদিকে, ওয়ানডেতে তাঁর গড় ৪০ এর ঘরে।
১২০টা টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন সেখানে তাঁর রান আট হাজার ছাড়িয়েছে। ব্যাটিং কিংবদন্তি ইনজামাম উল হক ৩৭৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। ওয়ানডে ফরম্যাটে তাঁর করা রান ছাড়িয়ছে দশ হাজার রানের মাইলফলক। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জেতা টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে তাঁর দ্রুতগতির অর্ধ-শতক পাকিস্তানকে ফাইনালের টিকিট কাটতে সহয়তা করেছিল।
- মোহাম্মদ ইউসুফ
একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারের এক শক্তপোক্ত ভিত্তি ছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। দারুণ স্টাইলিশ এই ব্যাটার তাঁর ক্যারিয়ার জুড়েই রানের স্রোতে ভেসেছেন আপন ছন্দে। বিশেষ করে ২০০৬ সালে এক পঞ্জিকা বর্ষে এই কিংবদন্তি ব্যাটার হাঁকিয়েছিলেন নয়টি শতক। সে বছর সব ফরম্যাট মিলিয়ে তিনি রান করেছিলেন ২৪৩৫।
উপমহাদেশের ব্যাটারদের অতিসাধরণ দুর্বলতা রয়েছে পেস বোলারদের সুইং এবং পেসের বিপক্ষে। সেদিক থেকে ভিন্ন ছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। টেস্টে ৫২ গড়ে তিনি রান করেছেন প্রায় সাত হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে, ৪১ গড়ে ওয়ানডেতে তাঁর করা রানের সংখ্যা দশ হাজার ছুঁইছুঁই। পাকিস্তানের সেরা ব্যাটারদের তালিকায় তাঁর অন্তর্ভুক্তি যেন অবধারিত।
- ইউনুস খান
সুইপ শটের মাস্টার হিসেবে ইউনুস খানের নামটা হয়ত সবার উপরেই আসবে। তিনি অস্বাভাবিকভাবে এই ঝুঁকিপূর্ণ শটটি পুরোপুরি রপ্ত করেছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার ইউনুস খান। স্পিন খেলতে পারতেন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে এমনটা নয় যে তিনি পেস আক্রমণের বিপক্ষে খাবি খেতেন সময় উপমহাদেশের বাইরে। সেখানেও তাঁর ব্যাট ছিল সদা হাস্যজ্জ্বল।
অনবদ্য ইউনুস খান তাঁর ক্যারিয়ারে ১০ হাজার রানের মাইল ফলক পার করেছেন টেস্ট ক্রিকেটে। এর পাশাপাশি ওয়ানডেতে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ৭২৪৯ রান। ১২৮ টেস্ট ৫২ এর বেশি গড়ে রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। তবে ওয়ানডেতে তাঁর গড়টা রয়েছে ত্রিশের ঘরে। তবুও তিনি ছিলেন আস্থাভাজন একজন মিডল অর্ডার ব্যাটার।
- জাভেদ মিয়াঁদাদ
পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ব্যাটার যে জাভেদ মিয়াঁদাদ সে বিষয় সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। তিনি বহুকাল ধরে ছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেটে মিডল অর্ডারের স্তম্ভ। ৫৩ গড়ে তাঁর ব্যাট থেকে টেস্টে রান এসেছে প্রায় আট হাজারেরও বেশি। তবে একটা বিষয়ে তাঁকে সমালোচনা সইতে হয়েছে।
প্রচলিত আছে তাঁর ব্যাটটা নাকি খুব একটা চলে না ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তাঁদের বিরুদ্ধে মিয়াঁদাদের ব্যাটিং গড় ছিল প্রায় ৩০। তাছাড়া ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ী দলেও ছিলেন তিনি। অভিজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে তাঁর উপর বেশ দায়িত্ব ছিল। তিনি যথাযথ পালনও করেছিলেন। নয় ম্যাচে পাঁচ হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেমি ফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি করে দলের শিরোপা জয়ে অবদান রেখেছিলেন তিনি।