পরম আরাধ্য এক রেকর্ড মানব

২০০৯ সালে হোবার্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক। শুরু থেকেই আলাদা একটা পরিচিতি পেয়েছিলেন এই তেড়েফুঁড়ে খেলার জন্য।

তিনি কপি বুক ব্যাটিংটা খুব একটা করেননি। ক্রিকেটের চিরায়ত ব্যাটিং টেকনিকের ধার ধারেননি। তবে, তিনি কার্যকর – সেটা যখন যে ফরম্যাট খেলেছেন, সে ফরম্যাটের ক্ষেত্রেই সত্য। আর আধুনিক সাদা বলের ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে ডেডিভ ওয়ার্নারকে অন্যতম সেরা এক মারকাটারি ব্যাটারই বলা যায়।

২০০৯ সালে হোবার্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক। শুরু থেকেই আলাদা একটা পরিচিতি পেয়েছিলেন এই তেড়েফুঁড়ে খেলার জন্য। শুরুর বছর রান সংখ্যায় তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেননি। সাত ম্যাচে মাত্র ১০৯ রান। তবে একটা হাফ সেঞ্চুরিতে ছিল বড় কিছু করবার প্রতিশ্রুতি। তারপরে ধীরে ধীরে মেলে ধরতে থাকেন নিজেকে। ২০১২ সালে পান প্রথম সেঞ্চুরি। তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি।

সেই থেকে এখন পর্যন্ত  অবসরের আগে খেলে ফেলেছেন ১৬১ ম্যাচ, যেটা অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে ১৮ তম সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের মধ্যে ষষ্ঠ রান সংগ্রাহক তিনি। এই ১৬১ ম্যাচে  ৪৫ গড়ে করেছেন ৬৯৩২ রান। ৯৭ স্ট্রাইক রেটই তাঁর জাত চেনানোর জন্য যথেষ্ট। ক্যারিয়ারে ২২ ওয়ানডে সেঞ্চুরি বলে দিচ্ছে তিনি কতটা ধারাবাহিক ছিলেন ব্যাটার হিসেবে। পুরো ওয়ানডে ইতিহাসেই এটা অষ্টম সর্বোচ্চ।

রেকর্ডবুক এলোমেলো করা এই ব্যাটারের আরেক রেকর্ড হলো এক ওয়ানডে ইনিংসে ২২ টা চার মারা, যেটা চতুর্থ সর্বোচ্চ। মারতে পারদর্শী এই ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে হাঁকিয়েছেন ১৩০ টি ছক্কাও। এত ছক্কা মারার নজির খুব একটা নেই ফরম্যাটে।

২০১৫ সালে তাঁকে দেওয়া হয় ওয়ানডে আর টেস্টের সহ অধিনায়কের দায়িত্ব। ততদিনে যে নিজেকে কতটা অপরিহার্য বলে প্রমাণ করেছেন দলের জন্য তার একটা বড় সমার্থক ছিল এই সিদ্ধান্ত। তবে সেই দায়িত্ব নিয়ে বিতর্কমুক্ত থাকতে পারেননি। স্যান্ডপেপার কেলেংকারিতে নাম এসে হয়েছিলেন নিষিদ্ধ পর্যন্ত।

২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছিলেন ১৭৩ রানের একটা ঝলমলে ইনিংস। তবে সেটা জেতার জন্য। ওয়ার্নারের পেছন পেছন ছোটা রেকর্ড ম্যাচেও ছিল উপস্থিত। তাঁর এই ইনিংস হারা দলের হয়ে খেলা সর্বোচ্চ রানের মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে।

ওয়ানডেতে তাঁর রয়েছে আরও বেশ কিছু রেকর্ড ব্যাটার হিসেবে। যেমন একটা ইনিংসে একটা দলের কত শতাংশ রান করেছেন এমন হিসেবে ২য় সেরা ইনিংস তাঁর। ২০২২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ১৪১ রানের মধ্যে ৯৪ ই ছিল তাঁর, যেটা ৬৬.৬৬ শতাংশ।

ছয় হাজার রানে পৌঁছতে নিয়েছিলেন মাত্র ১৩৯ ইনিংস, যেটা তৃতীয় সেরা। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি এবং ট্রাভিস হেড মিলে প্রথম উইকেটে তুলেছিলেন ২৮৪ রান, যেটা একদিনের ক্রিকেটে পঞ্চম সেরা ওপেনিং জুটি।

এরকম বহু রেকর্ডের অংশীদার ওয়ার্নার টেস্টে অবসর নিতেন পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই। এর সাথে সাথে এবার ওয়ানডেতেও অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দিলেন। সিডনি টেস্টের আগে জানিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং নিয়ে করতে হবে এখন নতুন চিন্তা।

এর অর্থ হল, বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেই শেষ ওয়ানডে ইনিংস খেলে ফেলেছেন। সেদিন তিন বলে সাত রান করেন, বাউন্ডারি দিয়ে ঝড়ের সংকেত দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ ইনিংসটা তাই ওয়ার্নারের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। তবে, সেদিনই বিশ্বকাপ হাতে নিয়েছেন আবারও। বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে বিদায় বলতে পারেন আর ক’জন!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...