যে কোনো খেলাতেই ফিটনেস খুবই জরুরী। ক্রিকেটেও এর ব্যতিক্রম হয় না। দীর্ঘদিনের ব্যবহারে কথাটা মোটামুটি ক্লিশে হয়ে গেছে। তবে, এটাও সত্য যে, ফিটনেসের এই ‘মিথ’-কে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন অনেকেই।
- জেসি রাইডার (নিউজিল্যান্ড)
মাঠে ছিলেন বিধ্বংসী ওপেনার, মাঠের বাইরে ছিলেন রাফ অ্যান্ড টাফ। ২০০৮ সালে যখন নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন, তখন ‘খেলার জন্য অতিরিক্ত মোটা’র তকমা পেয়ে যান। যদিও, তিনি এই কথাকে ভুল প্রমাণ করেন।
১৮ টি টেস্ট, ৪৮ টি ওয়ানডে ও ২২ টি টি-টোয়েন্টি খেলেন। খামখেয়ালি আর ইনজুরির জন্য আগেভাগেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার আগে তিন হাজারের ওপর আন্তর্জাতিক রান করেন। তাঁর মিডিয়াম পেস বোলিংটাও মন্দ ছিল না।
- মোহাম্মদ শাহজাদ (আফগানিস্তান): উইকেটরক্ষক
আফগানিস্তানের গুটিকয়েক খ্যাতনামা ক্রিকেটারের একজন তিনি। কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগেও খেলার সুযোগ হয়েছে। তিনি সম্ভবত ক্রিকেটের ইতিহাসেই সবচেয়ে ওজনদার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
ফিটনেস ইস্যুতে তিনি বেশ কয়েকবার বাদ পড়েছেন দল থেকে। শাহজাদের ব্যাটিং টেকনিকে বড় ধরণের সমস্যা আছে, তবে তিনি বেশ মারমুখী। তিনি সাড়ে চার হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রানের মালিক।
- ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া)
আশির দশকে অস্ট্রেলিয়া দলের ওপেনার ছিলেন ডেভিড বুন। ১৯৮৯ সালে অ্যাশেজের এক রাতে নাকি ৫২ ক্যান বিয়ার খেয়েছিলেন এই বুন। যদিও, তিনি শরীরের জন্য নয় পরিচিত অন্য একটা কারণে।
তিনি ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক। ৭৫ রান করে সেই ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন তিনি। সেবারই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জেতে অস্ট্রেলিয়া।
- ডব্লিউ জি গ্রেস (ইংল্যান্ড)
তাঁকে বলা হয় ফাদার অব ক্রিকেটার। কেউ কেউ বলেন গডফাদার অব ক্রিকেট। কেবল ওজনের বিবেচনাতেই নয়, ক্যারিয়ার জুড়ে যেসব অতিমানবীয় অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়েছেন, তাতে দিব্যি যে কোনো বিশ্বসেরা একাদশে ঠাঁই দেওয়া যায় এই কিংবদন্তিকে।
তিনি বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। টেস্ট খেলেছেন ২২ টি। তবে, প্রথম শ্রেণিতে ছিলেন বিশ্বসেরা। সেখানে ৫৪২১১ রান ও ২৮০৯ টি উইকেট পেয়েছেন এই ইংলিশ ক্রিকেটার। ডান হাতি ব্যাটিংয়ের সাথে তিনি ছিলেন মিডিয়াম ফাস্ট বোলার।
- ইনজামাম উল হক (পাকিস্তান)
ক্রিকেট ইতিহাসে মোটাদের মধ্যে তিনিই সেরা। সাবেক এই পাকিস্তানি অধিনায়ক ছিলেন অলস ব্যাটিং আভিজাত্যের অপর নাম। পাকিস্তানের হয়ে জিতেছেন ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ। অকল্যান্ডের সেমিফাইনালে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৩৭ বলে ৬০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস।
ওয়ানডেতে এখনও তিনি পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। টেস্টে রানের দিক থেকে তাঁর আগে আছেন কেবল ইউনুস খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে এখন বোর্ডের চাকরি করেন ইনজি।
- আকরাম খান (বাংলাদেশ): সহ-অধিনায়ক
বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুরুর দিককার নায়ক তিনি। ১৯৯৭ সালে তাঁর নেতৃত্বেই আইসিসি ট্রফি জিতে বিশ্বকাপ খেলার টিকেট পায় বাংলাদেশ দল। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শুরুতেও ছিলেন তিনি। সাদা পোশাকে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও ওয়ানডেতে নিজের সক্ষমতা দেখিয়েছেন।
অল্পের জন্য তিনি এক হাজার রানের মাইল ফলকে পা রাখা প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হতে পারেননি। ওই আমলে ওয়ানডেতে পাঁচটি হাফ-সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ও এসেছিল তাঁর নেতৃত্বে।
- অর্জুনা রানাতুু্ঙ্গা (শ্রীলঙ্কা): অধিনায়ক
শ্রীলঙ্কার তো বটেই, ক্রিকেটের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা একজন অধিনায়ক তিনি। বাড়তি ওজন রানাতুঙ্গার ক্যারিয়ারে কখনোই বাঁধা হয়নি। বরং সাহসী ব্যাটিং ও নেতৃত্বগুন দিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে তিনি শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দেন।
খেলোয়াড়ী জীবন হিসেবে ক্রিকেট প্রশাসন সামলেছেন। এখন ব্যস্ত রাজনীতিতে। একাদশে তিনিই একমাত্র বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। ফলে, অধিনায়ক কে হবেন – সেই প্রশ্নে দ্বিতীয়বার ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
- ডোয়াইন লেভেরক (বারমুডা)
তিনি ক্রিকেট মাঠের বিখ্যাত এক ‘মোটা’। বিশালদেহী এই ক্রিকেটারকে অবশ্য খুব অল্প সময়ের জন্য দেখেছে বিশ্ব ক্রিকেট। ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডা দলের হয়ে এসেছিলেন তিনি।
গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বিশাল ১২৭ কেজি ওজনের শরীর নিয়ে স্লিপে ঝাঁপ দিয়ে রবিন উথাপ্পার অবিস্মরণীয় এক ক্যাচ ধরে আলোচিত হন ডোয়াইন লেভেরক। বাস্তব জীবনে তিনি নাকি একজন জেলার – মানে জেলখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা।
- রাকিম কর্নওয়াল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
সাড়ে ছয় ফিট উচ্চতা। ওজন ১৪০ কেজি। এই বিশাল দেহী ক্রিকেটার রাকিম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক প্রস্তুতি ম্যাচে ৫৯ রান করে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন। অ্যান্টিগার এই তরুণের নাম হয়ে যায় ‘মাউন্টেন ম্যান’। কালক্রমে জাতীয় দলেও ঠাঁই করে নেন তিনি। এখন তিনি জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত টেস্ট খেলেন।
- রমেশ পাওয়ার (ভারত)
আধুনিক ক্রিকেটে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ফিটনেস বরাবরই দারুণ। যদিও, এই তালিকায় ব্যতিক্রম রমেশ পাওয়ার। ভারতীয় এই স্পিনার কিছুদিন জাতীয় দলেও খেলেছেন বিশাল শরীর নিয়ে। সব সময় সানগ্লাস পরে বোলিং করতেন।
ওজন আর এই সানগ্লাস বাদে তাঁকে মনে রাখার মত আর কোনো কারণ নেই। খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করে এখন তিনি পুরোদস্তর কোচ বনে গিয়েছেন।
- মার্ভ হিউজ (অস্ট্রেলিয়া)
দশাসই একটা গোঁফ আর লাগামহীন মুখ – অস্ট্রেলিয়ান এই পেসারকে ব্যাখ্যা করতে এটুকুই যথেষ্ট। তিনি ছিলেন স্লেজিং শিল্পী। ক্রিকেট মাঠে স্লেজিং তাঁর হাত ধরেই নতুন এক মাত্রা পায়।
তাঁর স্লেজিং নিয়ে অনেক গল্পও আছে। পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদ একবার তাঁকে বলেছিলেন, ‘মার্ভ, ইউ আর আ বিগ, ফ্যাট বাস কন্ডাক্টর।’ কয়েক বল পরেই মিয়াঁদাদ আউট হয়ে গেলেন। আউট হয়ে যখন মাঠ ছাড়ছেন তখন মার্ভ সামনে এসে বললেন, ‘টিকিট প্লিজ।’
- দ্বাদশ ব্যক্তি: ইয়ান অস্টিন (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ড ক্রিকেটের নব্বই দশকের এক কাল্ট ফিগার তিনি। যদিও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় কোনো সাফল্য তাঁর নেই। ১৯৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের সূচনা করা এই ফাস্ট বোলারের ক্যারিয়ার থামে মাত্র নয়টি ওয়ানডেতে। সেই বছর উইজডেনের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন ছিলেন এই অস্টিন।
কাউন্টি দল ল্যাঙ্কাশায়ারে বড় একটা সময় কাটান ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বে। ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন, ‘আমার দেখা সেরা ডেথ বোলার হলেন অস্টিন।’