ডেভ রিচার্ডসন, উইকেটরক্ষক থেকে প্রধান নির্বাহী

দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন করে ফিরে আসার পর দলটির মেরুদণ্ডের মত ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে দেশটির উইকেটের পিছনে এক ভরসার নাম হয়ে ছিলেন। একটি পুরোদস্তুর ক্রিকেটীয় পরিবারে জন্য নেয়া এই ক্রিকেটার নিজের পুরো জীবনকেই উৎসর্গ করেছেন ক্রিকেটে। ক্রিকেট মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার পরেও কাগজপত্র হাতে দৌড়াদৌড়ি করেছেন ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য।

দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন করে ফিরে আসার পর দলটির মেরুদন্ডের মত ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে দেশটির উইকেটের পিছনে এক ভরসার নাম হয়ে ছিলেন। একটি পুরোদস্তুর ক্রিকেটীয় পরিবারে জন্য নেয়া এই ক্রিকেটার নিজের পুরো জীবনকেই উৎসর্গ করেছেন ক্রিকেটে। ক্রিকেট মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার পরেও কাগজপত্র হাতে দৌড়াদৌড়ি করেছেন ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য।

১৯৫৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড জন রিচার্ডসন। যাকে পুরো ক্রিকেট দুনিয়া চেনে ডেভ রিচার্ডসন নামে। ডেভের বাবা জন হেনরি রিচার্ডসনও ছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। ওদিকে তাঁর ভাইও ক্রিকেট খেলেছেন। তাঁর কাজিনও দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছেন। এখন তাঁর ছেলে মাইকেল রিচার্ডসন খেলছেন জার্মানির হয়ে।

ফলে ক্রিকেটটা ছিল ডেভ রিচার্ডসনের রক্তেই। এই পরিবারে একমাত্র তিনিই খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট যখন নিষেধাজ্ঞায় তখনই দেশটির ক্রিকেটে পরিচিত নাম ডেভ। দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ১৯৯১ সালে নির্বাসন থেকে ফিরলো তখন থেকে দলটির উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরের সাত বছর তিনি ছিলেন উইকেটের পিছনে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখ।

দেশটির হয়ে মোট ৪২ টি টেস্ট খেলেছেন ডেভ। সেখানে তাঁর ঝুলিতে আছে ১৫০ টি ক্যাচ। তবে ডেভের কিপার ক্যারিয়ারে একটি মজার ঘটনা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে তাঁর সময় ছিল বাঘা বাঘা সব পেসার। অ্যালেন ডোনাল্ডশ, শন পলক, ল্যান্স ক্লুজনারদের মত পেসারদের বলে কিপিং করেছেন তিনি। তবে ভালো স্পিনারদের বলে খুব বেশি কিপিং করার সুযোগ হয়নি তাঁর। ফলে স্ট্যাম্পিং করার ভাণ্ডার তাঁর প্রায় শূন্য। ১৫০ টি ক্যাচ নেয়া ডেভ স্ট্যাম্পিং করেছেন মাত্র ২ বার।

নিজের ৩৩ তম টেস্ট ম্যাচে প্রথমবারের মত স্ট্যাম্পিং করতে পারেন এই কিপার। অথচ সেই সময় তাঁর ঝুলিতে আছে ১১৯ টি টেস্ট ক্যাচ। পরে নিজের ৪০ তম টেস্টে করেছিলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ও শেষ স্ট্যাম্পিং। টেস্টে অন্তত ১৫০ টি ক্যাচ নেয়া কিপারদের মধ্যে সবচেয়ে কম স্ট্যাম্পিং করেছেন তিনিই।

ডেভ রিচার্ডনসের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের এই সংখ্যাকে আপনি কলঙ্ক বলতেই পারেন, অথবা দুর্ভাগ্যও বলতে পারেন। ডেভই প্রথম ক্রিকেটার উইকেটকিপার যিনি ব্রিটিশ না হয়েও ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন।

তাঁর আগে যেই কয়েকজন উইকেটরক্ষণ ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন তাঁদের সবাই ছিলে ইংল্যান্ডের। ১৯৯৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে এই কীর্তি গড়েন ডেভ। ওই সিরিজে ৮২.৩৩ গড়ে ২৪৭ রান করেছিলেন তিনি। এছাড়া কিপিং গ্লাভস হাতে নিয়েছিলেন ১৬ টি ক্যাচ।

তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে এই সৌভাগ্য হয়নি ডেভের। সেই সময় ওয়ানডে ক্রিকেটেও কিপারদের ম্যান অব দ্য ম্যাচ ঘোষণা করার তেমন রীতি ছিল না। ফলে ১২২ ওয়ানডে ম্যাচ খেলা ডেভের ক্যারিয়ারে নেই কোন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার।

ওয়ানডে ক্রিকেটে ভেডের দুর্ভাগ্যের তালিকা আরো বড়। ১৯৯২ সালে সেই ১ বলে ২২ রানের ঘটনা সবারই মনে থাকার কথা। সেই বলটাতে ক্রিজের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডেভ। ডেভের শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এরপর আর বিশ্বকাপে কখনো ব্যাট করার সুযোগ পাননি তিনি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের ঠিক আগেই ইনজুরিতে পড়ে যান।

তবে গ্লাভস হাতে ওয়ানডে ক্রিকেটেও ছিলেন উজ্জ্বল। ১২২ ওয়ানডে ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৪৮ টি ক্যাচ। ওয়ানডেতে ১৭ টি স্ট্যাম্পিং ও করেছিলেন তিনি। ওদিকে ওয়ানডেতে প্রায় ২০ গড়ে হাজার খানেক রানও আছে এই উইকেট কিপারের ঝুলিতে। ৪২ টেস্টেও রান করেছেন ২৪.২৬ গড়ে। টেস্টে ৮ টি হাফ সেঞ্চুরি ও ১ টি সেঞ্চুরি সহ করেছেন ১৩৫৯ রান।

১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ও ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ক্রিকেট মাঠকে বিদায় জানালেও ক্রিকেটটাকে ছেড়ে দিতে পারেননি। ক্রিকেটের প্রশাসনিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০০২ সালে হন আইসিসির প্রথম জেনারেল ম্যানেজার। এরপর ২০১২ সালে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সংস্থাটির সিইও পদে নিয়োগ পান ডেভ।

আইসিসির সফলতম সিইও দের একজন ছিলেন ডেভ রিচার্ডসন। তিনি নিরপেক্ষ ভেন্যু গুলোর পিচ তৈরির কাজ আইসিসির নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত আইসিসির এই দায়িত্ব পালন করেন ডেভ রিচার্ডসন। তার সময়ে ক্রিকেটে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক অনেক রকম পরিবর্তনই এসেছে। সেটা অবশ্য ভিন্ন এক আলোচনা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...