পাকিস্তান টু চট্টগ্রাম, ভায়া ওমান

একটা ইনসুইং ডেলিভারি। সোজা গিয়ে আঘাত করল মিডল স্ট্যাম্পে। স্বস্থান থেকে ছিটকেই গেল স্ট্যাম্প। এমন একটা ডেলিভারি যেকোন পেসারের জন্যেই পরম আরাধ্য। বিলাল খান তেমন একটি ডেলিভারির প্রস্তুতিই যেন সেরে নিচ্ছেন। পাকিস্তানের পেস স্বর্গ থেকে উঠে এসেছেন তিনিও। পেসারদের ডিএনএ বেশ ভালভাবেই রয়েছে তার মধ্যে।

বিলাল খান, পাকিস্তানেই তার জন্ম। সেখানেই তিনি ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছেন। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন তিনি। ঐ যে শুরুতেই বলা পাকিস্তানের পেসারদের আঁতুড়ঘর থেকে ক’জনই বা নজর কাড়তে পারেন? বিলাল খান সম্ভবত তেমনই এক দ্বিধায় ছিলেন জর্জরিত।

সে কারণেই সম্ভবত ওমান থেকে পাওয়া এক নিতান্ত সাধারাণ চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারেননি। বিশ্ব ক্রিকেটে শাসন করবার চিন্তা ঝেড়ে ফেলে তিনি পাড়ি জমান ওমানে। তবে মানুষ যা মন থেকে চায় সম্ভবত কোথাও না কোথাও গিয়ে তার সেই চাহিদাটা অপূর্ণ থেকে যায় না। বিলাল খানের ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণের সেই সুযোগটি অবশ্য পেয়ে যান।

তবে নিজের জন্মভূমির হয়ে নয়। ওমান জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে অভিষেক ঘটে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সহযোগী দেশটির হয়ে ২০১৫ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মাধ্যমে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু হয়। এরপর তো রীতিমত ওমানের বোলিং আক্রমণের মূল সেনাপতি রুপেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন তিনি।

তবে একটা সময় ওমানের প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাকে সম্মুখীন হতে হয়েছিল প্রতিবন্ধকতার। আইসিসির নিয়মের গ্যাড়াকলে পড়ে বেশ খানিকটা সময় তাকে কাটাতে হয়েছে ডাগআউটে বসে। সেই সময়টা অতিবাহিত করে তিনি একদিন সুযোগ পেলেন। ২০১৫ সালে হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই নিজের জায়গাটা আদায় করে নেন বিলাল। সেই ম্যাচে বা-হাতি এই পেসার নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।

ঠিক একইভাবে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের একাদশে। শুরুর দিকে অবশ্য ছন্নছাড়া বোলিংই করেছেন। উইকেটের দেখা পাননি প্রথম ম্যাচে। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাংলাদেশের কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। আর এরপরই উইকেটের ট্যালিটায় আস্তে আস্তে নতুন নতুন সংখ্যা যুক্ত হতে থাকে।

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স গত আসরের সকল বিতর্ক ছাপিয়ে এবার রয়েছে দারুণ ফর্মে। দলটির খেলোয়াড়দের মাঝে রসায়নটাও জমেছে বেশ। সেই সুফলই যেন পাচ্ছে ফ্রাঞ্চাইজিটি। আর দলের সাফল্যে বিলাল খানও নিজের শতভাগ অবদান রেখে যাওয়ার চেষ্টাই করছেন প্রতিনিয়ত।

এখন অবধি ১০টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে তিনটি উইকেট এখন পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ। মাত্র ২৪ রান খরচ করে সিলেটের তিন টপ অর্ডার ব্যাটারকে নিজের পকেটে পুরেছিলেন বিলাল খান। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতেই নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন। সামনেই যে চট্টগ্রাম পর্ব। মাঠের অধিকাংশ দর্শকই পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাব চট্টগ্রামক চ্যালেঞ্জার্সকে।

সেই পর্বে চট্টলাবাসীদের আনন্দে ভাসাতে নিশ্চয়ই চাইবেন বিলাল খান। নিজের কার্য্যকর সব ইনসুইংয়ে কুপকাত করবেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের, সেটাই সম্ভবত টিম ম্যানেজমেন্টও প্রত্যাশা করছে তার কাছ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link