পুরনো রাজার নতুন রাজ্য

নামটাই তাঁর যেন একরকমের রাজকীয়তা প্রকাশ করে। পুরো নাম ব্রেন্ডন আলেকজান্ডার কিং। মানে একই সাথে তিনি রাজা, আবার যোদ্ধা। যদিও, আদতে তিনি একজন ক্যারিবীয় ক্রিকেটার। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের হয়ে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে।

২০১৯ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) কোয়ালিফায়ারে ব্রেন্ডন কিং ৫৯ বলের সেঞ্চুরি করে ধারাভাষ্যে ইয়ান বিশপের মুখে ব্যাটিং রয়্যালটি হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছিলো। কিংসের হয়ে ৭২ বলে অপরাজিত ১৩২ রানের ইনিংসটি এখনও সিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। জোহান বোথা, যিনি সেই সময়ে গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সের কোচ ছিলেন তিনি তা দেখে আবগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন। ম্যাচটি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে একজন নতুন তারকার উত্থানের সংকেত দিয়েছিলো।

কিংকে ২০১৯ সালে ভারত ও  আফগানিস্তান এর বিপক্ষে খেলার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাদা বলের দলে ডাকা হয়। কিন্তু কিং-এর সিপিএল এর গুণমান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্লান হয়ে যায়। এবং তাকে ২০১৯-২০ সময়কালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেট থেকে বাদ দেওয়া হয়।

তারপরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান সফরে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পাওয়ার পরে, কিং আবারও জ্বলে উঠেছেন। তবে একজন মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসাবে। আন্তর্জাতিকে অভিষেকের আগে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টসের হয়ে মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবেই তিনি সিপিএলে খেলতেন।

কিন্তু বোথা তাকে অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সে হার্ড-হিটিং ওপেনারে রূপান্তরিত করেছিলেন। কিংয়ের স্বপ্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তাঁর আইডল রামনারেশ সারওয়ান এর মতো মিডল অর্ডারে খেলা। সারওয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা হিসাবে তিপ্পান্ন নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামেন।

শুক্রবার কুইন্স পার্ক ওভালে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে, যে মাঠে সারওয়ান অনেকগুলি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন, কিং সেখানে তার নিজের মতো করে একটি চমৎকার ইনিংস খেলেছেন। যদিও তিনি তার দলকে ভারতের বিরুদ্ধে জেতাতে পারেননি। ৩০৯ রান তাড়া করতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ২ উইকেটে ১৩৩ রান করে, তিনি তখন চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন।

নিকোলাস পুরান এবং  রোভম্যান পাওয়েলও সাজঘরে ফিরে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থান দাড়ায় ৩৭ তম ওভারে ৫উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান। তবে আতঙ্কিত না হয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন ব্রেন্ডন কিং। নিম্ন মিডল অর্ডারের সাথে সাথে জুটি বেঁধে রান তাড়ায় মনোনিবেশ করেছিলেন। ৪৪.৩ ওভারে চাহালের বলে শ্রেয়সের হাতে ধরা পড়েন কিং। ২টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৬৬ বলে ৫৪ রান করে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা লাগান কিং। যদিও শেষ পর্যন্ত ৩০৫ রানে থেমে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা। জিতে যায় ভারত।

ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কিং বলেন, ‘যদিও ভারত ৩০০-এর বেশি রান করেছিল, এটি একটি সুন্দর ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ছিল। এটি এমন একটি উইকেট ছিল না যেখানে আপনাকে অনেক ঝুঁকি নিতে হবে, আপনি শুধু স্ট্রাইক ঘোরান এবং খেলাটিকে যতটা সম্ভব চালিয়ে নিয়ে যান। আমিও ঠিক এই একই চেষ্টাই করেছি।’

ব্রেন্ডন কিং ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিডল অর্ডারের অনেক শক্তিশালী ক্রিকেটার হয়ে উঠবেন শীঘ্রই। কারণ তাঁর মধ্যে সেই প্রতিভা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রত্যাবর্তনের পরের যুগটা হোক ব্রেন্ডনের দ্যুতি ছাড়ানোর সময়। ক্রিকেটের দুনিয়ায় রাজত্ব করুক ব্রেন্ডন কিং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link