বিজয়ী ব্রেন্ডনের হারিকেন

ক্রিকেট ইতিহাসের এক মারকুটে তারকা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। বলকে তাঁর মত পেটাতে পারা ব্যাটার ক্রিকেট ইতিহাসেই বিরল। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি – ম্যাককালামের লক্ষ্য শুধুই বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করা। টেস্ট ফরম্যাটকে ধৈর্য পরীক্ষার ফরম্যাট বলা হলেও ম্যাককালাম এই ফরম্যাটেও রান করেছেন ঝড়ের গতিতে। করেছেন সাদা পোশাকে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও!

  • ৯৭ প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড; লর্ডস, ২০০৮

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে ৪১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন বিপাকে নিউজিল্যান্ড। জেমস মার্শালের সাথে জুটি বাঁধলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।

এক প্রান্তে বাকিরা আসা যাওয়ার মিছিলে থাকলেও আরেক প্রান্তে দ্রুত রান তুলতে থাকেন ম্যাককালাম। ব্ল্যাকক্যাপস তারকার ৯৭ বলে ২ ছক্কা ও ১৩ চারে ৯৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ২৭৭ রান করতে সমর্থ হয় নিউজিল্যান্ড। মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন ম্যাককালাম! অবশ্য বৃষ্টি বাঁধায় ম্যাচটি ড্র হয়।

ওই সিরিজের আগেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) উদ্ভোধনী ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ৭৩ বলে ১৫৮ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন।

  • ১০৪ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া; ওয়েলিংটন, ২০১০

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংস অজিদের করা ৪৫৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৫৭ রানেই গুড়িয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। ফলোঅনে পড়ে ৩০২ রানে পিছিয়ে থেকে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে ব্ল্যাকক্যাপরা।

১৮৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন ইনিংস হারের মুখে দাঁড়িয়ে নিউজিল্যান্ড! ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সাথে দুর্দান্ত জুটির পথে অনবদ্য এক সেঞ্চুরি করে দলকে ইনিংস হারের লজ্জা থেকে বাঁচান ম্যাককালাম। ১৮৭ বলে ১৩ চার ও ১ ছয়ে ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন এই তারকা। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেরে যায় নিউজিল্যান্ড!

  • ৩০২ প্রতিপক্ষ ভারত; ওয়েলিংটন, ২০১৪

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ শামির বোলিং দাপটে মাত্র ১৯২ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। জবাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাট কর‍তে নেমে আজিঙ্কা রাহানের সেঞ্চুরিতে ৪৩৮ রান সংগ্রহ করে ভারত। ২৪৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় নিউজিল্যান্ড। বড় ব্যবধানে ইনিংস হার তখন চোখ রাঙাচ্ছিল ব্ল্যাকক্যাপসদের। সেই সময় ব্যাট হাতে দলের ত্রানকর্তা হিসেবে আসেন ম্যাককালাম।

ষষ্ঠ উইকেটে বিজে ওয়াটলিংয়ের সাথে ৩৫২ রানের ও সপ্তম উইকেটে জিমি নিশামের সাথে ১৭৯ রানের অবিশ্বাস্য দুই জুটির পথে ৩০২ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন ম্যাককালাম! ৪ ছক্কা ও ৩২ চারে ৩০২ রানের ইনিংসে ম্যাচের মোড় পাল্টে দেন এই তারকা। ওয়াটলিং ১২৪ ও নিশাম করেন ১৩৭ রান। শেষ পর্যন্ত ওই ম্যাচ ড্র হয়! নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রথম ত্রিপল সেঞ্চুরির মালিক হন ম্যাককালাম!

  • ২০২ প্রতিপক্ষ পাকিস্তান; শারজাহ, ২০১৪

সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। প্রথম দুই টেস্টে ১-০ তে এগিয়ে স্বাগতিকরা। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে মোহাম্মদ হাফিজের ১৯৭ রানে একক দাপুটে ইনিংসে ৩৫১ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিংয়ে ঝড় তোলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। দলীয় ৫১ রানে ল্যাথাম ফিরলেও কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ২৯৭ রানের জুটি গড়েন ম্যাককালাম!

এই জুটির পথে ১৮৮ বলে ১১ ছক্কা ও ২১ চারে ২০২ রানের অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন তিনি! ৭৮ বলে সেঞ্চুরি করে নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্টে ওই সময় দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক বনে যান তিনি! ওই ইনিংসে ৬৯০ রান করে ব্ল্যাকক্যাপসরা। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৯ রানে গুড়িয়ে গেলে ইনিংস ও ৮০ রানের জয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় নিউজিল্যান্ড।

  • ১৯৫ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা; ক্রাইস্টচার্চ, ২০১৪

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেই টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে নিউজিল্যান্ড। ৮৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন চাপের মুখে ব্ল্যাকক্যাপসরা। সেখান থেকে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ১৮ চার ও ১১ ছক্কায় ১৩৪ বলে ১৯৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি।

১৪৬ স্ট্রাইক রেটে এই মাস্টারক্লাস খেলেন ম্যাককালাম। ম্যাককালাম দাপটে ৪৪১ রান করে নিউজিল্যান্ড। ওই টেস্টে ৮ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিধ্বংসী ইনিংসগুলোর একটি ছিল ম্যাককালামের ১৯৫ রানের সেই ইনিংসটি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link