খুশি, বড্ড বেশি খুশি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এই অনুভূতি অবশ্য বলে বোঝাবার নয়। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার সুযোগ পেয়েছেন প্রত্যাবর্তনের। তিনি যেখানে ভেবেছিলেন একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি, সেখানে নতুন করে দেখছেন আশার আলো। বার বার উপেক্ষিত থাকার পর টেস্ট দলে আবার পেয়েছেন সুযোগ। ম্যাক্সওয়েলের জন্য এ যেন এক আনন্দঘন মূহুর্ত।
২০১৮ সালে অবশ্য ম্যাক্সওয়েল ভেবে ফেলেছিলেন তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে গেছে। সেখান থেকে টেস্ট দলে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো। একটা সুযোগের পর আবারও সাদা পোশাকে ৩৩ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার নতুন আলোচনায়। ক্রিকেট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্ত-সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া সমর্থনে পুনরায় ফেরার ইচ্ছেটাও আরও দৃঢ় হয়েছে ম্যাক্সির।
এক সাক্ষাৎকারে ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘২০১৮ সালে যখন আমি দুবাইতে অস্ট্রেলিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এ দলের সফরে ছিলাম না। তখন আমার মনে হয়েছে আমার পাশে কেউ নেই। এখন আমার পাশে মনে হচ্ছে সবকিছু আছে, সবকিছু যেন আমার সাথে আছে; ৪-৫ বছর আগে যেটা ছিল একদম বিপরীত। মানুষ খেলোয়াড় হিসেবে আমাকে যেভাবে দেখে, সে জায়গায় ব্যক্তি মনোভাবেও বেশ পরিবর্তন এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এটা বুঝতে পেরেছি এখানেই শেষ হচ্ছে না, আমি আরেকটা নতুন সু্যোগ পেয়েছি। আমি খুব উত্তেজিত। খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। পাঁচ বছর আগে যখন শেষ টেস্ট খেলেছিলাম, আমার মনে হলো আমি সেরা ফর্মে ছিলাম। কিন্তু এরপর আর একটা টেস্টও খেলার সুযোগ পাইনি। আমি ভেবেছিলাম খুব বেশি ভুল না করেও আমি সুযোগ হারালাম! সেখান থেকে আরেকটা সুযোগ পাওয়া সত্যি আমার জন্য বিশেষ প্রাপ্তি।’
পাঁচ বছর আগে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া ম্যাক্সওয়েল আর এখনের ম্যাক্সওয়েলের মাঝে পার্থক্য অনেক। ওই বছর ২০১৭ সালে মার্চে রাঁচিতে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান ম্যাক্সওয়েল। ছয় মাস বাদে চট্রগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটেই দ্বিতীয় টেস্টে জয় পায় অজিরা।
এরপর ২০১৭-১৮ অ্যাশেজ সিরিজে ম্যাক্সওয়েলকে বাদ দিয়ে নির্বাচকরা নিলেন শন মার্শকে। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্কোয়াডে ডাক পেলেও অসুস্থতার জন্য আর সুযোগ পাননি তিনি। ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথদের নিষেধাজ্ঞার পরেও দলে জায়গা হয়নি ম্যাক্সির। এরপর নিজেকে রঙিন জার্সির অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।
ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘আমি মনে করি আমি কেবল নিজের উপর চাপ কমিয়েছি। আমার মনে হয় আমি ক্যারিয়ারের ওই সময়টা পার করে এসেছি, যখন একটা বাজে শট খেলে আউট হলে মানুষ সমালোচনা করবে বা নিজের প্রতি নিজে রাগ হবো। আমি মনে করি আমি ওই অধ্যায়টা পার করে এসেছি। আমি জানি আমি কি করতে চাচ্ছি। আমি জানি দল আমার কাছ থেকে কি চায়। তাই আমার মাইন্ডসেট শুধু ওই কেন্দ্রিক থাকবে। দলের সাথে থাকতে পেরে ভাল লাগছে। আশা করি দলকে টেস্ট সিরিজ জিততে সাহায্য করতে পারবো। আমি মনে করি গত কয়েক বছরে ড্রেসিং রুমেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। একজন একজনকে যেভাবে সমর্থন করে। আপনি কারো সম্পর্কে কারো কাছ থেকে বাজে শব্দ শুনবেন না। সবার কাছ থেকে এই ধারাবাহিক সমর্থন পাওয়াটা বেশ ভাল লাগছে।’
আড়াই বছর ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও খেলেননি ম্যাক্সওয়েল। টেস্টে প্রত্যাবর্তনটাও নির্ভর করছে ট্রাভিস হেডের ফিটনেসের উপর। এমনকি এই চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে টেস্টে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারটাও বিশেষভাবে মাথায় রাখতে হচ্ছে।
এই অজি তারকা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় ২৭ বছর ক্রিকেট খেলা, অনুশীলন করা এবং টেস্ট ক্রিকেটার হতে চাওয়া – সব মিলিয়ে একটা বিশেষ কিছু অনুভব করছি। শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলিনি, তার মানে এই না যে আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। আমি আমার খেলাটাকে ভিন্ন ফরম্যাটেই মধ্যে দিয়ে ঠিক প্রস্তুত করেছি। আমি নতুন করে দলের জন্য ভাল একটা ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়েছি, আর আমি এটার অপেক্ষাই করছি।’
২০১৫ সালের দিকে অনেকেরই মনে হচ্ছিল টেস্ট ফরম্যাটেও থিতু হবেন ম্যাক্সওয়েল। তিনি নিজেও বলেছিলেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট সেরা ফরম্যাট। ক্রিকেটের দীর্ঘ এই ফরম্যাটে তিনি সাবলিলভাবে ব্যাট করতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে সাত বছর বাদে, টেস্টে থিতু হতে না পারলেও এখনও নিজের মানসিকতা বদলাননি এই তারকা।
ম্যাক্সি বলেছেন, ‘আমি মনে করি আমার মধ্যে দীর্ঘ সময় ব্যাট করার একটা উত্তেজনা কাজ করছে, মাথায় কোনো রান রেটের চাপ থাকবে না এবং কোনো নির্দিষ্ট রানের লক্ষ্য টানা থাকবে না। এই কন্ডিশনে ব্যাট করতে চাই এবং এই ফরম্যাটটা উপভোগ করতে চাই ভালভাবে। বল যখন বাঁক করবে বা অনেক ঘুরবে – এটাই আপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এখন অনেক উইকেট দেখি যেখানে ব্যাটারদের জন্য ব্যাট করাটা খুব বড় চ্যালেঞ্জের।’
ম্যাক্সওয়েলের জন্য মজার মুহূর্তটা এখন আগের চেয়ে খানিকটা বেশি। তাঁর জন্য যে অপেক্ষা করছেন আরও এক মূহুর্ত। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে নতুন ‘ব্যাগি গ্রিন’ ক্যাপ স্পর্শ করবেন আরও একবার। এই নতুন যাত্রায় অবশ্য পাশে পাবেন সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে।
এই অজি তারকা বলেন, ‘আগের ব্যাগি গ্রিন ক্যাপের গ্লাসটা ভেঙে গেছে। ক্যাপটাও দূর্ভাগ্যবশত ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। আসলে এগুলো ভিজলে ভালভাবে শুকায় না। এমনটা অনেকের সাথেই হয়েছে। তাই আমার আরেকটি ক্যাপ লাগবে এই সফরে।’
তবে এটা তখন-ই তিনি পাবেন, যদি তিনি গল টেস্টের একাদশে থাকেন। হয়তো দেখা মিলবে একটা নতুন শুরুর, ‘অনেকেই ভেবেছিল আমার জন্য সব শেষ হয়ে গেছে।’
অপেক্ষা এখন ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট খেলার। প্রায় পাঁচ বছর জাতীয় দলে টেস্ট ফরম্যাটে ফেরার মঞ্চটা নিশ্চই স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন এই অজি তারকা।