ভারতকে আরেকবার বিশ্বজয়ের আনন্দ এনে দিলেন তিনি। ইয়াশ ধুলের নেতৃত্বে ভারত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতলো পঞ্চমবারের মত। অথচ ভারত যুব দলের এই অধিনায়কই কিনা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন প্রায়। ভারত দলের মোট ৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে এই অধিনায়কও ছিলেন।
বিশ্বকাপের মাঝে করোনা আক্রান্ত হয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে পারেননি। সেই ম্যাচের আগেই করোনা পজিটিভ হন। এরপর প্রথল লেগের কোন ম্যাচই আর খেলা হয়নি ইয়াশ ধুলের। এমন বিশ্ব আসরে গিয়ে এত বড় একটা ধাক্কা। যেকোন আঠারো-উনিশ বছরের ছেলের জন্যই এই ধাক্কা সামলে ফিরে আসা কঠিন ছিল।
তবে ইয়াশ ধুল অন্য ধাতুতে গড়া। আইসোলেশনের সময়টা কাটিয়েছেন ব্যাটিং শ্যাডো করে। ভেবেছেন তিনি সবগুলো ম্যাচই খেলেছেন। কোয়ার্টারফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আবার মাঠে ফিরলেন। সেই ম্যাচে লো স্কোরিং সেই ম্যাচে শেষদিকে তাঁর ২০ রানের অপরাজিত ইনিংস দলের জয় নিশ্চিত করেছে।
তবে দিল্লির এই ব্যাটসম্যান তাঁর পত্যাবর্তনটা সেমিফাইনাল ম্যাচেই করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইয়াশ ধুলের ১১০ বলে ১১০ রানের ইনিংসে চড়ে ফাইনালে ভারত অনূর্ধ্ব ১৯।
ওদিকে ছেলে করোনায় আক্রান্ত শুনে আতঙ্কে ছিলেন দিল্লিতে থাকা বাবা-মা। তবে তাঁরা খানিকটা শান্ত হয়েছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণের কথায়। ইয়াশ ধুলের বাবা বলেন, ‘লক্ষ্মণ স্যার ওখান থেকে আমাদের জানায় যে ইয়াশ ঠিকাছে। সে তাঁর নিজের নাম্বার আমাদের দিয়ে বলেছিল কোন অসুবিধা হলেই ফোন করতে। ওই সময় আসলে আমাদের এমনই একজনকে প্রয়োজন ছিল।’
ওদিকে ছেলের ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাচগুলো খেলতে না পারায় খুব খারাপ লাগছিল ওর। তবে সে মানসিক ভাবে খুব শক্ত। আমরা পরিবার থেকে ওই সময়টায় কেউ ক্রিকেটের কথা বলিনি ওর সাথে। আমরা শুধু ওর শরীরের অবস্থা জানতে চেয়েছি। এছাড়া পরিবারের সাথে সবসময় যেমন কথা হয় সেটাই।’
দিল্লির ক্রিকেটাররা অধিকাংশই মানসিক ভাবে খুব শক্তিশালী হয়। তাঁদের মধ্যে বিরাট কোহলিই সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আর কোহলিকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ ইয়াশ ধুলের। ফল করোনার ওই সময়টা পার করার সাহস ও মানসিক শক্তি ছিল এই ব্যাটসম্যানের মধ্যে।
ওদিকে ইয়াশ ধুলকে ১০ বছর ধরে কোচিং করিয়েছেন রাজেশ নগর। তিনি তাঁর ছাত্রকে নিয়ে বলেন, ‘খানিকটা ভেঙে পড়েছিল শুরুতে। আমি বলেছি এটাকে কোভিড হিসেবে না দেখে একটা ইনজুরির মত ভাব। আর নক আউট ম্যাচের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নেও। সে ঘরে বসে প্রতিদিন দুই ঘন্টা শ্যাডো ব্যাটিং করতো। টিভিতে খেলা দেখত আর ভাবত সে মাঠে থাকলে কীভাবে খেলত।’
ইয়াশ ধুলের যখন ১০ বছর বয়স তখন থেকে তাঁকে কোচিং করাচ্ছেন দিল্লির এই কোচ। ছোট্ট সেই ছেলেই এখন ভারত যুব দলের অধিনায়ক হয়ে শিরোপা এনে দিলেন। তবে ইয়াশের অধিনায়কত্বের পথটাও বাতলে দিয়েছিলেন এই কোচই।
তিনি বলছিলেন, ‘ইয়াশের বয়স যখন ১৪, তখনই আমি তাঁকে আমাদের ক্লাবের অধিনায়ক করে দিই। তাঁর নেতৃত্বে এরপর কয়েকজন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারও খেলেছে। আর দিল্লির ওই ক্রিকেটের প্রতিযোগিতা তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।’
এছাড়া ইয়াশ ধুলে ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি ওর ব্যাটিং দেখলে বুঝবেন সে উইকেটের চারদিকে খেলতে পারে। এছাড়া ওর কব্জির কাজ দারুণ। সেজন্যই দল চাপে থাকলেও দেখবেন ও স্ট্রাইক রোটেট করতে পারে। আর একটা শট সে কখনো খেলেনা, সেটা হচ্ছে স্যুইপ। অনেকটা বিরাট কোহলির মত।’
দিল্লির যে কেউ ব্যাট ধরলেই বিরাট কোহলি হতে চায়। ইয়াশ ধুলের জন্য এটা ব্যতিক্রম কিছুনা। বিরাট কোহলির মত তিনিও দিল্লিতেই বড় হয়েছেন। তিনিও রোল মডেল মনে করেন ভারতের এই ব্যাটসম্যানকেই।
ইয়াশ ধুলের কোচ বলেন, ‘সে সবসময় বলতো যে আমি বিরাট কোহলির মত হতে চাই। বিরাটের আগ্রাসী মনোভাব, ফিটনেস, ব্যাটিং স্কিল এগুলো ইয়াশকে খুব প্রভাবিত করতো। আমি অবশ্য তাঁকে কোহলি ও ধোনির মিশ্রণ মনে করি। মাঠে ও খুব শান্ত ও ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয়।’